আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে যাচ্ছি: ড. মশিউর রহমান 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান  © টিডিসি ফটো

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, আমরা বিন্দু বিন্দু করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে যাচ্ছি। সেটা আমাদের সকলের সম্মিলিত শ্রমে। যখন চরম দুঃসময় আসে, পার্শ্ববর্তী কোনো দেশে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটে, তখন ভাবি বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হতে যাচ্ছে কিনা? এখন মনে হয় এই বঙ্গদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আসলেই একটি অনন্য যাত্রা সুনিশ্চিত করেছেন। 

বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ডিবেটিং সোসাইটির আয়োজনে জাতীয় বক্তৃতা প্রতিযোগিতা ও শোক দিবস উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

ড. মশিউর রহমান বলেন, সাড়ে সাত কোটি মানুষকে বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ ভাষণে একত্রিত করেছিলেন। সেই থেকে যেকোনো বিপর্যয়ে সেটা হোক প্রাকৃতিক কিংবা শ্রীলঙ্কার মতো অর্থনৈতিক বিপর্যয়, বাঙালি এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তার মোকাবিলা করেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক শাসনের যে বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল তার অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র মুক্তির সোপান হয়েছে। 

গোটা বিশ্ব যখন শোষিত আর শাসক এই দুই ভাগে বিভক্ত তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি শোষিতদের পক্ষে’। বঙ্গবন্ধু বিশ্বময় শোষিতের পক্ষে ছিলেন। তিনি প্রচলিত পুঁজিবাদ সমাজ ভেঙে মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন—বলেন ড. মশিউর

অনুষ্ঠানে বিশেষ আলোচকের বক্তব্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যার পর জার্মানির তৎকালীন চ্যান্সেলর উইলি ব্র‍্যান্ট এক বক্তব্যে বলেছিলেন, মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না।

‘যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে। বিখ্যাত বাঙালি নীরদচন্দ্র চৌধুরী বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্র তুলে ধরেছে। তাই এসব অপবাদের বিরুদ্ধে কীভাবে অবস্থান নেওয়া যায় সেই চেষ্টা আমাদের করা উচিত।’

১৯৭১ সাল, ২৬শে মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর এই তারিখগুলো যখন আসে তখন জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে প্রকম্পিত হয় দেশ৷ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন ডিবেট হতে পারেনা৷ কারণ বঙ্গবন্ধু বাস্তব ও সত্য৷ এখন বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও ডিবেট হয়। কিন্তু এটি হওয়া উচিত নয়৷ এখানেই আমাদের প্রতিবাদ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় লাভ করেছি৷ কিন্তু সত্যিকারের বিজয় এখনো সূচিত হয়নি৷ আমরা আশা করবো এই প্রজন্মের যারা আছে তাদের মাধ্যমেই সত্যিকারের বিজয় সূচিত হবে বলেও জানান অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন।

অনুষ্ঠানে আলোচকের বক্তব্যে পিরোজপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে তাদের সাথে কোন গণতান্ত্রিক আলোচনা হতে পারেনা। আজ আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। বাংলাদেশ পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু এসবের বিরোধীতা হচ্ছে এখন।

তিনি বলেন, বিরোধী অপশক্তি মিথ্যাচার করে,ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে রাষ্ট্রের উন্নয়নের চাকা পেছনের দিকে ঘুরাতে চায়৷ আমরা সেটা হতে দিতে পারিনা। শোকের মাসে শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। 

অনুষ্ঠানে জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি মো. সাইদুল ইসলাম সাঈদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাজুর সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল, সংগঠনটির মডারেটর মো. মেফতাহুল হাসান, সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম ফরাজী, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা। 

জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি আয়োজিত এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের বিভিন্ন বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৮০ জন বিতার্কিক রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তার মধ্যে অর্ধশত বিতার্কিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। ৯ জন বিচারক সেরা ৫জন বিতার্কিককে মনোনীত করেন। 

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান, প্রথম রানার আপ হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রোকসানা আক্তার, দ্বিতীয় রানার আপ হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রুবিনা জাহান। প্রতিযোগিতায় চতুর্থ ও পঞ্চম স্থান অধিকার করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের তৌফিকুর রহমান এবং সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী হুমায়রা সাদাফ। 

প্রতিযোগিতায় সেরা ৫ জনকে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বই এবং একটি ক্রেস্ট উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিচারকমণ্ডলীদেরও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয় জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির পক্ষ থেকে।


সর্বশেষ সংবাদ