বেরোবি ছাত্রলীগের অনেক নেতার পদত্যাগ, ছাত্র রাজনীতি চান না শিক্ষার্থীরা

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ কোটা আন্দোলনে নিহতের ঘটনার পর বদলে গেছে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চেয়েছেন। আর ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

বেরোবি শাখা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক মুরসালিন মুন্না তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘ছাত্র রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চায় বেরোবি শিক্ষার্থীরা..., সাধুবাদ তোমাদের। ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য। সে রাজনীতি যদি শিক্ষার্থী মারার রাজনীতি হয়, তাহলে আমি বেরোবির একজন সাবেক ছাত্রনেতা হয়ে চাইবো, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হোক।’ 

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মো. সাদ ইবনে ওয়াইশ লেখেন, ‘আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-সম্পাদক পদে আছি। আজ আমি আমার বিবেকের কাছে লজ্জিত হয়ে ছাত্রলীগের পদ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিলাম। এখন থেকে ক্যাম্পাসের কোনো রাজনীতির সঙ্গে আমি আর যুক্ত নই।’

মো. আল আমিন মিয়া নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী লেখেন, তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সম্পাদক পদ এ আছেন। একই ধরনের কথা লিখে তিনিও ছাত্রলীগের পদ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক  শিক্ষার্থী  সোহাগী খাতুন ফেসবুক পোস্টে করেছেন, ‘অধিকার চেয়েছি বলে আজ আমি লাশ। আর কোনও আবু সাইদ যেন অকালে ঝরে না পড়ে, সে জন্য ছাত্র রাজনীতি মুক্ত বেরোবি ক্যাম্পাস চাই। বেরোবিয়ানরা একতাবদ্ধ হও, তোমার ভাই নির্দোষ ছিল,  কেন তবুও লাশ হলো? কেন লাশটাকে কষ্ট দিতে পোস্ট মর্টেম নামক পায়তারা করল? কাটাকাটি করে আরও কষ্ট কেন দিল? কেন অধিকার চেয়েছি বলে বুকে একটা নয়, দু’টো নয়- চার চারটা গুলি মারল। অন্যায়কারী আর অন্যায় সহ্যকারী উভয়ই সমান অপরাধী।’ তিনিও সারা জীবনের জন্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ চান বলে জানিয়েছেন। 

রিয়াদ মোরশেদ নামের এক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘আমরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে, আমরা কখনোই কোনো ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হব না, সে যেই দলই হোক না কেন। আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র শিক্ষা, মানবিক সহায়তা এবং সমাজসেবা। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের কর্ম ও আদর্শের মাধ্যমে আমরা একটি উন্নত, শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ সমাজ গঠন করতে সক্ষম হব। ঐক্যবদ্ধ হয়ে, আমরা বিপর্যয় মোকাবেলার দক্ষতা অর্জন করব এবং সবার কল্যাণে নিয়োজিত থাকব।’

আরো পড়ুন: হল ছাড়বেন না রাবির শিক্ষার্থীরা, ৩ দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ

ক্যাম্পাসে যতক্ষণ পর্যন্ত ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ না করা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা কোনো প্রকার একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন না বলেও জানান এ শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী লুনা আফরোজ লীপা বলেছেন, বেরোবিকে ছাত্র রাজনীতি মুক্ত করা হোক। ঢাবিতে এক এক করে সব হল ছাত্র রাজনীতি মুক্ত ঘোষণা করা হচ্ছে । তাহলে আমার ক্যাম্পাস কেন নয়? আমার ক্যাম্পাসেই এটা জরুরি বেশি। আমার ক্যাম্পাসে যেন আর রক্ত না ঝরে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলমগীর সরকার বলেন, ‘আমরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে, আমরা কখনোই কোনো ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হব না, সে যেই দলই হোক না কেন। আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র শিক্ষা, মানবিক সহায়তা এবং সমাজসেবা। আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের কর্ম ও আদর্শের মাধ্যমে একটি উন্নত, শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ সমাজ গঠন করতে সক্ষম হব। ঐক্যবদ্ধ হয়ে, আমরা বিপর্যয় মোকাবেলার দক্ষতা অর্জন করব এবং সবার কল্যাণে নিয়োজিত থাকব।’ তিনিও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন না বলে জানান।


সর্বশেষ সংবাদ