বিসিএস নামক সোনার হরিণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা

লেখক
লেখক  © ফাইল ছবি
 
‘বিসিএস বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটা বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হোক। বলেছেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। অবশেষে অরিন্দম কহিল বিষাদে। এটা একটা দারুন প্রস্তাব বলে আমার মনে হয়। আমি অনেকদিন ধরে বলছি, রাষ্ট্রিয় সম্পদের এমন অপচয়ের কোনো অর্থ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে আবার মাধ্যমিকের সিলেবাস পড়ার কোনো মানে হয়না।
 
আপনারা যদি বাংলাদেশের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীতে যান, আপনি দেখবেন বেশিরভাগ ছেলেরা মাধ্যমিক-এর বই পড়ছে। খুবই অদ্ভুদ! বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে একটি ছেলে জানেইনা সে কি পড়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো। অনেকে মজা করে ইউনিভার্সিটিগুলোর নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবও করেছেন যেমন: বিসিএস টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট।
 
যারা বিসিএস হতে চান তাদের প্রতি আমার কোনো খেদ নেই। বাংলাদেশের মতো প্রেফারেন্স সোসাইটিতে মানুষ শুধু নিশ্চিত চাকরির জন্য বিসিএস কর্মকর্তা হতে চায় তা নয়। সমাজে চলতে গেলে, মিনিমাম সুবিধাটুকু পেতে গেলে তার একটি পরিচয় লাগে। কে কোন প্রফেশনে যাবে সেটি কেউ নির্ধারণ করেও দিতে পারেনা। কিন্তু একটি পেশার উপর এমন অত্যাচার জাতিরাষ্ট্রের জন্য খুব ক্ষতিকর। আমি তো দুষ্টুমি করে বলি, বিসিএস কোনো মানুষ হলে তার উপর এই অত্যাচারের জন্য সে আত্মহত্যা করতো নিশ্চিত। কিন্তু এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কি। উপায় আছে: এক. দেশের সব সেক্টরের সমান প্রবৃদ্ধি ও সুবিধা নিশ্চিত করা। দুই. বিসিএস সিলেবাস বিশ্ববিদ্যালয় সিলেবাস-এর সাথে সামঞ্জস্য করা। আইবিএ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের মত এমসিকিউ'র সাথে বর্ণনা মূলক ইংরেজি ও বাংলা লেখার ক্ষমতা, সংবিধান ও দেশের ইতিহাস জ্ঞান। যেসব তথ্য গুগল করলে পাওয়া যায় সেইসব তথ্য মুখস্ত করতে গিয়ে তরুণদের না বিশ্লেষণী ক্ষমতা বাড়ছে, না অন্য কিছু হচ্ছে। কয়েক বছর পূর্বে পরিকল্পনা কমিশন থেকে বিদেশি ফান্ড না আসার একটি রিপোর্ট করেছিল ডেইলি স্টার। শুধু মাত্র ঠিকমত ইংরেজি করেসপন্ডেন্ট না হওয়ার কারণে বিদেশি ফান্ড আসেনি। তিন. ফেইসবুকে সংবাদপত্রে যারা বিসিএস হয়েছে তাদের গল্প ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে লেখা কমাতে হবে। বরং কতগুলো তরুণ তাদের জীবনের সবচে মূল্যবান সময় এই সোনার হরিণের পেছনে ছুটে নষ্ট করে হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে তারও পরিসংখ্যান প্রকাশ করা উচিত।
 
আমি অনেককে জানি যারা শেষপর্যন্ত বিসিএস না পেয়ে কতটা মরিয়া হয়েছিলেন-একটি সরকারি চাকরির জন্য। একজনতো ডিরেক্ট বলেছেন ভাই এনবিআরে চাকরি নিচ্ছি দুই বছরের মধ্যে কোটিপতি হতে হবে। কি অদ্ভুত! জীবনের কি নির্মম অপচয় ও দর্শন।
 
আপনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রয়োজনহীন করে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট চালান তবে কেনো গবেষণা হবেনা-এটাই স্বাভাবিক। তার জন্য হা-হুতাশ করে লাভ কি। আক্ষরিক ও প্রায়োগিক অর্থে এখন যে বিসিএস সিলেবাস তার জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা যথেষ্ঠ। অহেতুক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ বছর নষ্ট করানোর দরকার কি? সেনাবাহিনীর মত উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে আইএসএসবির মত একটা পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দিলেই হয়। প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনীর মত ওখানেই পড়বে। রাষ্ট্র অধিক সময় তারুণ্যের শ্রম পাবে আর তরুণরাও আগাম চাকরি পাবে। যারা উচ্চতর পড়াশোনা করতে চান, গবেষক হতে চান, জ্ঞান সৃষ্টি করতে চান, তারাই শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। আপনারা কি বলেন?
 
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও শেভনিং ফেলো, ইউকে