র্যাগিং মুক্ত ক্যাম্পাস চান ইবি শিক্ষার্থীরা
- ইবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:১৬ PM , আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:২৪ PM
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক নবীন ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, আমরা র্যাগিং মুক্ত ক্যাম্পাস চাই। ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে এই র্যাগিংকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্রী সাদীয়া মাহমুদ মীম বলেন, র্যাগিং ও ‘গেস্টরুম’ প্রথার আড়ালে আসলে কি হয় তা এবার মুখ খুলে বিস্তারিত জানিয়ে প্রতিবাদ করলেন নবীন শিক্ষার্থী ফুলপরী। শিক্ষার্থী নির্যাতনের মতো এত বড় বিষয়কে আমাদের ইউনিভার্সিটি কালচারে 'র্যাগিং' বলে নরমালাইজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আসলে সেটাতে শিক্ষার্থীরা তথাকথিত ম্যানার শেখার চেয়ে ম্যানারলেস কিছু মানুষের কাছ থেকে নির্যাতনের স্বীকারই হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু মানসিক নির্যাতনে সীমাবদ্ধ না থেকে রীতিমত শারীরিক নির্যাতন পর্যন্তও চলে। ফলাফলস্বরূপ একজন নবীন শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি একধরনের ঘৃণা জন্মাচ্ছে। এটা অনেকটা ফুল ফোটার আগেই গাছ থেকে কড়ি তুলে ফেলার মতো। বিষয়টা খুবই লজ্জাজনক। এই ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের ছাড় নয়, বরং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে এরকম একটা শক্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন হোক যে সিনিয়র হোক বা জুনিয়র, অপরাধ করলে অপরাধের শাস্তি তাকে পেতেই হবে।
উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী রাফি বলেন, বর্তমানে র্যাগিং নামে শারীরিক-মানসিকভাবে নির্যাতন চরম আকার ধারণ করেছে। ইবি ও শাবিপ্রবি সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক এইসব ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। কিন্তু প্রশাসন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলে র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতনের মাত্রা দিনের পর দিন বেড়েই চলছে। যার ফলে ক্যাম্পাসগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়ছে। এমন ঘটনায় জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন: মূলহোতা অন্তরাসহ ৫ ছাত্রীকে হল থেকে বহিষ্কার
বাংলা বিভাগের ছাত্রী শ্যামলী তানজিন অনু বলেন, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার সঙ্গে পড়াশোনা করার অধিকার প্রত্যেকের আছে। কিন্তু সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে তা আসলেই নিন্দনীয় ও জঘন্য কাজ। র্যাগিংয়ের নামে যে ঘৃণ্য কাজ করা হয়েছে তার সুষ্ঠু বিচার সবাই চায়। ক্ষমতার অপব্যবহার কতোটা ভয়াবহ হতে পারে তা এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায়। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হলে দেশব্যাপী কেউ আর এমন অপরাধ করার দুঃসাহস দেখাবে না।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র আবু সোহান বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখানের সবার পদবী হল ছাত্রত্ব। কেউ কখনও কোন ছাত্র সংগঠনের নাম নিয়ে জোর খাটিয়ে র্যাগিংয়ের মত ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করার অধিকার রাখে না। বর্তমানে র্যাগিং একটি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেটা একজন নবীন শিক্ষার্থীকে মানসিকভাবে হতাশ করে দেয়। ফলাফলস্বরূপ সম্ভাবনাময় অনেক শিক্ষার্থী ভালোমত লেখাপড়া করে ভাল ফলাফলও করতে পারে না। র্যাগিং কখনও কোন শিক্ষার্থীর জন্য ইতিবাচক হতে পারে না। যারা পরিচিত হওয়ার নাম করে এমন ভয়াবহ কর্মকাণ্ড ঘটায় তাদের বিচার হওয়া উচিত।
এদিকে এই ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন, মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠন। র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন রোধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।