প্রাথমিক শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদার দাবি রাখেন
- কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম
- প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ০৭:২৮ PM , আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ০৭:২৮ PM
সম্প্রতি প্রাথমিক প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা দেওয়ার রায় হয়েছে হাইকোর্টের আপিল বিভাগে। যা খুবই ইতিবাচক এবং শিক্ষক সমাজের জন্য সুসংবাদই বটে। দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো প্রধান শিক্ষকদের।
অন্যদিকে, দেশে প্রায় তিন লাখেরও বেশি প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক রয়েছেন। যাদের মধ্যে অধিকাংশই স্নাতক-স্নাতোকোত্তর শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন। কিন্তু তাদের দীর্ঘদিনের বেতন বৈষম্য রয়েই গেছে। ১৩তম গ্রেড প্রদানের পরও সেই বৈষম্য নিরসন হয়নি।
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা
তাদের দাবি ছিল প্রধান শিক্ষকদের পরের স্কেলে বেতন পাওয়ার। করোনা মহামারির আগে ঢাকায় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ করতে চাইলেও সেখানে তাদেরকে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। উল্টো বিক্ষোভ-প্রতিবাদে হেনস্থা ও লাঠিপেটার শিকার হয়েছেন শিক্ষকরা।
১১তম গ্রেডে বেতনস্কেল দেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল সহকারি শিক্ষকদের! অথচ সেই আশ্বাস ছিল ফিকে। পাশাপাশি কিছু শিক্ষক নেতার লোভ-লালসাও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। বেতন বৈষম্য নিরসনের পাশাপাশি শিক্ষক হিসেবেই তারা দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা পাওয়ার দাবি রাখেন। তাছাড়া, মানুন কিংবা না মানুন বিদ্যালয়ে ক্লাস ও অন্যান্য কাজকর্মে সহকারি শিক্ষকরাই অনেক বেশি শ্রম দিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন: দুই লাখ করে টাকা পেল ১৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়
নব্বই দশকের গোড়ার দিকে এদেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হয়। বাড়ানো হয় নানা সুযোগ সুবিধা। ভিত্তি যেমন দুর্বল বা সুদৃঢ় না হলে দালানের কাঠামো নড়বড়ে হতে পারে তেমনি জীবনের শুরুতেই প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন সঠিকভাবে না হলে পুরো শিক্ষাজীবনও সুদৃঢ় হবে না। এজন্য প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব সর্বাধিক।
বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে সরকার। দেয়া হচ্ছে পুরো সেট নতুন বই, উপবৃত্তি, মিড-ডে মিল, নানা ধরনের শিক্ষাসামগ্রীসহ অনেক কিছু।
পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষকদের নতুন ও আধুনিক প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে। দক্ষ ও চৌকস কর্মকর্তাও নিয়োগ পেয়েছেন, পাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে। এতকিছুর পরও প্রাথমিক সহকারি শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য কোনভাবেই দূর হচ্ছেনা।
আরও পড়ুন: রাজধানীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যেন গরিবের স্কুল!
সবদেশেই প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাকে শিক্ষার ভিত্তিমূল ধরা হয় যা আমাদের দেশেও ব্যতিক্রম নয়। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সরকারিকরণের কারণে সারাদেশের প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শিক্ষকদের চাকরি সরকারি হয়েছে। এতে চাকরিরত রয়েছেন লক্ষ লক্ষ শিক্ষক। বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোকে ঢালাওভাবে সরকারি করার সাথে শিক্ষাবিদ, গবেষকসহ অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেছেন।
প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়ার রায় হলেও সহকারি শিক্ষকরা থাকছেন তৃতীয়তেই। মূলত: নতুন বেতন স্কেলের মাধ্যমে অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে শিক্ষকদের মাঝে চরম বেতন বৈষম্যের সৃষ্টি করা হয়েছে বলে মনে করেন প্রাথমিক শিক্ষকগণ।
প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষকদের মধ্যে স্কেলের তফাৎ বিস্তর। বেতন বৈষম্য কমানোর জন্য নানা চেষ্টা তদবির করেছেন সহকারী শিক্ষক সংগঠনগুলো। কিন্তু ফলাফল আশানুরূপ নয়। স্কেলে বেতন বৈষম্য কোনভাবেই যুক্তিসঙ্গত হয়নি। যোগ্যতাভিত্তিক স্কেল প্রদান করা হলে এ ধরনের বৈষম্য থাকতো না। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেতন বৈষম্য একটি বড় বিষয়।
শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করার সহকারি শিক্ষকদের চাওয়া অবিলম্বে মেনে নিয়ে তা বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাই। আর কত উপযুক্ত সম্মানী থেকে শিক্ষকদের বঞ্চিত করা হবে?
আরও পড়ুন: নিয়োগে কচ্ছপের গতি, স্কুল-কলেজে দেড় লাখ শিক্ষক সংকট
এদিকে, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাশ রুটিন, বার্ষিক ছুটির তালিকা (যেখানে জাতীয় দিবসগুলোও সংযুক্ত) সহ নানা বিষয়ে অসামাঞ্জস্য বিদ্যমান রয়ে গেছে। এসব সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্য ধরে রাখতে হলে বিজ্ঞানসম্মত ক্লাশ রুটিন প্রণয়ন, শর্তহীন শতভাগ উপবৃত্তি প্রদানের পাশাপাশি শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসন করতে হবে। প্রাথমিক সহকারি শিক্ষকদের ১১ তম গ্রেডে বেতন স্কেল নির্ধারণ ও দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট