বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ নিয়ে অধ্যাপক আলমগীর

কেন বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়—‘ওই তো, সরকারের নির্দেশনা...’

ছাত্র আন্দোলন
ছাত্র আন্দোলন   © ফাইল ফটো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন গত ১৬ জুলাই দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে এক আদেশে এ নির্দেশনা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। বিষয়টি নিয়ে সে সময় নানা সমালোচনা হয়েছিল।

কেন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল? জানতে চাইলে ইউজিসির সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ওই নোটিশ জারি করা হয়েছিল। এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘ওই তো সরকারের নির্দেশনা, এটা কোন লিখিত নির্দেশনা নয়।’

কারো মৌখিক নির্দেশনায় এমন সিদ্ধান্ত ইউজিসি নিতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমার কিছু করার ছিল না।’ 

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের চিঠি ইস্যুর বিষয়টি নিয়ে ইউজিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান সেদিন রাতে একাধিক কর্মকর্তাকে বল প্রয়োগ করেন। চিঠি ইস্যু সংক্রান্ত অফিস নথিতে দেখা যায়, ইউজিসির প্রশাসন শাখার সহকারী সচিব কাজী মো: ইসমাইল হোসেন স্বাক্ষরিত নোটিশের অনুমোদন ও স্বাক্ষরের জন্য পেশ করা হয় রাত ১০টা ১৫ মিনিটে। এরপরে প্রশাসন শাখার উপসচিব মোঃ আমাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত খসড়া অনুমোদনের জন্য পেশ করা হয় রাত ১০টা ২৯ মিনিটে।

প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হলে তৎকালীন সচিব ড. ফেরদৌস জামান স্বাক্ষর করে প্রস্তাব অনুমোদন করা যায় মর্মে উপস্থাপন করেন ১০টা ৩০ মিনিটে। পরে  ১০টা ৩৩ মিনিটে অধ্যাপক আলমগীর চিঠিটি অনুমোদন করেন এবং পত্রটি জারি করা হয় রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে। কিন্তু প্রথম চিঠিতে লম্বা প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলেও রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে কোন প্রকার প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়াই পুনরায় আরেকটি চিঠি অনুমোদন করে পত্র জারি করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার এখতিয়ার ইউজিসির রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইউজিসির তৎকালীন সচিব ড. ফেরদৌস জামান জানান, এটা আসলে আমি জানি না। সেদিন আমাকে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক আলমগীর একাধিকবার কল দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নোটিশ প্রস্তত করতে বলেন। এজন্য তিনি কয়েকবার কল দিয়ে তাড়াও দেন। আমি তখন হসপিটালে। প্রথমে সংযুক্ত হতে পারিনি। পরে জানতে পারি, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশনা জারি করতে হবে। তখন বাধ্য হয়ে আমি শুধু নোটিশে স্বাক্ষর করেছিলাম। চিঠি প্রস্তত করেন সহকারী সচিব কাজী মো. ইসমাইল হোসেন।

সচিব হিসেবে নিজের দায়িত্বের বিষয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি বলেন, আজকের প্রেক্ষাপট আর সেদিনের অবস্থা অনেক তফাত। এটা সম্পূর্ণ চেয়ারম্যানের দায়। কারণ মন্ত্রী ফোন দিয়েছে তাকে, অফিস টাইমের বাইরে তিনি একজন কর্মকর্তাকে নিয়ে এ ধরনের চিঠি ইস্যু করিয়েছেন। তিনি যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে ইউজিসির এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না। সচিব হিসেবে আমার পরামর্শ দিলেও তিনি সেটা আমলে নেননি। 

একই সময়ে দুটি চিঠি ইস্যু হয়েছে এবং প্রথম চিঠিতে অফিসিয়াল ডেকোরাম ঠিক থাকলেও পরের চিঠিতে না থাকার কারণ জানতে চাইলে ফেরদৌস জামান জানান, চেয়ারম্যান হিসেবে সম্পূর্ণ বিষয়টি অধ্যাপক আলমগীর দেখভাল করেছেন। এখানে তিনি মন্ত্রী এমপিদের কথা বলেছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে, কিন্তু আমিও বলেছিলাম আমরা এটা দিতে পারি না। কিন্তু আমি দেখেছিলাম অনেকের কথা বললেও তিনি নিজেও বেশ আগ্রহী ছিলেন বিষয়টি নিয়ে।

ইউজিসির অতিরিক্ত পরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইউজিসি এমন নোটিশ কোনোভাবেই দিতে পারেন না। আপনি খেয়াল করবেন, এখানে কলেজগুলোও বন্ধের নির্দেশনা আছে। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। সে সময়ে সচিবের দায়িত্বে থাকা ফেরদৌস জামানও বিষয়টি বারণ করতে পারতেন। একজন সচিবের কাজ কি তাহলে? তারা সবাই একজন অপরজনের কথা বলছেন, তাহলে তাদের দায়িত্ব কী?


সর্বশেষ সংবাদ