প্রতিষ্ঠার দশম বছরে শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

দেশের ৩৭তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশের প্রথম মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়। দক্ষিণ এশিয়ায় ৩য় মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বের ১২তম মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য প্রথম ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন রিয়ার অ্যাডমিরাল এএসএম বাতেন।

এছাড়া কমোডর খন্দকার তৌফিকুজ্জামানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রেজিস্ট্রার এবং কমোডর এএনএ রেজাউল হককে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কোষাগার হিসেবে নিয়োগ দেয়। নিয়োগপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর, রেজিস্ট্রার এবং কোষাধ্যক্ষ চার বছর ধরে দেশের প্রথম মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে দায়িত্ব পালন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের দেশে একটি মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরপর ২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বিল-২০১৩ পাস হয়। পরে রাষ্ট্রপতি ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর বিলটিতে সম্মতি দেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি রাজধানী ঢাকার মিরপুর-১২ নম্বরের পল্লবীতে অবস্থিত। মিরপুর ১১ নম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়টির ২টি অস্থায়ী ক্যাম্পাস রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের বাকলিয়ার হামিদচরে ১০৬.৬ একর জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপিত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন রিয়ার অ্যাডমিরাল এএসএম বাতেন। বর্তমানে রিয়ার এডমিরাল এএসএম বাতেন কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি ভিসি থাকালীন নিরাপদ জাহাজ পরিচালনা ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন, নদী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, সমুদ্রবিদ্যা, জাহাজ নির্মাণ প্রকৌশল, সামুদ্রিক আইন এবং গবেষণা পরিচালনাসহ সামুদ্রিক সম্পর্কিত বিষয়গুলোর সব নতুন শাখায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালের মূল লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করেছিলেন।

পরবর্তীতে রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রিয়ার অ্যাডমিরাল এএসএম আবদুল বাতেনের কাছ থেকে উপাচার্যের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাকে এই পদে নিয়োগ দিয়েছেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষণা করেন।

এখানে যোগদানের আগে খালেদ ইকবাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮১ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১ জুন, ১৯৮৩ সালে নির্বাহী শাখায় কমিশন লাভ করেন।

রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল ১৯৮১ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯৮৫ সালে ইতালিয়ান নেভাল একাডেমি, লিভর্নো থেকে স্নাতক হন। তিনি ফেব্রুয়ারী ২০১৮ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে, বিশ্ববিদ্যালয়টির সকাল বিভাগ যাত্রা শুরু করেছে।

এরপর ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়টির তৃতীয় উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন রিয়ার এডমিরাল মুসা। তিনি ১৯৮৫ ২৭ জানুয়ারি ১৫তম বিএমএ লং কোর্সের সাথে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে যোগদান করেন। বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যান্ড নেভাল একাডেমিতে এক বছরের প্রশিক্ষণের পর মালয়েশিয়ার নৌবাহিনীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রথম অফিসার হিসেবে অফিসারের প্রাথমিক প্রশিক্ষণের জন্য তাকে রয়্যাল মালয়েশিয়ান নেভিতে পাঠানো হয়।

বর্তমানে, অ্যাডমিরাল মুসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি তৃতীয় উপাচার্য হিসাবে তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

এর আগে অ্যাডমিরাল মুসা মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কোভিড-১৯ মহামারী সত্ত্বেও বন্দরটি রেকর্ড সংখ্যক জাহাজ এবং পণ্যসম্ভার পরিচালনা করে। যার ফলে একটি নতুন রেকর্ড আয় (৩৪০ কোটি টাকা); যা মংলা বন্দরের ৭০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তার মেয়াদকালে অ্যাডমিরাল বন্দরটির উন্নয়ন করতে এবং এটিকে একটি আন্তর্জাতিক মানের বন্দরে রূপান্তর করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে সামুদ্রিক মাৎস্যবিজ্ঞান, নিরাপদ জাহাজ চলাচল ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন, নৌ-প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, সমুদ্রবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক মেরিটাইম আইন ইত্যাদি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষাদান ও গবেষণার লক্ষ্যে মোট ৭টি অনুষদের অধিনে ৩৮টি বিভাগ চালু রয়েছে। তবে শুধুমাত্র ৫টি বিভাগ স্নাতক পর্যায়ের জন্য চালু রয়েছে।

এছাড়াও পাশাপাশি ব্যাচেলর অব মেরিন সায়েন্সও চালু রয়েছে মেরিন ক্যাডেটদের জন্য। এর বাইরে কিছু অতিরিক্ত বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে এসব অনুষদ থেকে স্নাতক ডিগ্রিও দেয়া হবে। বর্তমানে স্নাতক পর্যায়ে ৫টি বিভাগে মোট ২০০ জনকে ভর্তি নেয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১১টি সক্রিয় ক্লাব ও সংগঠন রয়েছে। সেগুলো হলো: বশেমুরমেইউ সায়েন্স ক্লাব, বশেমুরমেইউ রিসার্চ ক্লাব, বশেমুরমেইউ কালচারাল ক্লাব, বশেমুরমেইউ হাইকিং ক্লাব, বশেমুরমেইউ বিজনেস অ্যান্ড ক্যারিয়ার ক্লাব, বশেমুরমেইউ স্পোর্টস ক্লাব, বশেমুরমেইউ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, বশেমুরমেইউ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বশেমুরমেইউ স্টুডেন্টস প্ল্যাটফর্ম, মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের জন্য দুইটি হল, একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, দুইটি ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। শিক্ষার্থীদের থাকার সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা ক্যাম্পাসে ২টি আবাসিক হল রয়েছে। হল দুইটি মিরপুর ডিওএইচএসে অবস্থিত। আবাসিক হল দুইটিতে অত্যাধুনিক সকল প্রকারের সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। হল দুইটি হল: হল-১ (মেল উইং) এবং হল-২ (ফিমেল উইং)।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য রক্ষার মৌলিক সুবিধাদি সংবলিত একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। এটি ভবন-১ এর নিচতলায় অবস্থিত। পাশাপাশি জরুরি সেবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আধুনিক অ্যাম্বুলেন্সও রয়েছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ২টি ক্যাফেটেরিয়ার ব্যবস্থা আছে। এগুলোতে সকাল ও দুপুরের খাবার পাওয়া যায়। এগুলো সকাল ০৮:৩০ থেকে বিকেল ০৫:০০ পর্যন্ত খোলা থাকে। ক্যাফেটেরিয়াগুলো হলো- পদ্মা ভবন ক্যাফেটেরিয়া (২য় তলা) ও মেঘনা ভবন ক্যাফেটেরিয়া (৩য় তলা)।


সর্বশেষ সংবাদ