বছর পেরোনোর আগেই নর্থ সাউথের মাইশার পরিণতি হলো তামান্নার
রাজধানীর লালবাগ এলাকার বেড়িবাঁধে কাভার্ড ভ্যানচাপায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার তামান্নার মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (৩১ মার্চ) দিবাগত রাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তামান্না বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অনার্স চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এর আগে ২০২২ সালে ০১ এপ্রিল কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় প্রাণ হারান একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইশা মমতাজ মীম। বছর না পেরোতেই যেন মীমের পরিণতি হলো তামান্নার!
২০২২ সালের (০১ এপ্রিল) শুক্রবার ছুটির দিন মাইশার ছোট বোন মৌয়ের মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা ছিল। তাই সকালে বাবা নূর মোহাম্মদ তাকে নিয়ে মিরপুরের বাঙলা কলেজে পরীক্ষা কেন্দ্রে চলে যান। আর মাইশা সকালেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নিজের স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে যান। সকাল ১০টার দিকে তার (নূর মোহাম্মদ) মোবাইল ফোনে একটি ফোন আসে, ‘আপনার মেয়ে অ্যাকসিডেন্ট করেছে, আপনি হাসপাতালে আসেন।’
আরও পড়ুন: হর্ন দিলে চাকার নিচে পড়ে যায় মিম, পরে পালিয়ে যায় গাড়ি
হাসপাতালে গিয়ে মেয়ের লাশ দেখে সংজ্ঞাহীন হয়ে যান তিনি। আর তার মাকে জানানো হয় বিকেল সাড়ে ৫টায় মেয়ের জানাজা পড়ানোর কিছু আগে। মেয়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে মা-ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। মাইশা মমতাজ পরিবারের বড় মেয়ে। তিনি তার বাবার প্রতিষ্ঠিত কালিয়াকৈরের মৌচাক আইডিয়াল পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এদিন সকাল ৭টার দিকে কুড়িল বিশ্বরোডে সড়কে মীমকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তাকে উদ্ধার করে এক পথচারী। দ্রুত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে মীমকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
বিস্তারিত: ঘটনাস্থল কুড়িল: সেই মিম, এই মীম
বছর না পেরোতেই একই পরিণতি হলো সানজিদা আক্তার তামান্নার। তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অনার্স চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকছেন রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায়। তামান্নার বাবার নাম আবু তাহের। তাহেরের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলায়।
লালবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম মোর্শেদ জানান, রাতে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে (রাইড শেয়ারিং) করে বেড়িবাঁধ দিয়ে যাচ্ছিলেন তামান্না। এ সময় একটি কাভার্ডভ্যান ওই মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে মোটরসাইকেল ছিটকে পড়লে ওই কাভার্ডভ্যানের চাকায় পৃষ্ট হন শিক্ষার্থী। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: কাভার্ডভ্যান চাপায় স্বপ্নভঙ্গ নর্থ সাউথ ছাত্রীর
আসন্ন ঈদের পরই কানাডা প্রবাসী এক ছেলের সঙ্গে বিয়ের কথা ছিল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সানজিদা আক্তার তামান্নার। কিন্তু সেটা আর হলো না। তামান্না ও তার পরিবারের সব স্বপ্ন এখন গাড়ির চাকায় পিষ্ট।
মৃত তামন্নার বড় ভাই মো. সায়েম জানান, শুক্রবার বিকেলে কলাবাগানে এক আত্মীয়ের বাসায় ইফতারের দাওয়াতে যায় সে। সেখান থেকে ফেরার পথেই ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ঈদের পর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল বোনের। কানাডা প্রবাসী এক ছেলের সঙ্গে বিয়ের আলোচনা চলছিল। ঈদের পরে সেই ছেলে দেশে আসলে বিয়ের দিন তারিখ ফাইনাল করার কথা ছিলো। কিন্তু এখন সে সবই শেষ!