জবি থেকেই উপাচার্য চান শিক্ষার্থীরা, আলোচনায় আছেন যারা

জবির নতুন ভিসি হিসেবে আলোচনায় যাদের নাম
জবির নতুন ভিসি হিসেবে আলোচনায় যাদের নাম  © সম্পাদিত

দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। এরপরই সারাদেশে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও প্রক্টর থেকে শুরু করে প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা অনেকেই পদত্যাগ করছেন। গত কয়েকদিনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য, প্রক্টর,সহকারী প্রক্টর ও হল প্রভোস্টসহ অনেকেই পদত্যাগ করেছেন।

পদত্যাগের পর বিশ্ববিদ্যালয়কে গতিশীল করার লক্ষ্যে খালি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শীঘ্রই পূরণ করার জন্য নিয়োগের তোড়জোড় চলছে। এর মাঝেই উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ আলোচনা হচ্ছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি, এবার তারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকেই উপাচার্য নিয়োগ চান। তাদের ভাষ্যমতে উপাচার্য হওয়ার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক শিক্ষক রয়েছে। যদি এসব শিক্ষক নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পায় সেক্ষেত্রে তারা শিক্ষার্থীদের চাওয়া নিয়ে ভাববেন। জানা যায়,  এর আগে সব উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকে নিয়োগ প্রাপ্ত। 

এবার জবির উপাচার্য হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বেশ কয়েকজন গুণী শিক্ষককে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.  রেজাউল করিম। তিনি ১৯৮৬ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০০৮ সালে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ও সামজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এসময় তিনি বিভিন্ন একাডেমিক রুলস কমিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন। 

এরপর আলোচনায় রয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের সভাপতি ও সাবেক ডিন  অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসেন। 

অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) - এর যুগ্ম মহাসচিব। এর আগে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ও কলা অনুষদের ডিন হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর বিভিন্ন কাজে যুক্ত ছিলেন অধ্যাপক রইছ উদ্দিন। 

অন্যদিকে জবি উপাচার্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাধিক শিক্ষকের নামও আলোচনায় রয়েছে। তারা হলেন, বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর উপ-উপাচার্য ও ঢাবির উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। এছাড়াও  সাদা দলের বর্তমান আহ্বায়ক ও পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. লুৎফর রহমান; সাদা দলের বর্তমান যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান; প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মামুন আহমেদ, ফিন্যান্স বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান এবং একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান রয়েছেন আলোচিতদের তালিকায়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন বলেন,বিগত উনিশ বছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যাশিত অগ্রগতি লাভ করেনি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিসি ও ট্রেজারার না হওয়া এর অন্যতম কারণ। এমতাবস্থায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রফেসরগণকে ভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগ করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে যারা জানেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে যারা একাত্ম আছেন; এমন প্রফেসরগণই কেবল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং ট্রেজারার হবেন বলে আমরা আশা করছি। তাছাড়া ভালো গবেষক, ভালো শিক্ষক; পাশাপাশি সৎ, দক্ষ ও যোগ্য মানুষদের এই পদে আনতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঙ্ক্ষিত উন্নতির জন্য যোগ্য মানুষকে পদে বসাতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, আমরা সবাই চাই জগন্নাথ থেকেই এবার কেউ ভিসি হোক। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি হবে। এক্ষেত্রে আমি মনে করি অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম যোগ্য ব্যক্তি। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল রুলস রেগুলেশন তৈরিতে অনেক ভূমিকা রেখেছেন।

এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। সম্প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর তিনি পদত্যাগ করেন।


সর্বশেষ সংবাদ