জাবিতে শিফট বৈষম্যের সহজ সমাধান

ভর্তি পরীক্ষার্থী ও জাবি লোগো
ভর্তি পরীক্ষার্থী ও জাবি লোগো  © ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কয়েকটি শিফটে অনুষ্ঠিত হয়। গতবছর শুধুমাত্র জীববিজ্ঞান অনুষদে (ডি ইউনিটে) শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য যে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছিলো, সেটি দু’দিন ধরে ১০টি আলাদা শিফটে আলাদা প্রশ্নে সম্পন্ন করা হয়। এভাবে বেশ কয়েক বছর ধরেই হয়ে আসছে। 

যদিও ভর্তি পরীক্ষা আলাদা আলাদা শিফটে ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্নে নেয়া হয়, কিন্তু সবগুলো শিফটের রেজাল্ট দেয়া হয় সম্মিলিতভাবে একত্রে! অথচ প্রতিটি শিফটের জন্য আলাদা আলাদাভাবে মেধাতালিকা প্রকাশ করাটাই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত এবং একমাত্র গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। আর এই পদ্ধতি অনুসরণ না করে একটি ত্রুটিযুক্ত পদ্ধতিতে রেজাল্ট দেয়ার ফলে একটি গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে এবং তা সমাধানের জন্য এতোগুলো বছর ধরে অনেক চাপ প্রয়োগ করা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ এই সমস্যাটির সমাধানে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

সমস্যাটি কেমন তা দেখার জন্য ২০২০-২১ সেশনের ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্টের দিকে লক্ষ্য করা যাক-

'সর্বমোট ১০টি শিফটে অনুষ্ঠিত ‘ডি’ ইউনিটের এই পরীক্ষায় ৩২০টি আসনের মধ্যে ৫ম শিফট থেকে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে সর্বোচ্চ ১০৪ জন, যা মোট আসনের ৩২.৫ শতাংশ। অন্যদিকে ৩য় শিফট থেকে সর্বনিন্ম মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে মাত্র ১ জন, যা মোট আসনের ০.৩২ শতাংশ! এ ছাড়া প্রথম শিফট থেকে ১০ জন, দ্বিতীয় শিফট থেকে ৭ জন, চতুর্থ শিফট থেকে ১৮, ষষ্ঠ শিফট থেকে ২২, সপ্তম শিফট থেকে ৫৩, অষ্টম শিফট থেকে ২৯, নবম শিফট থেকে ৪৯ ও দশম শিফট থেকে ২৭ জন শিক্ষার্থী স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে,শুধুমাত্র ৫ম শিফট থেকে মেধা তালিকার শীর্ষ ১০ জনের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ৫ম শিফট থেকেই মেয়েদের মেধাতালিকার প্রথম দশজনের মধ্যে ৭ জন এবং ছেলেদের মেধা তালিকার প্রথম দশজনের মধ্যে ৫ জন রয়েছে!'

অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন এটা হয়তো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা। কিন্তু না, আজ থেকে ৫-৬ বছর আগে থেকেই এমনটা ঘটে চলেছে এবং বড় বড় জাতীয় পত্রিকায়ও এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। যেমন আজ থেকে ৩ বছর আগে অক্টোবর ৯, ২০১৮ তে 'মানবজমিন' পত্রিকা এই শিফট ভিত্তিক পরীক্ষার বৈষম্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপায়,সেই প্রতিবেদনের শেষ দিকের একটু অংশ হলো-
'(....তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পূর্বে ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্বপালনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, "শিফটভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা বিতর্কিত। কারণ, এখানে কাউকে একই পাল্লায় মাপা যায় না। কেউ হাইকোর্টে রিট করলেই পরীক্ষা আবার নিতে হবে। কিন্তু, আমার কাছে এটা অবাক করা ব্যাপার যে কেউ রিট করে না।")'

একইভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ,পদার্থ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এ এমামুন, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সানোয়ার,কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হক সহ আরো বহু শিক্ষক শিফট পদ্ধতির বৈষম্যের বিষয়ে বহুবার বলে এসেছেন, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি ভেবে দেখবে বলে বলে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

সমস্যাটির সহজ সমাধান: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও শিফট ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। অন্যদিকে গত দুই বছর ধরে বুয়েট তাদের ভর্তি পরীক্ষার প্রিলিমিনারি অংশটি শিফট ভিত্তিতে নিয়েছে। তারা একটি জায়গায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিফট ভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার সাথে ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। তা হলো- তারা এসএসসি-এইচএসসির রেজাল্ট অনুযায়ী প্রতিটি শিফটে সমান সংখ্যক ভালো, মধ্যম ও খারাপ ক্যাটাগরির স্টুডেন্ট রেখেছে এবং ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট প্রতিটি শিফটের জন্য আলাদা আলাদাভাবে দিয়েছে। এর ফলে অনেকাংশেই বৈষম্য হ্রাস পেয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের থেকেও বৈষম্যের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করতে পারে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রকৃত মেধাবীদের খুঁজে পাবে এবং প্রকৃত মেধাবীরাও শুধুমাত্র সিস্টেমের ত্রুটির জন্য তাদের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে না।

লেখা: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত


সর্বশেষ সংবাদ