সমকামী সম্পর্কের জেরে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী তরুণী

চর্চিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
চর্চিতা বন্দ্যোপাধ্যায়  © সংগৃহীত

বান্ধবীর প্রেমে পড়েছিলেন ২০ বছরের এক তরুণী। তাকে ছাড়া বাঁচতে পারবেন না বলে পরিবারকে জানিয়েছিলেন। তবে কিছুদিন ধরে হঠাৎ কথাবার্তা বন্ধ করে দেওয়ায় সেই বান্ধবীর বাড়িতেও ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। তার সঙ্গে কথা বলার জন্য বারবার অনুরোধ করলেও সাড়া মেলেনি। অভিযোগ, এর কিছুক্ষণের মধ্যেই বান্ধবীর বাড়িতে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুরের ওই তরুণী। 

যদিও ওই তরুণীর পরিবারের পাল্টা দাবি, এই সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন ওই বান্ধবী। সে জন্যই বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাদের মেয়েকে খুন করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ইছাপুরের আনন্দমঠ সি ব্লকের এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মৃত ওই তরুণীর নাম চর্চিতা বন্দ্যোপাধ্যায় (২০)। তার বাড়ি ব্যারাকপুরের পঞ্চাননতলায়। শনিবার রাতে নোয়াপাড়া থানা এলাকায় ইছাপুর আনন্দমঠ সি ব্লকে মৃত তরুণীর বান্ধবীর বাড়ি থেকে তার ঝলসানো দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেই অবস্থায় চর্চিতাকে উদ্ধার করে ব্যারাকপুর বি এন বসু হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

চর্চিতার বান্ধবী তথা ওই উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া জানিয়েছেন, ফেসবুকে আলাপের পর তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়েছিল। তিনি বলেন, চর্চিতার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। ও আমার বাড়ি আসত। আমিও ওর বাড়িতে যেতাম। তবে কিছুদিন হল আমাদের কথাবার্তা বন্ধ ছিল।

তার দাবি, শনিবার রাতে বাড়িতে এসে কথা বলার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন চর্চিতা। তবে চর্চিতার সঙ্গে কথা বলতে রাজি ছিলেন না তিনি। তার কথায়, শনিবার রাতে বাড়িতে ফিরে এসে দেখি, চর্চিতা দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমাকে বলছিল, তুই শুধু কথা বল। তোর সঙ্গে কথা না বলে আমি থাকতে পারব না। তখন আমি কথা বলতে রাজি হয়নি। এরপর আমাকে আর মাকে বলে সে চলে যায়।

কিছুক্ষণ পর তার বন্ধু বিজয় চিৎকার করতে থাকেন বলে দাবি করেছেন মৃত তরুণীর বান্ধবী। দেখা যায়, ওই বান্ধবীর বাড়ির ওপরতলায় আগুন জ্বলছে। অভিযোগ, নিজের বাড়ি ফিরে না গিয়ে ওই ঘরেই দরজা বন্ধ করে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন চর্চিতা। সেখান থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে পাড়ার ছেলেরা ছুটে আসেন। এরপর ঝলসানো অবস্থায় চর্চিতাকে হাসপাতালে যাওয়া হলে সেখানে চিকিৎসকেরা মৃত তাকে বলে ঘোষণা করেন।

চর্চিতার বান্ধবী তার ‘সম্পর্ক’ ছেড়ে কি বেরিয়ে যেতে চেয়েছিলেন? সে জন্যই কি ‘আত্মঘাতী’ হয়েছেন চর্চিতা? নাকি তাকে খুন করা হয়েছে? প্রশ্ন উঠছে। চর্চিতার মার দাবি, আমার মেয়ে একটা মেয়েকে ভালবাসে। আমরা বোঝাতাম, মেয়ে-মেয়েতে ভালবাসা হয় না। আমার মেয়ে ইউটিউব-মোবাইল দেখিয়ে বলত, মা, দেখো এ রকম লেসবিয়ান সম্পর্ক অনেক রয়েছে। আমি ওকে নিয়ে বাঁচতে চাই। আমাকে তোমরা মেনে নাও। আমরা তা-ই মেনে নিয়েছিলাম।

তার আরও দাবি, মেয়েটি আমাদের বাড়িতে দু’বছর ধরে আসত। আমার মেয়ে ওকে অনেক জিনিসও কিনে দিয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করাতে ওই মেয়েটি বলেছিল, কাকিমা, আমি আপনার মেয়েকে ভালবাসি!’ তবে কয়েকদিন ধরে ফোনে আমার মেয়েকে বলছিল, আমি এই জীবন চাই না। তুই আর আমার সঙ্গে কথা বলবি না। ওকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করিয়েছে। বিজয়, শুভ (ইছাপুরের স্থানীয় যুবক) বলছিল, ৪৫ মিনিট ধরে আমার মেয়ের সঙ্গে ওই মা-মেয়ের কথা হয়েছে। এ নিয়ে আমি থানায় যাব।

চর্চিতার বান্ধবীর দাবি, চর্চিতা পড়াশোনা করত না। তবে বিউটিশিয়নের কোর্স করছিল। আমি ক্যারিয়ারে মন দিতেই চর্চিতার সঙ্গে কথা বন্ধ করেছিলাম। অন্যদিকে, তার মা বলেন, আমার মেয়ের সঙ্গে চর্চিতার অনেক দিন ধরে বন্ধুত্ব। তবে ওদের মধ্যে কিছুদিন হল কথাবার্তা বন্ধ রয়েছে। চর্চিতা আমার মেয়েকে বলত, আমার সঙ্গে কথা বল, না হলে আমি মরে যাব। 

ওকে বুঝিয়েছিলাম, আজ কথাবার্তা বন্ধ তো কী হয়েছে! পরে নিশ্চয়ই কথা বলবে। শনিবারও আমাদের বাড়ি এসে একই কথা বলছিল। তবে আমাদের বলে ও ফিরে যায়। আমি ঘরের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শুনে দেখি, বাড়ি থেকে ধোঁয়া বার হচ্ছে। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে ওর দেহ বার করা হয়।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা


সর্বশেষ সংবাদ