বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে ৩০ শতাংশ ঘুষ দাবি শিক্ষা কর্মকর্তার

উপজেলা শিক্ষা অফিস, বেড়া
উপজেলা শিক্ষা অফিস, বেড়া  © সংগৃহীত

বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে ৩০ শতাংশ ঘুষ দাবি করার অভিযোগ উঠেছে পাবনার বেড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষকরা।

জানা যায়, হয়রানির শিকার হওয়া প্রাথমিক শিক্ষকরা গতকাল বুধবার দুপুরে ওই কর্মকর্তার বিচার ও অপসারণের দাবিতে শিক্ষা কর্মকর্তার অফিস ঘেরাও করতে গেলে তিনি অফিস থেকে দ্রুত পালিয়ে যান। পরে শিক্ষকরা বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে তার কাছে অভিযোগ দেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। এ ঘটনায় বেড়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

বেড়া উপজেলার বেশ কয়েকজন প্রাথমিক শিক্ষক জানান, নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার কারণে এই কর্মকর্তা সারা দেশে একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তাকে এর আগে ২০১১ সালে এই বেড়া উপজেলা থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর শাস্তিমূলক বদলি করেছিল।

ওই সময় বেড়ার তৎকালীন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার সঙ্গে ওই শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ নিয়ে ঘুষাঘুষির ঘটনা ঘটে। সেসময় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ওই খবর প্রকাশ হলে কর্তৃপক্ষ তাকে শাস্তিমূলক বদলি করেন।

সূত্রমতে, গত এক দশকে অধিদপ্তর তাকে বেশ কয়েববার শাস্তিমূলক বদলি করে। এবার তাকে গাইবান্ধা জেলার সদর উপজেলা থেকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়।

জানা গেছে, তিনি তদবির করে তার পুরনো কর্মস্থল বেড়াতে পোস্টিং করিয়ে নেন। বেড়া থেকে শাস্তিমূলক বদলি হয়ে আবার আবার বেড়া উপজেলায় আসার পর থেকেই শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছিল।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি বেড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম এবারো বেড়া উপজেলায় এসেই শিক্ষকদের হুমকি-ধমকি দিয়ে তটস্থ করে রেখেছেন। তিনি এবার এসেই ঘোষণা দেন- বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজের সরকারি বরাদ্দকৃত টাকার ৩০ শতাংশ তাকে দিতে হবে। এরপর বাকি টাকার কাজ শিক্ষকরা না করলেও তিনি দেখতে যাবেন না।

শিক্ষকরা তার এ অনৈতিক দাবির প্রতিবাদ করেন। এজন্য কয়েকজন শিক্ষককে তিনি অশ্লীল ভাষায় (মুদ্রণের অযোগ্য) বকাঝকা করেন।

বেড়া উপজেলা শিক্ষক সমিতির  সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন- তিনি স্পষ্টভাবে প্রধান শিক্ষকদের বলে দিয়েছেন- আপনারা স্লিপের টাকা বা স্কুল সংস্কারের টাকা নিয়ে হজম করলেও আমি দেখতে যাব না। শুধু আমাকে শতকরা ৩০ ভাগ টাকা নগদে প্রদান করে ব্যাংকের চেক নেবেন। টাকা ছাড়া কোন চেক ছাড় পাবেন না।

কয়েকজন শিক্ষক জানান, বেড়া উপজেলার ১১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য স্লিপের টাকা, ওয়াশ ব্লক, বিদ্যালয়ের রুটিন মেরামত ও সংস্কার কাজের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের শতকরা ৩০ ভাগ করে দাবি করছেন। তিনি বলেছেন তার কাছে নগদ টাকা উৎকোচ দিয়ে তারপর বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ করা টাকা দেয়া হবে। যিনি টাকা দেবেন না তার বিরুদ্ধে নানারকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুমকি দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, তারা প্রতিবাদ করতে গিয়ে গালমন্দের শিকার হয়েছেন।

বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সবুর আলী বলেন, কয়েকজন শিক্ষক তার অফিসে এসে মৌখিকভাবে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দুর্নীতি ও হুমকির বিষয়ে জানিয়েছেন। তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে বেড়া উপজেলা থেকে শাস্তিমূলক বদলি হয়ে যাওয়া এবং আবার শাস্তিমূলক বদলিতে ফিরে আসার কথা স্বীকার করেন। তবে ঘুস চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ