হকৃবির নতুন উপাচার্য হলেন ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়া অধ্যাপক
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪০ PM , আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৯ PM
হবিগঞ্জ কৃষি বিদ্যালয়ে (হকৃবি) নতুন উপাচার্য হিসেবে গতকাল (০১ অক্টোবর) নিয়োগ পেয়েছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) পাবলিক হেলথ এন্ড এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহমেদ। তবে নিয়োগের পরেই এই অধ্যাপককে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহমেদের নামে উঠে আসছে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সিকৃবিতে নিয়োগপ্রাপ্ত দুর্নীতিবাজ ভাইস-চ্যান্সেলরদের ব্যবহার করে নিয়োগ বাণিজ্য ও অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির নজির স্থাপনের। এছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবির প্রতিবাদকারী শিক্ষকদের মধ্যেও নাম রয়েছে এই অধ্যাপকের। প্রধান উপদেষ্টার বিচার প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবির প্রতিবাদে বিবৃতি দানকারীদের তালিকার তিনি ১৪৮ নম্বর কৃষিবিদ
জানা যায়, অধ্যাপক সায়েম সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ (গশিপ) মনোনীত প্যানেল থেকে ২০২২ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিকৃবির শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার প্রতিবাদ জানিয়েছে সিকৃবির সাদা দলের সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহবুব ইকবাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহানা কাওছার। এছাড়াও প্রতিবাদ জানায়, এগ্রিকালচারিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সিকৃবি চ্যাপ্টার, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিকৃবির সমন্বয়ক টিম, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সিকৃবি ইউনিট।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়কে র্যাংকিংয়ে এগিয়ে নিতে গবেষণায় কাজ করব: শাবিপ্রবি উপাচার্য
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিকৃবি সমন্বয়ক কৃষিবিদ আজিজুল হক আজাদ এই নিয়োগের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘যে খুনি হাসিনা হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে ক্ষমতা ও দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, সেই খুনি হাসিনাকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত সমর্থন দিয়ে ছাত্র জনতার বিপক্ষে আন্দোলনকারী গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের সাবেক সভাপতি ডক্টর সৈয়দ সায়েম উদ্দিনকে হকৃবির ভিসি হিসেবে নিয়োগ করা জুলাই গণহত্যায় শহিদের রক্তের সাথে বেইমানির সমতুল্য। অবিলম্বে এই নিয়োগপত্র বাতিল করতে হবে।’
এদিকে সিকৃবি সাদা দলের শিক্ষকদের বিবৃতিতে বলা হয়- প্রফেসর ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহম্মদ একজন কট্টর আওয়ামী সমর্থক। তিনি পতিত সরকারের আমলে সিকৃবিতে নিয়োগপ্রাপ্ত দুর্নীতিবাজ ভাইস-চ্যান্সেলরদের ব্যবহার করে সিকৃবিতে নিয়োগ বাণিজ্য, অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির নজির স্থাপন করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবির প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দানকারী প্রফেসর ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহম্মদকে হকৃবির ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে যা জুলাই-আগস্টের শহিদের রক্তের সাথে বেইমানি করার শামিল। এই নিয়োগ কোন ভাবে মেনে নেয়া যায় না। তারা অবিলম্বে এই প্রজ্ঞাপন বাতিলসহ নিয়োগের পেছনে ষড়যন্ত্রকারীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।’
আরও পড়ুন: ‘চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা স্থায়ীভাবেই বৃদ্ধি পাচ্ছে’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহমেদ অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের আত্মীয়। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় আর প্রফেসর ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহম্মদের বাড়ি হবিগঞ্জ সদরে। তাঁর এক আত্মীয় জানিয়েছেন ‘রিজওয়ানার চাচার সঙ্গে সায়েমের ফুফুর বিয়ে হয়। সেই সুবাদে তারা একে অপরের আত্মীয়।’
বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা গেছে প্রবাসী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক ও চিকিৎসক পিনাকী ভট্টাচার্যকে। পিনাকী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে লিখেন, ‘দেখেন প্রফেসর ইউনুসের সরকার কারে উপাচার্য বানায়। ঠাইস্যা ঠাইস্যা প্রশাসনে ভরতেছে চিহ্নিত বাকশালিদের।’
তবে এ বিষয়ে ড. সৈয়দ সায়েম উদ্দিন আহমেদের মন্তব্য জানতে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোন সাড়া দেননি। অন্য একটি গণমাধ্যমকে তিনি জানান ‘একটি পক্ষ সব সময়ই ভালো কিছু হলে সমালোচনা করে। আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আমি রাজনীতির চেয়ে শিক্ষকতা বেশি করেছি। রাজনীতিতে এতটা কখনই অ্যাকটিভ ছিলাম না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রিজওয়ানা হাসানের বাড়ি চুনারুঘাট, আমার বাড়ি সদরে। এগুলো সঠিক নয়।’