৩১ অক্টোবর ২০২৫, ২০:৫৭

রাজনৈতিক সংকট সমাধান করুন—সরকারের প্রতি মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  © সংগৃহীত

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে সংকট দেখা দিয়েছে মন্তব্য করে এই সংকটের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশনই দায়ী। এই সংকট সমাধান করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের কাছে আহ্বান থাকবে-যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন সমস্যাগুলোর সমাধান করেন। যাতে সবাই একসঙ্গে নির্বাচনের দিকে এগোতে পারি এবং জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করতে পারি। 

আজ শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলনের ৫ম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গণসংহতির সভাপতি জোনায়েদ সাকি এতে সভাপতিত্ব করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন যে সংকট তৈরি করেছে আমি বিশ্বাস করি এই সংকট কেটে যাবে। এই দেশের মানুষ কখনও পরাজয় বরণ করেনি এবং করবেও না। তিনি বলেন, আমাদের সবসময় একটা কথা মনে রাখতে হবে, এই দেশ আমাদের এই মানুষ আমাদের। তাদের ঐক্যবদ্ধ করে সমস্ত চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। আমরা বিভিন্ন দল করতে পারি মত থাকতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের বিষয়ে সবার আগে বাংলাদেশ।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে অতীতেও ছিলাম ভবিষ্যতেও থাকব কিন্তু নিজেরা যে সমস্যা তৈরি করেছেন-তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ নেই’মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি খুব পরিষ্কার বলতে চাই, আমরা নির্বাচন করব, নির্বাচন করতে চাই। আমরা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে  অন্তর্বর্তীকাল সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যে ঘোষণা দিয়েছেন সেই ঘোষণার সঙ্গে একমত হয়ে আমরা নির্বাচন চাই।

আরও পড়ুন : আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল নয়, ফ্যাসিস্ট সংগঠন: হাসনাত আবদুল্লাহ

তিনি বলেন, সেই নির্বাচনকে আজকে বানচাল করার জন্য, সেই নির্বাচনকে বিলম্বিত করবার জন্য একটা মহল উঠে পড়ে লেগেছে। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, গণভোট নির্বাচনের আগে করার কোন সুযোগ এখন আর নাই। নির্বাচনের দিনই গণভোট হবে সে কথা আমরা পরিষ্কার করে বলেছি। সেখানে দুইটা কারণ থাকবে একটি ভোট গণভোটের জন্য, আরেকটি ভোট হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য। সুতরাং এই বিষয়ে কোন দ্বিমত কারো থাকবে বলে আমি অন্তত মনে করি না।

গণভোটের দাবিতে আন্দোলরত দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে যারা এই নিয়ে গোলমাল করছেন, রাস্তায় নেমেছেন। তাদেরকে অনুরোধ করব দয়া করে জনগণকে অনেক বিভ্রান্ত করেছেন অতীতে… অনেক করেছেন…সেগুলো আমি বলতে চাই না। একসময় এই দেশের সকল মানুষের চাহিদা ছিল পাকিস্তান স্বাধীন হবে…আপনারা (জামায়াতে ইসলামী) সেটার বিরোধিতা করেছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন। আজকে দয়া করে জনগণ যে নির্বাচন চায় সেই নির্বাচনের বিরোধিতা করবেন না। এই দেশের মানুষ কখনো বিট্রেয়ারের যারা বিট্রে করে তাদেরকে ক্ষমা করে না, তারা ক্ষমা পায় না।

তিনি বলেন, সুতরাং আপনারা (জামায়াতসহ আন্দোলরত দলগুলো) ওখান থেকে সরে আসুন। নির্বাচন করুন। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের মতামত প্রতিষ্ঠিত হোক এটাই আমরা সকলে চাই জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক। এই সংকট থেকে আমরা উত্তরণ ঘটাতে পারি সেদিকেই আমাদের যাওয়া দরকার, আমাদেরকে যেতে হবে।

আরও পড়ুন : আওয়ামী লীগকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের ভোট করতে বললেন কৃষক দল নেতা

‘বিএনপি আগামীতে জাতীয় সরকার করবে’ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অবশ্যই আমাদের মিত্রদেরকে নিয়ে যাদের সঙ্গে আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর লড়াই-সংগ্রাম করেছি একসাথে কাজ করেছি তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই আমরা সরকার গঠন করতে চাই এবং খুব পরিষ্কার কথা আমরা বলেছি আমরা একটা জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই নির্বাচনের পরে। সুতরাং এই ক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার। আসুন সবাই আমরা এই একসাথে এ নির্বাচনকে উপলক্ষ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাই এবং নির্বাচনকে অত্যন্ত সুন্দর সুষ্ঠভাবে করে আমাদের জনগণের একটা পার্লামেন্ট,  জনগণের একটা সরকার গঠন করি।

বিএনপির বিরুদ্ধে সংস্কার বিরোধী অভিযোগ খন্ডন করে দলটির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ যত সংস্কার সব বিএনপির হাত দিয়ে। আমরাই  সংস্কারের জন্য ৩১ দফা দিয়েছি। আমরাসহ সকল রাজনৈতিক দল সংস্কার করতেই সনদে সই করেছে। আমাদের বক্তব্য খুব পরিষ্কার যে, আমরা অবশ্যই যে সংস্কারগুলো আমরা একমত হয়েছি সেই সংস্কারগুলো অবশ্যই আমরা একমত হব আছি এবং সামনে ভবিষ্যতে সেগুলোই আমরা ইমপ্লিমেন্ট করব যদি আমরা ক্ষমতায় আসি এবং আমরা যেগুলো পারিনি সেগুলো আমাদের ম্যানিফেস্টোতে নিয়ে এসে আমরা করব।