বাংলা একাডেমিতে স্মরণসভায় বক্তারা
ইতিহাস একদিন বেবী মওদুদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৩, ০৬:২৩ PM , আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৩, ০৬:২৩ PM
বেবী মওদুদ ছিলেন একজন সরলমনা, সাদাসিধা, নির্লোভ জীবন যাপনকারী, সাংবাদিক, একজন সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ। তার সাধারণ জীবনের জন্য বাইরের মানুষ তার সম্পর্কে পরিচিত ছিলো না। তিনি নিজেকে মানুষের সামনে প্রচার করতেন না। তার অসামান্য অবদানের জন্য তাকে বিশেষ সম্মাননা না দেয়া হলেও ইতিহাস একদিন বেবী মওদুদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা।
আজ মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে আগামী প্রকাশনীর আয়োজনে সাংবাদিক-সাহিত্যিক-রাজনীতিবিদ বেবী মওদুদের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. তপন বাগচী বলেন, বঙ্গবন্ধুর লেখাগুলোকে সম্পাদনা করেছেন বেবী মওদুদ। লেখাগুলোকে বিদেশী ভাষায় অনুবাদের ক্ষেত্রেও তার অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু তার এত অবদানকে সরকারীভাবে তেমন মর্যাদায় আসীন করা হয়নি। তাকে স্বাধীনতা পদক বা অন্যান্য সম্মাননাও দেওয়া হয়নি। কিন্তু এমন সময় আসবে যেদিন সবাই বেবী মওদুদকে চিনবে তাকে সম্মানের সাথে স্মরণ করবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ফখরুল আলম বলেন, আমাদের অনেক কিছু জানার প্রয়োজন এমন একজন নারী সম্পর্কে যিনি পর্দার আড়ালে থেকে দেশকে নিয়ে ভেবেছেন, বঙ্গবন্ধুর লেখাগুলোকে সবার সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে গেছেন। আমি বেবী আপাকে সাংবাদিক হিসেবে ২০০৬ সাল থেকে চিনতাম। আমাকে বঙ্গবন্ধুর বই অনুবাদ করার জন্য বলা হয়েছিলো যা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া। আমি সেটা নির্দিধায় গ্রহণ করেছিলাম আমি গিয়ে দেখি বেবী আপা কাজ করে যাচ্ছেন। আমি সপ্তাহে একদিন যেতাম কিন্তু তিনি সবসময়ই কাজ করে যেতেন।
তিনি আরও বলেন, এমন মানুষ দেশে খুব কমই আছে। তিনি সমাজসেবা করেছেন, প্রতিবন্ধীদের পক্ষে, নারী পাচার বিরোধী লিখেছেন কিন্তু তিনি নিজেকে প্রচার করেননি। তার সরল জীবন দেখে কেউ বুঝতে পারতো না উনি একটা সাংসদ। তিনি আমাকে ছোট ভাইয়ের মতই স্নেহ করতেন।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা বলেন, আমরা যাকে স্মরণ করছি তাকে আমি প্রথম দিন মিছিলে দেখেছিলাম। আমি মিছিলের সাথে তাল মিলাতে না পেরে ছিটকে যাচ্ছিলাম, তিনি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন হাত ধরো। আমি হাত ধরেছিলাম এবং এক মহান নেত্রীকে দেখেছিলাম। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আওয়ামীলীগ থেকে একজন সাংসদ নির্বাচিত হন।
তিনি আরও বলেন, আজকে যদি তাকে নিয়ে লেখা হয় ২০০-৩০০ পৃষ্ঠার বই হয়ে যাবে তবুও তাকে নিয়ে লেখা শেষ হবে না। তিনি একটি জাতীয়তাবাদী স্বপ্নের দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। বেবী বাংলা একাডেমিকে নিয়ে ভাবতেন, একটি সুন্দর দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। বেবী সারাজীবন এগিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে লিখে। তাদের জীবনের ছায়ারূপ ছিলেন বেবী। বেবী মানে একটি কবিতা, একটি রাজপথ, সাংবিধানিক বাংলাদেশ ও একটি সংগ্রামের নাম।
উল্লেখ্য, বেবী মওদুদ, ১৯৪৮ সালের ২৩শে জুন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী সাংবাদিক, লেখক এবং রাজনীতিবিদ। তিনি নারী অধিকার আন্দোলনের অন্যতম একজন নারী সংগঠক ও বিশ্লেষক এবং কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (সিজেএ) ইন্টারন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস ছিলেন। বেবী মওদুদ ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের একজন সংসদ সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বাল্য বন্ধু ও সজ্জন। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বেবী মওদুদের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ২০১৪ সালের ২৫শে জুলাই এই মহীয়সী নারী পরলোকগমন করেন।