রাজধানীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যেন গরিবের স্কুল!
রাজধানী ঢাকাতে ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। পারিবারিক অভাব, অনটনের কারণে পড়ালেখা চালিয়ে নিতে না পেরে ঝরে পড়ছে অনেক শিশু শিক্ষার্থী। সাধারণত আর্থিকভাবে একটু সচ্ছল অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠান না।
এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বলছেন, আর্থিক সচ্ছল অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠান না। এ মানসিকতা পরিহার করা দরকার। কারণ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন সুন্দর অবকাঠামো করে দিয়েছে সরকার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ক্যান্সারের কাছে হেরে গেলেন রাবি অধ্যাপক ফারুক হোসাইন
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীও বলছেন, সবার জন্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আলেয়া ফেরদৌসী শিখা এ প্রতিবেদককে বলেন, রাজধানীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আসে অভাবী আর নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
আরও পড়ুন: অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক গ্রেফতার
তেজগাঁও রেলস্টেশনের পাশের ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা কামরুননাহার, নাদিয়া সুলতানা বলেন, এই স্কুলের পাশেই বেশ কয়েকটি বস্তি রয়েছে। এ বিদ্যালয়ের বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রী এসব বস্তি থেকেই আসে। কারও পরিবার কারওয়ানবাজারের আড়তে বা তেজগাঁও কলার আড়তে কাজ করে। কেউ বা রিকশা চালায়। হতদরিদ্র আর নিম্নবিত্তদের সন্তানরাই এ স্কুলে পড়ছে।
বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাহী সভাপতি জাহিদুর রহমান বিশ্বাস বলেন, অনেক সচ্ছল অভিভাবক চান না, তার সন্তান নিম্নবিত্ত আর খেটে খাওয়াদের সন্তানের সঙ্গে বেড়ে উঠুক। ‘স্ট্যাটাস মেইনটেইন’ করতে গিয়েই অভিজাত পরিবারগুলো তাদের বাচ্চাকে এসব স্কুলে ভর্তি করছেন না। ক্রমে এ অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নানা সমস্যা সমাধান আর পড়াশোনার মানোন্নয়নে সরকারকে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানান তিনি।
মগবাজার মোড়ে বড় মগবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামসুন্নাহার বেগম জানান, প্রাক প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এখানে ৫০৫ জন ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও করোনার মধ্যে ২৫ শতাংশের বেশি ঢাকা ছেড়েছে। শিক্ষার্থীরাও কেউ পরিবারের সঙ্গে গ্রামে চলে গেছে। কেউ বেছে নিয়েছে শিশুশ্রমের পথ। পরিবারে অভাব অনটন আর সচেতনতার অভাবে এই শিক্ষার্থীদের অনেকের প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শেষ হচ্ছে না। স্কুলটিতে নেই খেলার মাঠ। মানসিক বিকাশ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে এই শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: আগুন থেকে যেভাবে প্রাণে বাঁচলেন নার্সিং ছাত্রী মুক্তা
বংশাল নিমতলীতে নবাবকাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, চতুর্থ শ্রেণিতে ১০৩ জন ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও মাত্র একজন ক্লাস করতে এসেছে। এ বিদ্যালয়েও ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীর পরিবার অভাব-অনটনের মধ্যে দিনাতিপাত করে। তাদের অভিভাবকরাও অসচেতন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সচ্ছল পরিবারের সদস্যদের অনাগ্রহের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো করে দিয়েছে সরকার। বিনামূল্যে পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও বিস্কুট দেওয়া হচ্ছে। এখন অনেক মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে এসব স্কুলে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে আর অন্যভাবে দেখার সুযোগ নেই। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হোক আর মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তের সন্তান- সবার জন্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।