শাবিপ্রবির সংকট যেভাবে সমাধান হতে পারে
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সংকট নিরসন করতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করার পরও সমাধানের কোন আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে না। তাদের এক দফা দাবি ভিসির ‘পদত্যাগ’।
অহিংস আন্দোলনের সর্বশেষ স্তর আমরণ অনশন করছে গত চার দিন থেকে। ইতোমধ্যে এই আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেকের জীবন হুমকির সম্মুখীন।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবি ভিসির বাসার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংগঠনটির ভার্চ্যুয়াল এক সভায় ফরিদ উদ্দিন আহমেদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, শাবিপ্রবিতে যে ঘটনাপ্রবাহ, তাতে যদি উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হয়, তাহলে তাঁরাও পদত্যাগ করতে প্রস্তুত।
দেশের অন্তত ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ওই বৈঠকে যোগ দেন। বর্তমানে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৫০টি। ওই বৈঠকে শাবিপ্রবির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন।
সুতরাং স্পস্ট বোঝা যাচ্ছে দুই পক্ষই অনড় অবস্থানে রয়েছেন। এই অনড় মনোভাব নিয়ে সমাধান সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদের জীবন রক্ষা, শাবির অচল অবস্থা নিরসনে দুই পক্ষকেই কিছুটা ছাড় দিয়ে একটা সমঝোতায় আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।
আরও পড়ুন: অনশনের ১০০ ঘণ্টা পূর্ণ, শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
তিনি যে কাজটি করতে পারেন-
শাবিতে অনাকাঙ্খিত সকল ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তাদেরকে বুকে টেনে নেয়া; শিক্ষার্থীর উপর আর কখনও পুলিশ লেলিয়ে না দেবার ঘোষণা দিতে পারেন। কারণ শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাসী নয় যে পুলিশের বিশেষ বাহিনী ডেকে আনতে হবে; মামলা প্রত্যাহার এবং শিক্ষার্থীদের লেখা পড়া এবং পরীক্ষার ফলাফলে কোন ধরনের ক্ষতিকর উদ্যোগ নেয়া যাবে না।
এক মাসের মধ্যে হল নিয়ে শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবি সমূহ পূরণ করার ঘোষণা; শাবির লেখাপড়ার মান বৃদ্ধিতে শিক্ষার্থীদের মতামত নেয়া; অনশন এবং আন্দোলন করতে গিয়ে যে সকল শিক্ষার্থী শারিরীকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।
আরও পড়ুন: প্রাধ্যক্ষ অপসারণ দাবি থেকে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা
উপচার্যের পক্ষে থেকে এই ঘোষণাগুলো এলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অনশনরতদের জীবন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার স্বার্থে এক দফা দাবি থেকে সরে আসতে পারেন। আমাদের মনে রাখতে হবে ভিসির পদত্যাগ সমাধান নয়। এক ভিসি গেলে আরেক ভিসি আসবেন। সেই ভিসি ফরিদ উদ্দিন-এর থেকে আরো উত্তম হবেন এর নিশ্চয়তা কোথায়?
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট