ববির ক্লার্ক অফিসে না আসলেও হাজিরা খাতায় উঠত স্বাক্ষর

অভিযুক্ত বনি আমিন
অভিযুক্ত বনি আমিন  © টিডিসি ফটো

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্যু ক্লার্ক বনি আমিন নিয়মিত অফিসে না এসেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতেন, ছুটির দিনেও পাওয়া যায় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণ করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

গত ৫ সেপ্টেম্বর তিনি অফিসে আসেননি,কিন্তু হাজিরা খাতায় রয়েছে তার স্বাক্ষর। ১৩ এবং ১৪ আগস্ট তিনি ব্যক্তিগত কারণে ছুটি কাটিয়েছেন, কিন্তু হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর দেওয়া থাকায় পরবর্তী সময়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বললে ১৩ ও ১৪ তারিখের স্বাক্ষর মুছে ‘সি এল’ লিখেন বনি আমিন।

জানা যায়, জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বরিশাল মহানগর যুবলীগের নেতা বনি আমিন। নিজের ইচ্ছে ও খেয়াল-খুশি মতো অফিস করতেন। বর্তমানেও তিনি খেয়ালখুশি মতো অফিসে আসেন আবার যখন ইচ্ছা চলে যান। অফিসে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে অধস্তন ভয়ে  তার বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস করেননা।

এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর দুপুরে বই নেয়ার জন্য গিয়ে তাকে খুঁজে পায়নি  শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি কয়েকজন শিক্ষার্থী সাংবাদিককে ফোন দিয়ে জানালে  ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান থেকে জানা যায়, তিনি ছুটি কাটাননি এবং অফিসেও আসেননি, কেন আসেননি সেটাও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাননি। ২২ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণ ও অফিসে না পাওয়ায় ভোগান্তিতে মর্মে লাইব্রেরিয়ান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।  

ধর্ষণের অভিযোগে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার আগে ২০২০ সাল পর্যন্ত তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতিও ছিলেন,যুক্ত ছিলেন সাবেক উপাচার্য ও প্রক্টর কোরামের রাজনীতির সাথে। এজন্য তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগের সত্যতা ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

আরও পড়ুন: এক মাস যাবত খালি উপাচার্য-প্রক্টরসহ ২২ পদ, অভিভাবকহীন ববি

এসব বিষয় বনি আমিনের কাছে জানতে চাইলে  বলেন, আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কোনো সাক্ষাৎকার দিতে পারবো না। 

এসব অভিযোগের বিষয়ে ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান মধুসূদন হালদার বলেন,তিনি ৫ তারিখে অনুমোদিতভাবে আসেননি এবং পরবর্তীতে স্বাক্ষর করেছেন এটা আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হয়েছি।আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।তিনি একাধিকবার ছুটির তারিখেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন। শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণ লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এগুলো আমি কর্তৃপক্ষকে জানাবো। অফিসে না এসে স্বাক্ষর করা আইন-শৃঙ্খলা বিরোধী,আমরা এর যথাযথ ব্যবস্থা নেব। আমি কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারবো,ব্যবস্থা নেওয়ার আমি কেউ না।

তিনি আরোও বলেন,তার নামে যে-সব অভিযোগ রয়েছে এগুলো নিয়ে সাক্ষাৎকার দেওয়ায় কোনো নিষেধাজ্ঞা,কর্তৃপক্ষের অনুমতিরও প্রয়োজন নেই। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড.মোঃ মুহাসিন উদ্দীন বলেন, তার নামে এই বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক  যথাযথ ব্যবস্থা নেব । তার নামে এর আগেও কয়েকবার অভিযোগ এসেছিল এবং শাস্তিও হয়েছিল। 

উল্লেখ্য,বনি আমিনকে নিয়মিত অফিসে না আসার জন্য ২৪ ফ্রেব্রুয়ারী, ২০২০ তারিখসহ বেশ কয়েকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে নিজ ভাতিজির বান্ধবী,বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে বরিশাল নথুল্লাহবাদ থেকে জোর করে মাইক্রো উঠিয়ে কুয়াকাটা নিয়ে যান এই কর্মচারী।অপহরণের পর রাতভর ধর্ষণ করেন তিনি।এর পরদিন ঐ ছাত্রীকে ঝালকাঠিতে বনি আমিনের এক নিকট আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পুলিশ উদ্ধার করে,যা নিয়ে জাতীয় গণমাধ্যমসমূহে সংবাদ হয়। 

১৩ ফেব্রুয়ারি বনি আমিনকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে মানববন্ধন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।এছাড়া বনিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেয় বরিশাল নারী শিশু নির্যাতন ও সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ কমিটি।

ধর্ষণের এবং অপরাধে প্রাথমিক বলিষ্ঠ তথ্য-প্রমাণ পাওয়ায় ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তাকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

 ২০২২ সালের ২৬অক্টোবর, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বনি আমিনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে।  ১০ফ্রেব্রুয়ারি ২০২০ থেকে ২০২১ সালের ২৭জানুয়ারি পর্যন্ত এক বছর চার মাস ১৮ দিন অননুমোদিত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার শাস্তিস্বরূপ ১জুলাই ২০২২ থেকে ২৫জুন ২০২৫ পর্যন্ত তিন বছরের বেতনবৃদ্ধি স্থায়ীরূপে বন্ধ করে।


সর্বশেষ সংবাদ