বিসিএস দিয়ে সহকারি জজ-সচিব, ঢাবি ছাত্র ছিলেন নতুন সিইসি

কাজী হাবিবুল আউয়াল
কাজী হাবিবুল আউয়াল  © সংগৃহীত

সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রধান করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ প্রজ্ঞাপন জারি করে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও সাবেক সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান।

নতুন সিইসি কাজী আউয়াল ১৯৫৫ সালে কুমিল্লা শহরে পিতার কর্মস্থলে জন্মগ্রহণ করেন। খুলনার সেন্ট জোসেফস হাই স্কুল থেকে তিনি ১৯৭২ এসএসসি ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭৪ সালে এইচএসসি এবং অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে আইন শাস্ত্রে এলএলবি (সম্মান) এবং ১৯৮০ সালে এলএলএম করেন।

আরও পড়ুন: সিইসি হলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল, প্রজ্ঞাপন জারি

পরে ১৯৮১ সালে তিনি বিচার কর্মবিভাগে মুন্সেফ (সহকারী জজ) পদে যোগদান করে জেলা ও দায়রা জজসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। আইন কমিশনের সচিব ও শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান পদেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে সচিব ও সিনিয়র সচিব পদে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর তারিখে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি সরকারি কার্যব্যাপদেশে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। সাহানা আক্তার খানমের সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। তিন কন্যা ও দুই নাতি-নাতনি রয়েছে তার।

কাজী আবদুল আউয়াল তার জীবদ্দশায় একাধিক বই লিখেছেন। জীবন পাতার জলছাপ ও ট্রাজেকটরি অব এ জুডিশিয়াল অফিসার তাঁর উল্লেখযোগ্য বই।

জীবন পাতার জলছাপ বইয়ে তিনি নিজের পরিচিতিতে লিখেছেন, বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) কুমিল্লা জেলার জেলা সদরে আমার জন্ম। আমার দাপ্তরিক জন্ম তারিখ ২১ জানুয়ারি, ১৯৫৬। জেনেছিলাম আমার প্রকৃত জন্ম সাল ছিল ১৯৫৫। তখনকার সময়ে এসএসসি পরীক্ষার নিবন্ধনের সময় জন্ম তারিখ দিতে হতো। স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজেদের মতো করে একটা তারিখ ঠিক করে দিতেন আর সেভাবেই নিবন্ধন করা হতো। সেখানে আমি বা আমার পিতামাতার কিছু করার ছিল না।

আজকাল অবশ্য শিশুদের জন্মের সাথে সাথেই জন্ম সনদে সঠিক তারিখ নিবন্ধিত হয়ে যায়, বিশেষ করে শহর এলাকায়। প্রথম শ্রেণি থেকেই স্কুলে শিশুর জন্ম তারিখ সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়। আমাদের সময়কার মতো চাইলেও অসত্য বা অশুদ্ধ জন্ম তারিখ দেয়া একটু কঠিন আজকাল। সময়ের হাত ধরে এটিও অর্জিত উন্নয়নের একটি স্মারক।

আরও পড়ুন: নতুন ইসিতে তিন সাবেক সচিব, বাকি দু’জন প্রাক্তন সেনা ও জজ

আমার বাবার নাম কাজী আবদুল আউয়াল এবং মাতার নাম বেগম নাফিসা খাতুন। তাঁদের এবং তাঁদের পিতামাতার জন্ম হয়েছিল বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত সন্দ্বীপ নামের একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে। চারপাশে অথৈই জল, উত্তাল ঢেউ। বাবা ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করেন সন্দ্বীপের কার্গিল হাই স্কুল থেকে ১৯৩৫ সালে।

১৯৩৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাস করেন। ১৯৪০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি বিসিএস (বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস) করে ব্রিটিশ রাজত্বের কারা বিভাগে ডেপুটি জেলার পদে যোগদান করে সরকারি কর্মজীবন শুরু করেন।

আমার জন্ম সন্দ্বীপে না হয়ে কুমিল্লায় হওয়ার পিছনে মূল কারণ ছিল আমার বাবার সরকারি কর্মস্থল। আমি যখন মাতৃগর্ভ থেকে পৃথিবীতে আসি তখন আমার বাবা কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্মরত ছিলেন। সরকারি কর্মজীবী বাবার সন্তান হিসেবে আমাকে নিজের পূর্ব-পুরুষের ভিটার বদলে, শৈশব কাটাতে হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। তাতে অবশ্য ভালোই হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়, ভিন্ন ভিন্ন মানুষের, ভিন্ন ভিন্ন জীবনাচার ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পেরেছি শৈশব থেকেই।


সর্বশেষ সংবাদ