প্রশ্ন করার আগ্রহ থেকেই আজকের উদ্ভাস

উদ্ভাস-উন্মেষ শিক্ষা পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুল হাসান সোহাগ এবং উদ্ভাসের লোগো
উদ্ভাস-উন্মেষ শিক্ষা পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুল হাসান সোহাগ এবং উদ্ভাসের লোগো  © টিডিসি ফটো

উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীরই লক্ষ্য থাকে দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি। সাধারণত এসকল প্রতিষ্ঠানের ভর্তিযুদ্ধে ভর্তিচ্ছুদের সফল হওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার। আর বিগত কয়েকবছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে এ ধরনের কোচিং সেন্টারগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে উদ্ভাস-উন্মেষ। 

বাংলাদেশের অন্যান্য কোচিং সেন্টারগুলোর তুলনায় উদ্ভাসের শুরুর গল্পটা অনেকটাই আলাদা এবং এর কার্যক্রমেও রয়েছে অন্যান্য কোচিংগুলোর সাথে বড় পার্থক্য। সাধারণত অধিকাংশ কোচিং সেন্টার বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেও উদ্ভাসের যাত্রা শুরুর পেছনে  মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুল হাসান সোহাগের নিজের জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষকতার প্রতি তার ভালোলাগা।

নিজের শিক্ষাজীবনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে মাহমুদুল হাসান সোহাগ বলেন ‘ছোটবেলা থেকেই আমি বেশ অনুসন্ধানী প্রকৃতির ছিলাম এবং প্রচুর প্রশ্ন করতাম। মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষকগণও আমার এই জানার আগ্রহকে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করছেন এবং ফলাফলস্বরূপ এসএসসিতে বিদ্যালয়ের প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে বোর্ড স্ট্যান্ড করি।’ 

তবে কলেজে সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন মাহমুদুল হাসান সোহাগ। স্কুলজীবনে প্রশ্ন করার আগ্রহের কারণে প্রশংসিত হলেও কলেজে অনেক সময় প্রশ্ন করার জন্য তাকে অপমানিতও হতে হয়। এর প্রভাব পড়ে প্রথম বর্ষের ফলাফলে। পরবর্তীতে নিজের পরিশ্রমে দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই ঘুরে দাঁড়ান তিনি এবং এই প্রচেষ্টা দিয়েই একসময় স্থান করে নেন বুয়েটের মেধাতালিকায়। 

আরও পড়ুন: সুইজারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ, আবেদন শুরু ১ নভেম্বর

মাহমুদল হাসান সোহাগের নিজের জীবনের এই অভিজ্ঞতা ও তার শেখানোর আগ্রহই বড় ভূমিকা রেখেছে উদ্ভাসের শুরুর যাত্রায় এবং উদ্ভাসের কার্যক্রম ঠিক করায়। এ বিষয়ে মাহমুদুল হাসান সোহাগ বলেন, ‘কলেজে পড়াকালীন সময়ে আমি আমার ক্লাসমেট ও বন্ধুদের পড়াশোনার ব্যাপারে সাহায্য করতাম। তারা এটা পছন্দ করতো, আমারও ভালো লাগতো। আমি বুঝতে পারতাম  শিক্ষকতা আমি পছন্দ করি। ফলে অবচেতনভাবেই ‘উদ্ভাস’ শুরু করার মোটিভেশন ছিল।’ 

পরবর্তীতে প্রথম বর্ষে পড়া অবস্থায়ই বন্ধু হামিদকে নিয়ে ৮০০ টাকার একটি রুম ভাড়া নিয়ে তিনজন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করেন উদ্ভাসের। এর পরের মাস থেকে তাদের সাথে যুক্ত হয় আরও দুই বন্ধু। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান-গুলোর মত প্রথমদিকের এই যাত্রায় লড়াই করতে হয়েছিল উদ্ভাসকেও। উদ্ভাসের প্রথম বড় সাফল্য এসেছিল ২০০৫ সালে। এরপর থেকেই উদ্ভাসকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এবং এর সাথে মেডিকেল প্রস্তুতির জন্য যুক্ত হয় উন্মেষও। 

বর্তমানে সারাদেশে উদ্ভাস-উন্মেষের ৬৮ টি শাখা এবং ২১টি পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে উদ্ভাসের বড় পার্থক্য প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের শর্ট নোট সরবরাহ না করে শেখার ও জানার আগ্রহ তৈরি করে এবং সারা দেশের সকল শাখায় একই শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করে। এর পাশাপাশি উদ্ভাসের রয়েছে বিতর্কসহ বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটি এবং বিভিন্ন সহযোগিতামূলক প্রোগ্রামও। 

প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া তথ্যমতে, ২০২১ সালের বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম ১০ এ ১০ জনসহ ১ হাজার ২৭৯ আসনের মধ্যে উদ্ভাস থেকে চান্স পেয়েছে মোট ১ হাজার ২৪১ জন। একই বছর মেডিকেলে জাতীয় মেধায় উম্মেষ থেকে প্রথম ১০ এ ১০ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজে ১৯৬ জনসহ মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে সর্বমোট ৩ হাজার ৩৫৯শিক্ষার্থী। এছাড়া ঢাবি 'ক' ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম ১০ এ ১০ জনসহ ১ হাজার ৮৫১ আসনের মধ্যে উদ্ভাস থেকে মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে সর্বমোট ১ হাজার ৭০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী। 

উদ্ভাসের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে মাহমুদুল হাসান সোহাগ বলেন, ‘উদ্ভাসে ‍শুধু টাকা আয় করার মোটিভেশন আমাদের কখনোই ছিল না। আমরা শুধু তাই করি যা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণকর। আমরা সেসব শিক্ষাই দিয়ে থাকি যা কেবল তাদের একাডেমিক জীবনে নয়, কর্মজীবনেও কাজে লাগে। উদ্ভাস শিক্ষার্থীদের জন্যই পরিচালিত প্রতিষ্ঠান, আর একারণেই উদ্ভাস অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা।’ 


সর্বশেষ সংবাদ