স্লিপ দিয়ে নিয়ে গেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা

শিক্ষার্থীদের ভর্তির টাকা জমা হয়নি প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির ফান্ডে

প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির লোগো এবং শিপার আহমেদ
প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির লোগো এবং শিপার আহমেদ  © সংগৃহীত

বেসরকারি প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটিতে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে বিভিন্ন সময়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিলে জমা হয়নি। এ সময়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি ও অন্যান্য ফি’সহ বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদান করা টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিলে (একাউন্টে) জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, এটি না করে একটি ‘টোকেন পেপারে স্বাক্ষর করে’ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ৮০ লাখ টাকা নিয়ে গেছেন এক কর্মকর্তা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভর্তি তদন্ত কমিটি’র অনুসন্ধানে এমন অনিয়ম ধরা পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক (বরখাস্তকৃত) শিপার আহমেদ শিক্ষার্থীদের ভর্তির এ অর্থ লোপাট করেছেন।

প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক (সাময়িক বরখাস্তকৃত) শিপার আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি টোকেন পেপারে স্বাক্ষর করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ৮০ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) চেয়ারম্যান বরাবর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুভময় দত্ত স্বাক্ষরিত ওই চিঠি চলতি বছরের ২৯ জুলাই পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি শাখা থেকে ব্যক্তিগতভাবে ৭১ লাখ ৪৯ হাজার এবং বেতনের বিপরীতে ৭ লাখ টাকার ঋণের তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিপার আহমেদকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি তার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৮০ লাখ টাকার মতো রয়েছে। এ টাকা ফেরত আনতে প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে তার বিরুদ্ধেঅধ্যাপক ড. শুভময় দত্ত, উপাচার্য, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি।

অন্যদিকে বেসরকারি এ উচ্চশিক্ষালয়ের আর্থিক বিবরণী, আভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং সংশ্লিষ্ট হিসাবাদি বিশ্লেষণে দেখা গেছে—বিগত ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বেসরকারি প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

দীর্ঘ সাড়ে চার বছরের এ সময়ে উচ্চশিক্ষালয়টির এফডিআর ভেঙ্গে ও আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে এ অর্থ লোপাট করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ কোটি টাকাই সরানো হয়েছে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে থাকা এফডিআর ভেঙ্গে। বেসরকারি এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রিজার্ভ ফান্ড এবং নিয়মিত ফান্ড থেকে এসব অর্থ সরিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব প্রাপ্তরা।

আরও পড়ুন: প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ৩০ কোটিরও বেশি অর্থ আত্মসাৎ বহিষ্কৃতদের

এসব অনিয়মে জড়িত ছিলেন—প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের (বিওটি) সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রায়হান আজাদ টিটু। এর আগে নানা অনিয়মরে অভিযোগে তাঁকে সেখান থেকে অপসারণও করা হয়েছিল। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে থাকা শীর্ষ ব্যক্তিরা এসব অনিয়মের সহযোগী হয়েছেন। 

চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভর্তি তদন্ত কমিটি’র অনুসন্ধানকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছিল—অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক (সাময়িক বরখাস্তকৃত) শিপার আহমেদ ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে শুরু করে নিয়মিতভাবে ভর্তি অফিস থেকে একটি টোকেন পেপারে স্বাক্ষর করে প্রায় ৮০ লাখ নগদ টাকা নিয়েছেন।

বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কোষাধ্যক্ষকে জানানো হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে একই চিঠিতে। এছাড়াও বিষয়টি ভর্তি অফিস থেকে জানানো হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে আমি অর্থগুলো নিয়েছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে খরচ করেছি। এখান থেকে আত্মসাৎ করার কোনো সুযোগ নেইশিপার আহমেদ, পরিচালক (বরখাস্ত), অর্থ ও হিসাব শাখা, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি।

শিপার আহমেদের এভাবে নিয়ম ভেঙ্গে অর্থ নেওয়ার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুভময় দত্ত বিষয়টি জানতে পারেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। এছাড়াও উপাচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং সিস্টেমে কোনো ধরনের প্রবেশাধিকার না পাওয়ার বিষয়টিও বিওটি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন উপাচার্য। চিঠির শেষদিকে নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিওটি চেয়ারম্যানকে অনিয়মের বিষয়গুলো অবহিত করেছেন ড. শুভময়।

চিঠির বিষয়ে উল্লেখ করে সামগ্রিক বিষয়ে জানতে কথা হয় প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুভময় দত্তের সাথে। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিপার আহমেদকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি তার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৮০ লাখ টাকার মতো রয়েছে। এ টাকা ফেরত আনতে প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে তার বিরুদ্ধে।

অভিযোগের বিষয়ে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক পদ থেকে বরখাস্ত হওয়া শিপার আহমেদের সাথে কথা হয় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে আমি অর্থগুলো নিয়েছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে খরচ করেছি। এখান থেকে আত্মসাৎ করার কোনো সুযোগ নেই বলেও দাবি করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ