ইউক্রেনে থাকা বাংলাদেশিদের পোল্যান্ডে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে

  © সংগৃহিত

বেশ কিছু দিন ধরে চলা উত্তেজনার মধ্যেই নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইউক্রেনে সামরিক হামলার নির্দেশ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইতোমধ্যে রুশ সামরিক বাহিনীর হামলায় ইউক্রেনে অন্তত ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পাল্টা হিসেবে ইউক্রেনও রাশিয়ায় হামলা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এই অবস্থার মধ্যে ইউক্রেনে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা আতঙ্কের মধ্যে পড়েছেন। প্রায় দেড় থেকে ২ হাজার বাংলাদেশি ইউক্রেনে বসবাস করেন এবং তাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। ইউক্রেন থেকে তাদের পার্শ্ববর্তী দেশ পোল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার পোল্যান্ডে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ইউক্রেন প্রবাসী এক ব্যবসায়ী মাহবুব আলম এক গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানান, ১৯৮২ সাল থেকে তিনি ইউক্রেনের বাসিন্দা৷ সরকারি শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি, এখন ইউক্রেনের নাগরিক৷

তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়া  ইউক্রেনের দুটো অঞ্চলকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়ে ফেলেছে, স্বাভাবিকভাবেই মানুষ এটা নিয়ে চিন্তিত৷ ইউক্রেনে সীমান্তে তো আগে থেকেই রাশিয়ার সেনারা ছিল৷ এখন পিস মিশনের নামে আরো সেনা ঢোকানো হচ্ছে৷ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত যে দুটি এলাকাকে রাশিয়া স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক রুশ সীমান্ত লাগোয়া ইউক্রেনের দুটি ডিভিশন বা বিভাগ৷ ২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নিলে, এ দুটো বিভাগে বিদ্রোহীদের ইন্ধন দিয়ে যুদ্ধ বাধিয়ে রেখেছে মস্কো৷   

‘‘২০১৪ সালের যুদ্ধের পর ওই দুই অঞ্চলে এখন আর তেমন বাংলাদেশি থাকেন না বলেই আমি জানি৷ লুহানস্কের মেডিকেল ইন্সটিটিউটে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি পড়তেন, দোনেৎস্কেও ছিলেন৷ যুদ্ধের পর অধিকাংশ বাঙালিই চলে যান৷ তারা এখন কিয়েভ, ওডেসাসহ অন্যান্য শহরে ট্রান্সফার হয়ে গেছেন৷ এ মুহূর্তে লুহানস্ক বা দোনেৎস্কে বাংলাদেশি কেউ থেকে থাকলেও কিয়েভে বাংলাদেশের অনারারি কনস্যুলেটের সঙ্গে হয়ত যোগাযোগ করেননি,করলে তারাও জানতে পারতেন৷’’

‘‘এখানে তো বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই, একটা অনারারি কনস্যুলেট আছে৷ তবে পোল্যান্ডে ‍বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন নিয়মিত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন৷ উনার সঙ্গে আমারও ব্যক্তিগতভাবে কথা হচ্ছে৷ ফার্স্ট সেক্রেটারি অনির্বাণ নিয়োগীও খুব অ্যাক্টিভ৷ তিনিও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন৷’’ 

পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা বলছেন, ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ শুরু হওয়ায় পোল্যান্ডে যেতে আগ্রহী— এমন প্রবাসী বাংলাদেশিদের ইউক্রেন থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দূতাবাস।

তিনি বলেন, বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়ার জন্য আমরা পোলিশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি। কারণ তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পোল্যান্ড ভ্রমণের জন্য ভিসা লাগবে। ইউক্রেনে থাকা আমাদের লোকজনকে আমরা জানিয়েছে যে, তারা শিগগিরই ভিসা পাবেন। এমনকি যাদের পাসপোর্ট নেই জরুরি ভিত্তিতে তাদেরও দূতাবাস আসার অনুমতি দেওয়া হবে, বলে জানান সুলতানা লায়লা। তার মতে, ইউক্রেনে প্রায় দেড় থেকে ২ হাজার বাংলাদেশি থাকেন, যাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। তারা যদি ইউক্রেন থেকে বের না হতে চান, তাহলে তাদের নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে দূতাবাস।

পোল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেন, ইতোমধ্যে আমরা আমাদের অর্থ ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং বলেছি যে, ইউক্রেন থেকে যেসব বাংলাদেশি পোল্যান্ডে আসবেন তাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য অর্থের প্রয়োজন। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে আমরা পোল্যান্ডে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের সঙ্গেও কথা বলেছি, যাতে জরুরি ভিত্তিতে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়।

 


সর্বশেষ সংবাদ