করোনায় বেশি ক্ষতি পঞ্চমের শিক্ষার্থীদের

করোনায় বেশি ক্ষতি পঞ্চমের শিক্ষার্থীদের
করোনায় বেশি ক্ষতি পঞ্চমের শিক্ষার্থীদের  © ফাইল ছবি

দেশে করোনা মহামারির সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও ঘাটতি বেড়েছে পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় শেখার ক্ষেত্রে।

করোনাকালে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের শিখনক্ষতি নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আগে থেকে শেখার ক্ষেত্রে ঘাটতি ছিল। করোনা মহামারিতে প্রায় দুই বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে সেই ঘাটতি আরও বেড়েছে। 

সাধারণভাবে একেকটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের যেসব দক্ষতা বা যোগ্যতা অর্জন করার কথা বা যেসব প্রত্যাশা পূরণ করার কথা, তার প্রাপ্তিকে শিখন অর্জন বলা হয়। কিন্তু, মহামারীর কারণে এ ঘাটতি দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে বাড়লেও বেশি ক্ষতি কোমলমতীদেরই হয়েছে বলে জানানো হয়েছে ওই গবেষণার ফলাফলে।

গবেষণার উঠে এসেছে, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।

করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠদান বন্ধ ছিল। তবে ওই সময়ে টেলিভিশন, রেডিও ও অনলাইনে ক্লাস নেওয়াসহ নানাভাবে শিক্ষার্থীদের শেখানোর কার্যক্রম অব্যাহত রাখার চেষ্টা ছিল। যদিও এসব কার্যক্রমে সব এলাকার সব শিক্ষার্থী সমানভাবে অংশ নিতে পারেনি। প্রাথমিক স্তরে সরকারি–বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২ কোটির বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে।

করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ।

গবেষণায় তথ্য বলছে, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৫ শতাংশের পরিবারে কম্পিউটার বা ল্যাপটপ এবং প্রায় ৭ শতাংশের পরিবারে রেডিও ছিল। তবে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীর বাসায় ইন্টার সংযোগসহ স্মার্টফোন ছিল। যেসব শিক্ষার্থীর বাসায় এসব সুবিধা ছিল, তাদের পরীক্ষার ফলও তুলনামূলকভাবে ভালো।

গবেষণার ফলাফলে আরও বলা হয়েছে, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির প্রায় ৭০ ভাগ শিক্ষার্থী কখনোই টেলিভিশনের সম্প্রচারিত দূরশিখন কার্যক্রমে অংশ নেয়নি। এ ছাড়া ৭৬ শতাংশের মতো শিক্ষার্থী মুঠোফোনে এবং ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী রেডিওর মাধ্যমে দূরশিখন কার্যক্রমে অংশ নেয়নি।

সারা দেশের সব বিভাগ থেকে ২৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ১৮ হাজার ৮৩৮ হাজার শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘লার্নিং লস স্টাডি-২০২২’ নামে এই গবেষণা করেছে এনসিটিবি। তাদের করোনাকালে কতটা শিখনক্ষতি হয়েছে, তা জানতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে পাঁচটি বিষয়ের ওপর পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। করোনার আগের সময়ে ২০১৯ সালে শিক্ষার্থীদের শিখনহারের সঙ্গে নতুন গবেষণার ফলাফলকে তুলনা করা হয়েছে।

গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।

গবেষণার তথ্য বলছে, দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা বিষয়ে প্রয়োগের দক্ষতায় (অর্জিত জ্ঞানকে নতুন ও বাস্তব পরিস্থিতিতে ব্যবহারের ক্ষমতা) উল্লেখযোগ্য হারে ক্ষতি হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে প্রয়োগদক্ষতায় শিখনক্ষতি সর্বাধিক। এমনকি তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, গণিত এবং ইংরেজি বিষয়ে কোনো বিষয়বস্তু বোঝার সক্ষমতার (অনুধাবন) দক্ষতা কমেছে।

এনসিটিবির গবেষণা প্রতিবেদনে এসব ক্ষতি ও ঘাটতি পূরণে চাহিদাভিত্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য ‘প্রতিকারমূলক শিখন প্যাকেজ’ তৈরি করে বাস্তবায়ন করাসহ চার দফা সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।


সর্বশেষ সংবাদ