তালগোলে শিক্ষাসূচি, অনলাইন ক্লাসেও দ্বিধা-শঙ্কা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

উচ্চশিক্ষায় অবদান রাখতে বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা ও বিকাশ প্রায় তিন দশক পেরিয়েছে। বর্তমানে শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতেও অবদান রেখে চলেছে।

বর্তমানে দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১০টি। এর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় থাকা ১০৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সব মিলিয়ে শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে তিন লাখের মতো। তবে সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ইতোমধ্যে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।

বন্ধ হওয়ার পর নতুন করে কবে নাগাদ সশরীরে কিংবা অনলাইন ক্লাসে ফিরবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, সে বিষয়েও কোন সিদ্ধান্ত নেই। এই পরিস্থিতি সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীদেরকে ক্ষতির মুখে ফেলবে বলে অভিমত জানিয়েছেন উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতি বিবেচনায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন স্থগিত করা হয়। এছাড়াও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মিডটার্মের পরীক্ষাগুলো চলমান থাকা অবস্থায় বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি সকল প্রকার প্রশাসনিক কার্যক্রমও বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে নিয়মিত ক্যালেন্ডার বিঘ্নত হচ্ছে। যেটি পরবর্তীতে পুষিয়ে নিতে সমস্যা পোহাতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।

প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি গুলোর প্রতি সেমেস্টারে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৫ দিন বিরতি থাকে। ফলে বছরব্যাপী শিক্ষা ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যস্ত সূচি থাকলেও মূলত সরকারি নির্দেশেনা থাকায় কোনপ্রকার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না তারা।

করোনা মহামারির সময়েও সরকারের নির্দেশনা অনুসারে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে কোটা আন্দোলনের কারণে সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। শিক্ষাসূচির এমন ওলট পালট হলেও অনলাইন ক্লাসে যেতে দ্বিধা-শঙ্কা দেখা যাচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থীরাই ক্ষতির মুখে পড়বেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, করোনা মহামারির সময়ে আমরা যেকারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করেছিলাম, এখন সেরকম নয়। এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। এবারে সরকারি নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সময়টাও খুব স্পর্শকাতর। বর্তমান সময়ের পরিস্থিতি কোভিডের তুলনায় অনেক বেশি গুরুতর এবং সংকটাপন্ন। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য আপাতত কোনো চিন্তাভাবনা নেই। সময়মতো চিন্তাভাবনা করবো।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সৈয়দ মাহফুজুল আজিজ জানান, প্রথমত বর্তমান পরিস্থিতিতে সশরীরে কিংবা অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির নির্দেশনার উপর নির্ভর করছে। তবে আমরা সবসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উদগ্রীব। সরকারি নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার সাথে সাথেই আমরা ক্লাস পরীক্ষা কার্যক্রম চালু করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবো। 

সেশনজটের শঙ্কার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে ক্ষতির মুখে পড়েছে। আমাদের প্রতিটি কার্যক্রম নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী সম্পন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে ফেরার বিষয়টি সম্পূর্ণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির নির্দেশনার উপর নির্ভর করছে। আমরা তাদের সাথেও দ্রুত কথা বলার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। চলমান মিড পরীক্ষাগুলোও নেয়া সম্ভব হয়নি।

তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করে দীর্ঘকালীন ক্ষতি থেকে রক্ষা করা জরুরি বলে মনে করেন উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। অন্যথায় উচ্চশিক্ষার ক্রমবর্ধমান জাতীয় চাহিদা পূরণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হবে।


সর্বশেষ সংবাদ