শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জনপ্রতি ১০-১৫ লাখ টাকায় চুক্তি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০২ PM , আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৮ PM
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় জনপ্রতি ১০-১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ছক কষেছিলেন একদল প্রতারক চক্র। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পরীক্ষা শুরুর ৫-১০ মিনিটের মধ্যেই প্রশ্নপত্র চলে যায় কেন্দ্রের বাইরে। এরপর একটি চক্র দ্রুত প্রশ্নপত্রের সমাধান করে কেন্দ্রের ভেতরে পরীক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান ও পরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় যুক্তদের প্রচেষ্টায় তাদের সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। শুক্রবার (০৮ ডিসেম্বর) দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতিতে জড়িত চক্রের ১৩ সদস্য, পরীক্ষার্থীসহ ১২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিন শিক্ষক নিয়োগের প্রথম পর্বে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ১৮টি জেলার ৫৩৫টি কেন্দ্রে এ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বের ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। প্রথম ধাপের রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
এর মধ্যে গাইবান্ধায় র্যাবের অভিযানে ধরা পড়েছেন চক্রের ৩৭ জন। পাঁচজন কেন্দ্রের বাইরে থেকে সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেন। তাদের মধ্যে রেলওয়ের কর্মী, স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষক রয়েছেন। আর রংপুরে ১১ পরীক্ষার্থীসহ ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের তিনজন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও পাঁচজন ছাত্রলীগ নেতা। এ ছাড়া বহিষ্কার করা হয়েছে ৮৩ জনকে।
আরও পড়ুন: শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ৮ জেলায় আটক ১১৮
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, একটি অসাধু চক্র মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অনৈতিক উপায়ে পরীক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বলে গোয়েন্দা তথ্য ছিল।
এই পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামে ৭৬ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু মোবাইল ফোন ও ডিভাইসসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান জানান, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বিটু এক্স ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষার্থীর প্রশ্নপত্রের উত্তর প্রদানের চুক্তি করা হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রস্তুতির সময় পরীক্ষার আগের রাতে ও সকালে রংপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আটককৃতদের মধ্যে রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ তিনটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতাসহ পরীক্ষার্থী এবং ডিভাইস জালিয়াতি সিন্ডিকেটের সদস্যরা আছেন। আটক ১১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে আট জনই নারী। পরীক্ষা শুরুর আগেই পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে সকলকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১১টি ডিভাইস, ৮০টি ফোন ও প্রবেশপত্র জব্দ করা হয়।
কুড়িগ্রামে প্রক্সি ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতি করে পরীক্ষা দেওয়ার অভিযোগে ৯ পরিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এছাড়াও তিন জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। লালমনিরহাটেও পরীক্ষা চলাকালে কয়েকটি কেন্দ্র থেকে ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ ১৩ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। পরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
দিনাজপুরে প্রক্সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অভিযোগে ১৮ জন বহিরাগতকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া ১৮ জন পরীক্ষার্থীকে অসদুপায় অবলম্বনের কারণে বহিষ্কার করা হয়। একই অভিযোগে ঠাকুরগাঁওয়ে সাত জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।