শেষ পর্যন্ত নিজেই একজন ‘শামসুজ্জোহা’ হয়ে মারা গেলেন

খুব কাছ থেকে আবু সাইদকে গুলি করে পুলিশ
খুব কাছ থেকে আবু সাইদকে গুলি করে পুলিশ  © সংগৃহীত

পুলিশের গুলিতে আবু সাইদ নামে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক সমন্বয়ক নিহত হয়েছেন। তার শরীরে ছররা গুলির অসংখ্য চিহ্ন পাওয়া যায়। মৃত্যুর আগের দিন তিনি গত সোমবার (১৫ জুলাই) নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বাঙালি শিক্ষাবিদ ও অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহার একটি ঐতিহাসিক উক্তি সংবলিত ছবি শেয়ার করেছেন। যে পোস্টে আবু সাইদ শিক্ষক শামসুজ্জোহার মতো মৃত্যু কামনা করেন। যা ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল।

সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন। 

মৃত্যুর আগের দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা বলেছিলেন, ‘আজ আমি ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত। এরপর কোনো গুলি হলে তা কোনো ছাত্রের গায়ে না লেগে যেন আমার গায়ে লাগে।’ আর এর ঠিক পরের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে এসে প্রধান ফটকের সামনে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে জীবন দিতে হয় তাকে।

আবু সাইদ শিক্ষক শামসুজ্জোহার এ বক্তব্য সংবলিত একটি ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, স্যার! এই মুহুর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার, স্যার। আপনার সমসাময়িক সময়ে যারা ছিলেন, সবাই তো মরে গেছেন। কিন্তু আপনি মরেও অমর। আপনার সমাধি, আমাদের প্রেরণা। আপনার চেতনায় আমরা উদ্ভাসিত।

তিনি লিখেন, এই প্রজন্মে যারা আছেন, আপনারাও প্রকৃতির নিয়মে একসময় মারা যাবেন। কিন্তু যতদিন বেচেঁ আছেন মেরুদণ্ড নিয়ে বাচুঁন। নায্য দাবিকে সমর্থন জানান, রাস্তায় নামুন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হয়ে দাঁড়ান। প্রকৃত সম্মান এবং শ্রদ্ধা পাবেন। মৃত্যুর সাথে সাথেই কালের গর্ভে হারিয়ে যাবেন না। আজন্ম বেঁচে থাকবেন শামসুজ্জোহা হয়ে। অন্তত একজন ‘শামসুজ্জোহা’ হয়ে মরে যাওয়াটা অনেক বেশি আনন্দের, সম্মানের আর গর্বের।

যেন তাই হয়েছে! শেষ পর্যন্ত সাইদ নিজেই একজন ‘শামসুজ্জোহা’ হয়ে মারা গেলেন। শিক্ষক শামসুজ্জোহা যেমন ওই বক্তব্যের একদিন পর চলে গেলেন; আবু সাইদও ফেসবুক স্ট্যাটাসের একদিন পর গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এদিন দুপুরে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বের হন। তারা শহরের লালবাগ এলাকা থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যান। ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ে। এতেই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‌‌‌‌‌‌‌‘কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। অনেক পুলিশ সদস্য এতে আহত হয়েছেন। একজন মারা গেছে বলে শুনেছি তিনি কীভাবে মারা গেছেন তা বলতে পারছি না।’


সর্বশেষ সংবাদ