তরুণদের চোখে পহেলা বৈশাখ
- ডিআইইউ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১২ PM , আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৪৫ PM

নতুন সূর্যের আলো, কাসার থালায় পান্তা-ইলিশ, রঙিন জামা-কাপড় আর ঢাকের তালে তালে চলে এসেছে পহেলা বৈশাখ—বাংলা নববর্ষ। সময়ের সাথে বদলেছে উদযাপনের রূপ, তবে তরুণদের কাছে এই দিনটি এখনো এক অন্যরকম আনন্দময় এবং সংস্কৃতির মিলনমেলার দিন। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে তরুণ প্রজন্মেরও রয়েছে নানা রকমের ভাবনা- প্রত্যাশা। তরুণদের সেসব ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের ডিআইইউ প্রতিনিধি- নুর ইসলাম।
নববর্ষের আনন্দ ছড়িয়ে যাক সবার মাঝে
পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর এ দিনটি আমাদের জীবনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এ দিনটি শুধু আনন্দের নয়, বরং আমাদের চিন্তাভাবনায় জাতিসত্তা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অনন্য প্রতিচ্ছবি হিসেবে ধরা দেয়।
পহেলা বৈশাখ আমাদের শিকড়ের সন্ধান দেয়। এই দিনে নিজেকে একজন প্রকৃত বাঙালি হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করা যায়। স্কুল-কলেজে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা কিংবা পান্তা-ইলিশের আয়োজন—সবকিছুতেই আমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকে। এই উৎসব আমাদের মাঝে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও মিলেমিশে থাকার শিক্ষা দেয়।
বৈশাখ শুধু উৎসবের দিন নয়, বরং একটি নতুন শুরুর প্রতীক। পুরাতন বছরের ভুলগুলো সংশোধন করে নতুন লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দেয় এই দিনটি। তাই তরুণদের ভাবনায় পহেলা বৈশাখ একটি নতুন সম্ভাবনার সূচনা, যা তাদের জীবন ও ভবিষ্যৎ নির্মাণে শক্তি যোগায়।
মেহেরুন নেসা কবিতা
অর্থনীতি বিভাগ
আগামীর দিনগুলো মঙ্গলময় হোক
পহেলা বৈশাখ বাঙালির জীবনে এক নতুন আনন্দ আর উদ্দীপনার বার্তা নিয়ে আসে। এটি শুধু একটি নববর্ষের শুরু নয়, বরং আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর শিকড়ের প্রতিচ্ছবি। এই দিনটিতে পুরোনো দিনের জীর্ণতা ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করার প্রেরণা পাই আমরা।
বৈশাখী মেলা, গান, নাচ আর নানা ধরনের লোকজ অনুষ্ঠানে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলেমিশে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে, যা আমাদের ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে। পহেলা বৈশাখ আমাদের মনে করিয়ে দেয় আমরা সবাই বাঙালি এবং আমাদের সংস্কৃতি কতটা সমৃদ্ধ।
এসবি সৈকত
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
নববর্ষ উদযাপিত হোক বাঙালির অন্তরে
পহেলা বৈশাখ— বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন, এক অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যার শেকড় গভীরভাবে প্রোথিত বাঙালির হৃদয়ে। এটি শুধু ক্যালেন্ডারের পাতার পরিবর্তন নয়, বরং নতুন করে জেগে ওঠার, পুরোনো গ্লানিকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞার দিন।
বছরের এই প্রথম দিনে বাংলার শহর থেকে গ্রাম সব জায়গায় উচ্চারিত হয়, “এসো হে বৈশাখ, এসো এসো!”—এই আহ্বান যেন নতুন সম্ভাবনার, নবজাগরণের।
এই দিনে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ একত্রিত হয়। পহেলা বৈশাখ যেন এক মহামিলন মেলা, যেখানে জাতি-ধর্ম-রাজনীতির ভেদাভেদ ভুলে সবাই উৎসবে মাতোয়ারা হয়। এটি আমাদের জাতীয় পরিচয়ের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা বিশ্ব দরবারে বাঙালিকে গর্বের সাথে উপস্থাপন করে।
কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, বৈশাখ মানেই শুধু রঙিন পোশাক, উৎসব আর খাদ্য নয়—এটি আমাদের শেকড়ের প্রতি ফিরে যাওয়ার এক অনুপম উপলক্ষ্য। আমরা যেন এই দিনটিতে আত্মপর্যালোচনা করি—আমরা কেমন বাঙালি, কীভাবে আমাদের সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখব, আগামী প্রজন্মকে তা তুলে ধরব। আজকের দিনে আমাদের শপথ হোক—বাঙালিয়ানা শুধু বৈশাখে সীমাবদ্ধ না রেখে সারাবছর হৃদয়ে ধারণ করব। নববর্ষ হোক আমাদের ঐক্য, মানবতা ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল প্রতীক।
তাহেরা ইসলাম তনিমা
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
পহেলা বৈশাখ: বাঙালির প্রাণের উৎসব
পহেলা বৈশাখ আমার কাছে কেবল একটি দিন নয়—এটা আমার শিকড়, আমার সংস্কৃতি, আমার অস্তিত্বের একটি রঙিন উৎসব। বছরের অন্যসব দিনের ভিড়ে এই একটি দিন যেন আলাদা হয়ে থাকে। মনে হয়, আমি নিজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সেই সরল, আনন্দময় শিশুটিকে আবার খুঁজে পাই। গায়ে নতুন জামা, রাস্তায় লাল-সাদা রঙের ঢেউ, চারদিকে হাসিমাখা মুখ—সব কিছু মিলিয়ে এই দিনটা এক অপার্থিব অনুভূতি এনে দেয়। মনে হয়, আমি বাঙালি বলে গর্ব করতে পারি।
রমনার বটমূলে বাজে গান, চারুকলায় হয় রঙের খেলা, আর আমাদের ঘরে পান্তা-ইলিশের ঘ্রাণে জেগে ওঠে বাঙালিয়ানা। এইসবের ভিড়ে আমি খুঁজে পাই শান্তি, ফিরে পাই হারিয়ে যাওয়া আপন সময়গুলো। পহেলা বৈশাখ বাঙালির জীবনে শুধুমাত্র একটি ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টানো নয়, বরং এটি একটি ঐক্যের প্রতীক। জাতি, ধর্ম, বর্ণ সব পার্থক্য পেছনে ফেলে সবাই মিলেমিশে উদযাপন করে এই দিনটি। এ যেন একদিনের জন্য হলেও আমরা সবাই এক কণ্ঠে বলি—“এই আমিই বাঙালি, এই আমার উৎসব।”
এই দিনে মানুষ যেমন নতুন স্বপ্ন নিয়ে জীবন শুরু করতে চায়, তেমনি পুরোনো ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণাও খুঁজে পায়। তাই আমার কাছে পহেলা বৈশাখ কেবল একটি দিন নয়; এটা একটি অনুভূতি, যা একদিনের নয়, বরং সারাজীবনের।
কামরুল হাসান
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগ