রাজশাহী কলেজে সাংবাদিকদের উপর ছাত্রলীগের হামলা

হামলার শিকার সাংবাদিক
হামলার শিকার সাংবাদিক  © টিডিসি ফটো

নিয়মবহির্ভূতভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ায় রাজশাহী কলেজের গণিত বিভাগে ভাঙচুর চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় ঘটনাস্থলে ছবি তুলতে গেলে দুই সাংবাদিকের উপর হামলা করে তারা। গুরুতর আহত অবস্থায় দুই সাংবাদিককে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত দুজন হলেন- রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির (আরসিআরইউ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ জার্নালের জেলা প্রতিনিধি আবু সাইদ রনি এবং রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্য ও রাজশাহী পোস্টের স্টাফ রিপোর্টার আবদুল আলীম। রনিকে বুকে এলোপাথাড়ি আঘাত করা হলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে আর আলীম বাম হাতে আঘাত পেয়েছেন। হাত ফুলে গেছে। তাকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জাফরের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী সাঈদ হাসান আশিক, মো. সাহেদুজ্জামান, আশিকুর রহমান সজিব, সাজেদুর রহমান সিজার, মো. মেহেদী, আবদুর রহিম, মো. জাকারিয়া ও সাব্বির হোসেন এই হামলা চালিয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকরা।

কলেজের অধ্যক্ষ মোহা. আবদুল খালেক জানান, ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে কোন বিভাগেই ইন-কোর্স পরীক্ষা দিতে দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানাকেও বিভাগে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাসুদ রানা তার কাছে এসেছিলেন পরীক্ষা দেওয়ার দাবি নিয়ে। তিনি তাকে বুঝিয়ে পাঠান যে, একজনকে পরীক্ষা দিতে দিলে সবাইকেই এ সুযোগ দিতে হবে। তাই এটা করা যাবে না।

এরপর অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী মাসুদ রানা অন্যদের ডেকে নেন। তারপর তারা গণিত বিভাগে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা ফুলের টব ভাঙচুর করতে শুরু করেন। খবর পেয়ে অধ্যক্ষ নিজে গিয়েই তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় খবর পেয়ে সাংবাদিকরা এসে ভাঙচুর করা ফুলের টবের ছবি তুলছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা দুই সাংবাদিককে মারধর করেন এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। পরে আহত দুই সাংবাদিককে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।

অধ্যক্ষ জানান, হামলাকারীরা সাংবাদিকদের তিনটি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এবং তিনটি ফোন ভেঙে চুরমার করেন। এরপর তারা ভাঙা ফোন কলেজ প্রশাসনের মাধ্যমে ফেরত দেয়। এ ঘটনায় সন্ধ্যা ৬টায় একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। হামলাকারী শিক্ষার্থীদের শাস্তির ব্যাপারে সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম বলেন, ‘আমাদের সহকর্মীদের ওপর আঘাত এসেছে। আমরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাই। হামলাকারীরা যেহেতু কলেজের শিক্ষার্থী, তাদের ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর পাশাপাশি আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করতে চাই।’

জানতে চাইলে রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম জাফর বলেন, ‘পরীক্ষা দিতে না দেওয়ার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এরমধ্যে ছাত্রলীগের কোন কর্মী থাকতে পারে। এরকম কেউ থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী সংগঠনের ন্যায় আচরণ করছে। কলেজে তারা শিক্ষক ও ডিপার্টমেন্টে গিয়ে ভাঙচুর করার মতো সাহস কিভাবে পায়? তাহলে সাধারণ ছাত্র- শিক্ষকদের নিরাপত্তা কোথায়? ঘটনার সুষ্ট তদন্তের মাধ্যমে সবাইকে কলেজ থেকে স্থায়ীভাবে বহি:স্কার করার দাবি জানাচ্ছি এবং হামলার ঘটনায় আইনের মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ