অভিভাবক ছাড়াই চলছে ৩৩ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ছবি

একজন ভিসিকে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক এবং প্রশাসনিক প্রধান কিংবা অভিভাবক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভিসির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা পদক্ষেপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে যায়। কিন্তু ভিসি ছাড়াই কার্যক্রম চলছে বাংলাদেশে এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বর্তমানে ৩৩টি।

মঙ্গলবার (২১ মে) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে প্রকাশিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত ভিসি-ট্রেজারারদের সর্বশেষ তালিকা থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়। ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখ স্বাক্ষরিত তালিকায় ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নেই। আর ২৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শূন্য রয়েছে ট্রেজারার পদটি। এছাড়া ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি এবং ট্রেজারার দুটি পদই শূন্য। সাময়িক অনুমোদনপ্রাপ্ত কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রমের অনুমতি হয়নি এবং ভিসি ট্রেজারারের পদ শূন্য এমন তালিকায় রয়েছে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। 

জানা গেছে, বর্তমানে ১১৪টি বেরসকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে মালিকদের মামলা সংক্রান্ত কারণে ৪টিতে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এছাড়া অনুমোদন পাওয়ার পর অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানের অনুমতি পায়নি।

“কমিশনের নিবিড় পর্যবেক্ষণের ফলে অব্যবস্থাপনার এই চিত্র আগের থেকে কমে এসেছে। আর উপাচার্য এবং ট্রেজারার দুটি পদই শূন্য, এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কিন্তু খুব বেশি নেই -অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ

অভিযোগ রয়েছে, একাধিক ইউনিভার্সিটি মালিকরা ভিসি-ট্রেজারার নিয়োগ না দিয়ে কিংবা ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালাচ্ছেন বছরের পর বছর। আবার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কোন ভিসি নিয়োগ পায়নি, এ তালিকায় রয়েছে খুলনার বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোন ট্রেজারারও নিয়োগ হয়নি। 

জানতে চাইলে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভিসি-ট্রেজারার না থাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতোমধ্যে ইউজিসিতে তালিকা পাঠিয়েছে। কিন্তু তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা যোগ্যতা পূরণ না করায় পুনরায় পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। এছাড়াও দীর্ঘ সময় ভিসি পদটি ফাঁকা রয়েছে খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজিতে।  প্রতিষ্ঠানটিতে ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ভিসি পদটি শূন্য রয়েছে।

আরও পড়ুন: জন্ম-বেড়ে ওঠা একত্রে, একসঙ্গে সমাবর্তনে গোল্ড মেডেলিস্ট যমজ বোনের গল্প

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, ভিসি প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার এ তিনটি পদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলর। তবে প্রাথমিক কাজটি করে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউজিসির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব (প্যানেল) আসার পর তারাই সরকারের কাছে এসব পদে নিয়োগের জন্য প্রস্তাব পাঠায়। সেটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যায়।

অভিযোগ রয়েছে, একাধিক ইউনিভার্সিটি মালিকরা ভিসি ট্রেজারার নিয়োগ না দিয়ে কিংবা ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালাচ্ছেন বছরের পর বছর। আবার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কোন ভিসি নিয়োগ পায়নি, এ তালিকায় রয়েছে খুলনার বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোন ট্রেজারারও নিয়োগ হয়নি। 

আইন অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এই তিন পদে নিয়োগ দিতে একেকটি পদের বিপরীতে তিনজন অধ্যাপকের নামের প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেগুলোর ইউজিসির মাধ্যমে যাচাই করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে রাষ্ট্রপতি একজনকে নিয়োগ দেন।

তবে অভিযোগ রয়েছে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের প্যানেল সরকারের কাছে না পাঠিয়ে নিজেদের মতো করে একটি প্যানেল পাঠায়। পরে সেটি আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত আসে। এরপর থমকে যায় এই নিয়োগ প্রক্রিয়া। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড এবং মালিকরা তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়।

বছরের পর বছর ভিসি ট্রেজারারের মত গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো ফাঁকা থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, কমিশনের নিবিড় পর্যবেক্ষণের ফলে অব্যবস্থাপনার এই চিত্র আগের থেকে কমে এসেছে। আর উপাচার্য এবং ট্রেজারার দুটি পদই শূন্য, এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কিন্তু খুব বেশি নেই। তবে এরমধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের প্যানেল পাঠিয়েছে। কিন্তু যোগ্যতা পূরণ না করায় পুনরায় তাদের প্যানেল পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। ফলে সার্বিকভাবে প্যানেল যাচাই-বাছাইয়ের পুরো প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময়ক্ষেপণ হয়। তবে সর্বোপরি ভিসি-ট্রেজারার নিয়োগের চিত্র আরও উন্নত হবে বলে আমরা আশাবাদী। 

তালিকায় ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নেই। এছাড়াও ২৯ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই ট্রেজারার এবং ১১ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি এবং ট্রেজারার দুটি পদই শূন্য। সাময়িক অনুমোদনপ্রাপ্ত কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রমের অনুমতি হয়নি এবং ভিসি ট্রেজারারের পদ শূন্য এমন তালিকায় রয়েছে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম।

১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি-ট্রেজারার একটিও নেই
আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব অব বাংলাদেশ, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি, চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি (শুরু থেকেই ট্রেজারার নেই), বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি সৈয়দপুর, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কাদিরাবাদ, এন. পি. আই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি এবং বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি খুলনা। 

শুধু ভিসি পদটি শূন্য ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে
আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব অব বাংলাদেশ,  রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি, চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি (শুরু থেকেই ট্রেজারার নেই), বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি সৈয়দপুর, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কাদিরাবাদ, এন. পি. আই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি খুলনা, রূপায়ন এ. কে. এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, বরেন্দ্র ইউনিভার্সিটি, খাজা এনায়েত আলী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী সাইন্স এন্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি খুলনা, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব স্কিল এনরিচমেন্ট এন্ড টেকনোলজি এবং ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া।

ট্রেজারার পদ শূন্য ২৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে
সেন্ট্রাল উইমেন'স ইউনিভার্সিটি, আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, দি পিপল'স ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (দুই দশক), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি, নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি সৈয়দপুর, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কাদিরাবাদ, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কুমিল্লা, এন পি আই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়, রূপায়ন এ কে এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা খান বাহাদুর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি রাজশাহী, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি, মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি খুলনা, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বাংলাদেশ এবং লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষা কার্যক্রমের অনুমতি দেয়নি ৫টিতে
রূপায়ন এ. কে. এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি এবং লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সাময়িক অনুমতি দেয়া হলেও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয়নি ইউজিসি। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়েও নেই ভিসি ও ট্রেজারার পদ দুটি। 

তাছাড়া মামলা চলমান থাকা নাম সর্বস্ব কিংবা বন্ধ হয়ে যাওয়া ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে ইবাইস ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, কুইন্স ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি।


সর্বশেষ সংবাদ