‘আমাদের আনন্দ এখন ফেসবুক লাইকে, পাখি-প্রকৃতি দেখে না’

ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম  © টিডিসি ফটো

‘এখন আমাদের আনন্দ ফেসবুকে লাইক দেখে, পাখি-প্রকৃতি দেখে না। অথচ একজন মানুষের সবচেয়ে বড় জিনিস হলো সংস্কৃতি শিক্ষা।’ গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে সামার সেমিস্টারে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, গ্রামে গিয়ে গ্রামের ভাষাতেই কথা বলতে হবে, তা না হলে অন্যরা কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে না। তিনি বলেন, আগে মায়ের ভাষা শিখুন, তারপর ইংরেজি। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলায় আমাদের শিক্ষকরা মূল্যবোধ শেখালেও দিন দিন তা হারিয়ে যেতে বসেছে। আমরা এখন অন্যের সঙ্গে কথা বলার চেয়ে মোবাইল ফোন টিপতেই বেশি পছন্দ করি। 

তিনি বলেন, আমাদেরকে প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির কাছে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। অন্ধের মত মোবাইল ফোন ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রে আমাদের অপদার্থ বানাচ্ছে। এসব ফোন থেকে ভালোর চেয়ে খারাপ জিনিসই বেশি নিচ্ছি।

তিনি বলেন, কেন আমাদেরকে বার্গার, পিৎজা খেতে হবে? কারণ, এগুলো সেলিব্রেটিরা খায়। এসব করে পশ্চিমা বিশ্বের মত আমাদের সমাজকেও ভোক্তা সমাজে পরিণত করার চেষ্টা চলছে।

মঙ্গলবার (৭ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের শেওড়াপাড়াস্থ ক্যাম্পাসে আয়োজিত এই নবীন বরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সঙ্গে সমানভাবে নৈতিকতা অর্জনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বক্তারা। তারা বলেছেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য চাকরি করা নয়। এর সঙ্গে মূল্যবোধ শেখাও জরুরি। তা না হলে শিক্ষা মূল্যহীন হয়ে পড়বে।

আরও পড়ুন: ফেসবুক পোস্টের বলি ৪০ তম বিসিএসের বাবু, ৭ বছরের জেল

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সামদানী ফকিরের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ফায়জুর রহমান, ডিন অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল আজাদ, অধ্যাপক ড. ফারহানা হেলাল মেহতাব, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারেক আজিজ, রেজিস্ট্রার মো. সাইফুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সামদানী ফকির বলেন, নবীনবরণ হলো উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রবেশ পথ। এখান থেকে দীক্ষা নিয়েই আগামী চার বছরের পথচলা শুরু হবে। তিনি বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থীই তার মা-বাবাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। তাই এই ভালোবাসার ফল হিসেবে চার বছর ধরে প্রস্তুত হয়ে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে বাবা-মাকে উপহার দিতে হবে। এ সময় তিনি কাউকে দায়ী নয়, বরং নিজের কাজ নিজেকেই করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, শুধু ভালো ফল কিংবা ভিসি-ডিন্স অ্যাওয়ার্ড না; এর বাইরেও শিক্ষার্থীদের অনেক দক্ষতা অর্জন করতে হবে। দেশে ও বিদেশে আয়োজিত সভা-সেমিনারে যোগ দিতে হবে। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দক্ষ গ্রাজুয়েট ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে নবীন শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন রেজিস্ট্রার মো. সাইফুল ইসলাম।


সর্বশেষ সংবাদ