বিসিএস পরীক্ষায় জট কাটছে, ভোগান্তি কমছে
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:৪৮ PM , আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৫৭ AM
বিসিএসের চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি না পেয়ে একসময় হতাশায় ভুগতেন চাকরিপ্রার্থীরা। অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে মেধাবীরা বিসিএস পরীক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি ভিন্ন। পরীক্ষায় অনিয়ম বন্ধ, স্বচ্ছ নিয়োগ সুপারিশের কারণে লাখ লাখ তরুণ বিসিএসমুখী হয়েছেন। এছাড়া জট কমায় স্বস্তি এসেছে চাকরিপ্রার্থীদের মনে।
আগে একটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে শুরু করে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করতে প্রায় চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগত। তবে সেই ধারা থেকে বেরিয়ে এসেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এখন একটি বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশে দুই থেকে ৩ বছর সময় লাগে। ধীরে ধীরে সেটিও কমে আসছে। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, বছরে একটি বিসিএস শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পিএসসি’র রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী বছরের মে মাসে ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত নিয়োগ সুপারিশ করা হবে। এছাড়া একই বছরের সেপ্টেম্বরে ৪৫তম বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ দুটি বিসিএস শেষ হলে এক বছরে একটি বিসিএস শেষ করতে পারবে পিএসসি বলে আশা সাংবিধানিক সংস্থাটির।
বিসিএসে জেলাপ্রীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করতে মৌখিক পরীক্ষায় প্রার্থী কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তাঁর ধর্ম কী, কোন জেলায় তাঁর বাড়ি—এমন প্রশ্ন করা বন্ধ করেছে পিএসসি। এমনকি যেসব প্রশ্নে প্রার্থীর প্রতি কোনো সদস্যের ইতিবাচক বা নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয় কিংবা ব্যক্তিগত কোনো প্রশ্নের উত্তরে তাঁর প্রতি প্রভাব বিস্তার করে—এমন প্রশ্নও করার সুযোগও বন্ধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিসিএস শেষ করতে। আমাদের পরিকল্পনা হলো এক বছরে একটি বিসিএস শেষ করার। আগামী বছর দুটি বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।
পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পাঁচটি বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করবে পিএসসি। এর মধ্যে তিনটি বিসিএসের নন-ক্যাডারের নিয়োগ সুপারিশও রয়েছে। ২০২০ সালে ৩৮তম বিসিএসের মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশের পরিকল্পনা রয়েছে পিএসসি’র।
জানা গেছে, ৩৮তম বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল ২০১৭ সালের ২০ জুন। এই বিসিএসের কার্যক্রম শেষ করতে ৩ বছর ২৫ দিন সময় লাগে পিএসসির। ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি হয়েছিল ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয় ২০২২ সালের ৯ মে। সে হিসেবে এই বিসিএসের কার্যক্রম শেষ করতে সময় লাগে ৩ বছর ৭ মাস ২৮ দিন।
৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর। চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয় ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর। সে হিসেবে এই বিসিএসের কার্যক্রম শেষ হয়েছে ৩ বছর ১০ মাস ১১ দিনে। ৪২তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর। মাত্র ১০ মাস ৬ দিনের মধ্যে এই বিসিএসে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করে পিএসসি। ৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর। চলতি সপ্তাহে এই বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হলে ৩ বছরে বিসিএসের কার্যক্রম শেষ হবে।
৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর। ইতোমধ্যে এই বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পরীক্ষকের মাধ্যমে খাতা মূল্যায়নের কাজ চলমান রয়েছে। এই প্রক্রিয়াও শেষের দিকে। পিএসসি’র রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০২৪ সালের মে মাসে এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হবে। সে হিসেবে ২ বছর ৬ মাসে এই বিসিএসের কার্যক্রম শেষ হবে।
২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। দ্রুত সময়ে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশের রেকর্ড হয় এই বিসিএসে। গত ২৭ নভেম্বর থেকে এই বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। তবে প্রার্থীদের আন্দোলন, হরতাল-অবরোধসহ নানা কারণে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। আগামী বছরের জানুয়ারিতে এই বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করতে চায় পিএসসি। সে হিসেবে এক বছর ১০ মাস সময়ের মধ্যেই শেষ হবে এই বিসিএসের কার্যক্রম। এছাড়া ৪৬তম বিসিএসের কার্যক্রম এক বছরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা করেছে পিএসসি।
নিয়োগ হচ্ছে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়
বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে বেশ কিছু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন। এর মধ্যে পাশাপাশি বসা বন্ধ করা, পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীদের কথা বলা বন্ধ করা অন্যতম। এছাড়া মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে জেলা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করাও বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে প্রকৃত মেধাবীদের চাকরি পাওয়ার হার বেড়েছে।
জানা গেছে, কিছু চাকরিপ্রার্থী প্রিলিমিনারির আবেদনের পর গভীর রাতে একই সঙ্গে টাকা জমা দিতেন। এতে তাঁদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাশাপাশি হতো। ফলে দেখা যেতো প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় তাঁদের সিট একই রুমে পড়তো। এই সুযোগে চাকরিপ্রার্থীরা দেখাদেখি বা কথা বলে বিশেষ সুবিধা নিতে পারতেন। এই অবস্থার অবসান ঘটানো হয়েছে। বর্তমানে যেভাবেই আবেদন করা হোক কিংবা আবেদন ফি জমা দেওয়া হোক পাশাপাশি সিট পড়ার কোনো সুযোগ নেই।
পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীরা যেন একে অন্যের সাথে কথা বলতে না পারে সেই ব্যবস্থাও করেছে পিএসসি। এমনকি কারো সাথে কথা বলার সুযোগও বন্ধ করা হয়েছে। এজন্য পরীক্ষার হলে দায়িত্বরতদের বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটালে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে পিএসসি।
বিসিএসে জেলাপ্রীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করতে মৌখিক পরীক্ষায় প্রার্থী কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তাঁর ধর্ম কী, কোন জেলায় তাঁর বাড়ি—এমন প্রশ্ন করা বন্ধ করেছে পিএসসি। এমনকি যেসব প্রশ্নে প্রার্থীর প্রতি কোনো সদস্যের ইতিবাচক বা নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয় কিংবা ব্যক্তিগত কোনো প্রশ্নের উত্তরে তাঁর প্রতি প্রভাব বিস্তার করে—এমন প্রশ্নও করার সুযোগও বন্ধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিসিএসে এমন ব্যবস্থা চালু হয়েছে যাতে চালাকি করে পাশাপাশি সিট ফেলানোর দিন শেষ। এ ছাড়া পরীক্ষা মানে পরীক্ষা এই নীতিতে দেখাদেখি কথা বলা সম্পূর্ণ নিষেধ। ঘাড় ঘুরালেই খাতা নিয়ে নেয়া হচ্ছে। আমরা চাই সিভিল সার্ভিসে মেধাবীরা আসুক। সেটি নিশ্চিত করার কাজ করছি। যে প্রার্থী অপকৌশল অবলম্বন করবে, দেখাদেখি করে চাকরি নিতে চায় তিনি চাকরি জীবনেও কতোটা সৎ থাকতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকে। তাই যাঁরা পরীক্ষায় অংশ নেবেন, তাঁরা এসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন বলে আশা করছি।’