ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করায় ইডেন ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস
- ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২৮ PM , আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫০ PM
হত্যা, নির্যাতন, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও জননিরাপত্তা বিঘ্নসহ নানা অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর ) রাতে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০৯ ধারায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেন।
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে ইডেন কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। ক্যাম্পাসে আনন্দমিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন শিক্ষার্থীরা।
মূলত, অন্যান্য ক্যাম্পাসের তুলনায় ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজ ক্যাম্পাসে বিগত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে তীব্র ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, গণরুম, গেস্টরুম, নিউমার্কেটে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপর নানাবিধ নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড জড়িত ছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর এসকল নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের ইতি ঘটে। সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের মাধ্যেম এসকল কর্মকাণ্ডের সঠিক বিচার হয়েছে বলে দাবি করেছেন এই দুটি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ইডেন মহিলার কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফারিয়া জামান মুমু ছাত্রলীগের এসব নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের নিয়ে তিনি বলেন, একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বলতে পারি এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের খুব ভালো একটা সিদ্ধান্ত। প্রথম বর্ষ থেকে দেখে আসতেছি তারা কিভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করতো। আমরা সাধারণ স্টুডেন্টদের দিনের পর দিন একটা সিটের জন্য ঘুরতে হতো আর তারা বছরের পর বছর এমনকি পড়াশোনা শেষ করে হলে থাকতো। এমনকি জব করা অবস্থায় রুম দখল করে রাখতো, চাঁদা উঠাতো। সারাক্ষণ উনাদের ভয়ে থাকতে হতো মেয়েদের। ক্লাস পরীক্ষা এসব মানতো না। ছাত্রলীগের নেত্রীদের সাথে শত কাজের মধ্যে থাকলেও প্রোগ্রামে যেতো হবে। রাতে একবার, সকালে একবার নেত্রীদের রুমে গিয়ে সালাম দিয়ে হাজিরা দিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও মেয়েদের নানা ভাবে হেনস্তা করতো ছাত্রলীগের নেত্রীরা।
এ প্রসঙ্গে ইডেন মহিলা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আনিকা আক্তার বলেন, একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বলবো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এটা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। শুধু ছাত্রলীগ কেন রাজনীতির সাথে যুক্ত ছাত্রদের সকল ধরনের দলই নিষিদ্ধ করা হোক। এসব রাজনীতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো তে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি করে। স্বাধীন ভাবে নিজের ক্যাম্পাসে থাকা যায় না। কিছু বলা যায় না। তার বড় প্রমাণ আবরার ফাহাদ হত্যা। আর ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের সাথে যেসব অন্যায় করেছে তারপর এই ছাত্রলীগ নামটাই আমি ঘৃণা করি। তাই আমি সরকারের এই সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করছি।
ইডেন মহিলা কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তামান্না ইসলাম বলেন, আলহামদুলিল্লাহ! আমি বলবো সরকারের এটি ভালো একটি সিদ্ধান্ত। ছাত্রলীগের কার্যক্রমের গল্প কারো মুখ থেকে শুনিনি। নিজের চোখে দেখেছি ছাত্রলীগ কতটা ভয়ংকর। একটা দল ক্ষমতা পেলে কতটা ভয়ংকর হতে পারে ছাত্রলীগ একটি অন্যতম উদাহরণ।
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতৃত্ব দেওয়া ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী খন্দকার রায়হান বলেন, খন্দকার রায়হান বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অভিনন্দন। এই সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করায় সরকারের প্রতি আমাদের আস্থা আরও বৃদ্ধি পেলো। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজগুলোতে ছাত্রলীগ যে ত্রাসের রাজনীতি শুরু করেছিলো তা আমরা সবাই জানি। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্বজিৎ কে প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করেছিলো, বুয়েটের আবরার ফাহাদকে হলরুমে নির্যাতন করে হত্যা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরি করার রেকর্ড এই সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে রয়েছে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় ছাত্রলীগের ন্যাক্কারজনক হামলা করেছে। নারী শিক্ষার্থীদের পর্যন্ত তারা যেভাবে পিটিয়েছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। তাছাড়া যত গুম, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, চোরাচালান, মাদক ব্যাবসা, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি সহ সকল অপকর্মের সাথে এই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অহরহ অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া এই সংগঠন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে।ধীরে ধীরে এই সংগঠন সন্ত্রাসী বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠেছে। তাই এই ছাত্রলীগকে অনেক আগে নিষিদ্ধ করা দরকার ছিল।
ঢাকা কলেজ অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে আনন্দ প্রকাশ করে সাইয়েদ মাহমুদ বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা একটি নিরাপদ ক্যাম্পাসের নিশ্চয়তা চাই। ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটায়। গণরুম কালচার, জোরপূর্বক সভায় নিয়ে যাওয়া সহ সকল প্রকার হেনস্তা থেকে আমরা এখন মুক্ত। ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি অবশ্যই পজিটিভ একটি ঘটনা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা কলেজের আরেক শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন বলেন, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ এটি একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। জুলাই বিপ্লবের একটি অন্যতম অর্জন। যে সংগঠন গণহত্যা করেও তার ভিতর অনুশোচনা নেই বরং দেশকে আবারো অস্থিশীল করতে ব্যস্ত। ক্ষমতার অপচর্চায় যাদের মুখ্য উদ্দেশ্য তাদের নিষিদ্ধ সময়ের দাবি ছিল সেটিই করেছে সরকার। এই জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাই।