স্কুলে স্মার্টফোন নিষিদ্ধ করতে বলল ইউনেস্কো

স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহারের নানান নেতিবাচক দিক রয়েছে
স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহারের নানান নেতিবাচক দিক রয়েছে  © ইন্টারনেট

সারা বিশ্বে স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা- ইউনেস্কো। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের মনোযোগে ব্যাঘাত রোধে, শিক্ষার মান উন্নয়নে এবং শিশুদের সাইবারবুলিং থেকে রক্ষা করতে এ আহবান জানানো হয়েছে।

বিচার-বিবেচনা না করে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে স্বাগত জানানোর বিরুদ্ধে নীতিনির্ধারকদের সতর্ক করে ইউনেস্কো তাদের ২০২৩ সালের গ্লোবাল এডুকেশন মনিটর রিপোর্টে বলছে, শিক্ষার ফলাফল এবং অর্থনৈতিক দক্ষতার ওপর ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাবকে অতিরঞ্জিত হতে পারে এবং সবসময় ভালো নয়। সব পরিবর্তনই অগ্রগতি নিয়ে আসে, এমন নয়।

পড়ালেখা দিন দিন অনলাইনমুখো হওয়ায় ইউনেস্কো নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছে, শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি শিক্ষা গ্রহণের জন্য 'সামাজিক ব্যপ্তির জায়গাটিকে যেন অবহেলা না করা হয়। যারা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের ওপরে জোর দেওয়ার কথা বলছেন, তারা শিক্ষা আসলে কি, সে মূল ব্যাপারটাই বাদ দিয়ে যাচ্ছেন।

ইউনেস্কোর ভাষ্য, অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে যে শিক্ষাগত পারফরম্যান্স কমে যায় এবং স্ক্রিন টাইম বেশি হলে মানসিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলে তার প্রমাণ রয়েছে। স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধের আহ্বান জানানোর মাধ্যমে তারা স্পষ্ট বার্তা দিতে চায় যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ সব ধরনের ডিজিটাল প্রযুক্তিই 'মানবকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির' অধীন হওয়া উচিত। কখনোই তা শিক্ষকের মুখোমুখি মিথস্ক্রিয়ার বিকল্প হওয়া উচিত নয়।

ইউনেস্কোর ডিরেক্টর জেনারেল ওদ্রে আজুলে বলেন, ডিজিটাল বিপ্লবের মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু সমাজে এটিকে কিভাবে নিয়মানুযায়ী পরিচালনা করা উচিত তার সতর্কতা উচ্চারণ করা হয়েছে। শিক্ষা খাতে এটিকে কিভাবে ব্যবহার করতে হবে, সেদিকেও মনোযোগ দিতে হবে।শিক্ষার্থীর চাহিদার কথা আগে মাথায় রাখুন এবং শিক্ষকদের সহায়তা করুন। অনলাইন যোগাযোগ মানুষের মিথস্ক্রিয়ার বিকল্প হতে পারে না।

ডিজিটাল প্রযুক্তি শিক্ষাগত পদ্ধতিকে উন্নত করে কিনা সে বিষয়ে গবেষণা খুব কমই রয়েছে। বিশ্বজুড়ে শিক্ষার নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব উদ্বেগের কারণ। চীনে টিচিং টুলস হিসেবে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার সীমাবদ্ধ হচ্ছে। শিক্ষাদানের পুরো সময়ের ৩০ শতাংশ সময়ে ব্যবহার করা যাবে এসব টুলস।

তবে করোনা মহামারির সময় অনলাইন শিক্ষাই বাচিয়েছে, সেকথাও জানিয়েছে ইউনেস্কো। তাদের হিসেবে, মহামারির সময় এক বিলিয়নেরও বেশি শিক্ষার্থী অনলাইনে পড়ালেখায় ঝুঁকে পড়ে। ইন্টারনেট সহজলভ্য না থাকায় লাখ লাখ দরিদ্র শিশুর শিক্ষা বন্ধ ছিল। প্রতি ছয়টি দেশের একটিতে স্কুলে স্মার্টফোন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

ইউনেস্কো জানায়, সব দেশকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, শিক্ষায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের পেছনে স্পষ্ট উদ্দেশ্য ও নীতিমালা রয়েছে। এ প্রযুক্তি তাদের জন্য উপকারী এবং কারো কোনো ক্ষতি করছে না। গোপনীয়তা ভঙ্গ করে বা অনলাইনে বিদ্বেষ ছড়ানোর মাধ্যমে যেন ক্ষতি না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

স্মার্টফোন কিংবা ট্যাব বা ল্যাপটপ শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট করতে পারে। শেখার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। প্রযুক্তির ফলে লাখ লাখ মানুষের শেখার ও জানার দরজা খুলে গেলেও এর উপকার সবাই সমানভাবে পাচ্ছে না। দরিদ্র দেশের মানুষেরা বাদ পড়ে যাচ্ছে এবং বঞ্চিত হচ্ছে। ডিজিটাল শিক্ষার খরচও বেশি। পরিবেশগত ক্ষতির কথাও প্রায়ই আমরা ভুলে যাই।


সর্বশেষ সংবাদ