টিউশন ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছে গবি শিক্ষার্থীরা
- তানভীর আহম্মেদ, গবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০২ মে ২০২২, ০৩:৫৯ PM , আপডেট: ০২ মে ২০২২, ০৪:০৬ PM
সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) ৫টি বিভাগ ও ১টি অনুষদে নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি ২৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানাভাবে তারা গবি প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস. তাসাদ্দেক আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদসহ ফার্মেসী, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি (বিএমবি), কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই), ইংরেজি ও আইন বিভাগের পুনঃনির্ধারিত ফি জানানো হয়। এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, ক্যাম্পাসের অবকাঠামোগত কিংবা সেবার মানের কোন হেরফের হয়নি। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে ফি বৃদ্ধি শিক্ষার্থীদের প্রতি একরকম অন্যায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, বাস্তবতার নিরিখেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী মোহতাসিম লস্কর হৃদয় জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাফেটেরিয়া নেই, পর্যাপ্ত বাস নেই। এসব নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। অথচ ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে।'
ফার্মেসী বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী পবিত্র কুমার শীলের মন্তব্য করেছেন, গরিব মানুষের কথা ভেবেই গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বাঙালি জাতির ক্রান্তি লগ্নের বীর ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্বপ্নের এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেনাবেচার বাজারে রূপান্তর করা হচ্ছে। এটা দুঃখজনক। এমনটা চলতে থাকলে গরিব মানুষদের একটা ভরসায় আঘাত করা হবে। ফলে আমি চাই ফি কমিয়ে শিক্ষার্থীদের সকল সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হোক।'
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মো. সুজন রানা ক্ষোভ জানিয়ে লিখেছেন, আগের চেয়ে শিক্ষার্থী বেড়েছে। তবুও কিছু শিক্ষক নিজেদের পকেট ভরতে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এটা কোনভাবেই শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত হতে পারে না। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
তবে ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। সেক্ষেত্রে তারা অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধির প্রতি জোর দিয়েছেন। হাসিবুল শান্ত নামে একজন লিখেছেন, কি বা কোন কারণে খরচ বৃদ্ধি হয়েছে জানিনা। তবে টাকা যেমন বৃদ্ধি করা হয়েছে তদ্রূপ যদি একাডেমিক উন্নয়ন, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয় তবে এটা ঠিক আছে।
ফি বৃদ্ধির বিষয়ে ফার্মেসীর আরেক শিক্ষার্থী লিখেন, যোগ্য শিক্ষক বাড়ানো হোক। একইসাথে তাদের সম্মানটাও যেন দেখা হয়। তাতে ফি বাড়লে সমস্যা নাই। এদিকে মেডিকেল কলেজের ফান্ড আলাদা হয়ে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ বেড়েছে এবং তার প্রভাবে এই ফি বৃদ্ধিতে পড়েছে বলে মনে করেন জয়দেব বসাক নামক মেডিকেলের সাবেক এক শিক্ষার্থী।
আরও বেশকিছু মন্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অনেকে অসন্তোষ হলেও শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে এই ফি বৃদ্ধিকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন উল্লেখযোগ্য অংশ। তবে তাদের আশঙ্কা, এই ফি শেষ পর্যন্ত মূল উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য খাতে ব্যয় না হয়!
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ এস. তাসাদ্দেক আহমেদ বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম থেকেই নিম্ন-মধ্যবিত্তের বিষয়টি মাথায় রেখেই ফি নির্ধারণ করেছে। বর্তমান সবকিছু বিবেচনা করে বাধ্য হয়ে ফি কিছুটা বাড়াতে হয়েছে। বিভাগীয় প্রধানদের সুপারিশেই এটা করা হয়েছে। আমাদের মোট আসন সংখ্যাও তুলনামূলক অনেক কম। এত কম আসন নিয়ে সবকিছু চালানো বেশ কঠিন। তবুও আমরা সাধ্যের মাঝে রাখার চেষ্টা করেছি।