বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

হুমায়ুন আজাদ
হুমায়ুন আজাদ  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশের অন্যতম প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ। গতানুগতিক চিন্তাধারা সচেতনভাবে পরিহার করে বাংলা সাহিত্য অঙ্গণের সেই দিকপাল, অনন্য মননশীল, বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময়, প্রথা ভাঙ্গার রূপকার তিনি। আজ ১২ আগস্ট— এই বিখ্যাত লেখকের ১৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৪ সালের এই দিনে জার্মানির মিউনিখ শহরে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এর আগে একই বছর ফেব্রুয়রি মাসে একুশে বইমেলায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন তিনি।

১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল, মুন্সীগঞ্জের রাঢ়িখাল গ্রামে (তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অধীন বিক্রমপুরের কামারগাঁয়) নিজের মাতামহের বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন হুমায়ুন আজাদ। তার জন্ম নাম ছিল হুমায়ুন কবীর। ১৯৫২ সালে দক্ষিণ রাড়িখাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইনফ্যান্ট (প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা) শ্রেণীতে ভর্তি হন হুমায়ুন আজাদ। ১৯৬২ সালে রাঢ়িখাল স্যার জে সি বোস ইনস্টিটিউশন থেকে পাকিস্তানের মধ্যে ১৮তম স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে ১৯৬৭ সালে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬৮ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন তিনি।

হুমায়ুন আজাদ এমন একজন ব্যক্তি যিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক, রাজনীতিক ভাষ্যকার, কিশোরসাহিত্যিক, গবেষক এবং অধ্যাপক ছিলেন। তার জীবনকালে তিনি ৭০টির বেশি বই লিখেছেন। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক যিনি ৮০’র দশক থেকে ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারবিরোধিতা, যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতি বিষয়ে তার বক্তব্যের মাধ্যমে পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অলৌকিক ইস্টিমার' ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত হয়। 

হুমায়ুন আজাদের প্রথম প্রকাশিত বই ‘অলৌকিক ইস্টিমার’ (১৯৭৩) কবিতার হলেও এর পরে ভাষাবিজ্ঞান চর্চায় বেশি গুরুত্ব দেন তিনি। কাব্যগ্রন্থ ‘জ্বলো চিতাবাঘ’ (১৯৮০), ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’ (১৯৮৫), ‘যতোই গভীরে যাই মধু যতোই উপরে যাই নীল’ (১৯৮৭), ’আমি বেঁচেছিলাম অন্যদের সময়ে’র (১৯৯০) মাধ্যমে কবিতাপ্রেমীদের দৃষ্টি কাড়েন।

তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল’ আলোড়ন তোলে পাঠকমহলে বিপুল সমাদৃত হয়। উপন্যাসের মাধ্যমেও তিনি তার চেতনার প্রকাশ ঘটাতে থাকেন। ‘সবকিছু ভেঙে পড়ে’ (১৯৯৫), ‘মানুষ হিসাবে আমার অপরাধসমূহ’ (৯৬), ‘রাজনীতিবিদগণ’ (৯৮), ‘কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ’ (৯৯), নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধ’ (২০০০), ‘ফালি ফালি করে কাঁটা চাঁদ’ (০১), ‘শ্রাবণের বৃষ্টিতে রক্তজবা’ (০২), ‘একটি খুনের স্বপ্ন’ (০৪)।

আরও পড়ুন: রাবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণবার্ষিকী আজ।

২০০৩ সালে ইত্তেফাক পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় হুমায়ুন আজাদের 'পাক সার জমিন সাদ বাদ' উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। ২০০৪ সালের একুশে বইমেলাতে উপন্যাসটি বই আকারে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটিতে মৌলবাদীদের সমালোচনা করার কারণে কিছু সংকীর্ণ মনের মানুষের রোষানলে পড়েন তিনি। আর এ কারণেই ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে তাকে হত্যা চেষ্টা করা হয়। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে সরকার তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে পাঠায়। 

পরে তিনি সুস্থ্য হওয়ার একই বছর ৭ আগস্ট জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান। সেখানে ১১ আগস্ট রাতে জার্মান কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের দেওয়া একটি পার্টি থেকে ভালোভাবেই নিজের ফ্ল্যাটে ফিরেন। রাতেই কোনো একসময় মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করেন হুমায়ুন আজাদ। ১২ আগস্ট ভোরে ফ্ল্যাটের নিজ কক্ষে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে তার মরদেহ জার্মানি থেকে ঢাকায় আনা হয়ে এবং তার জন্মস্থান রাঢ়িখালে সমাহিত করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ