শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি ও অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম
কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম  © টিডিসি ফটো

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য সরকার ইউনিক আইডি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা ছাত্রছাত্রীদের কাজে লাগবে পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন ধাপে। ১৮ বছর পর এই ইউনিক আইডি পরিবর্তিত হবে জাতীয় পরিচয়পত্রে। কার্যক্রমটি অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। ইউনিক আইডি করতে শিক্ষার্থীদের চার পৃষ্ঠার একটি তথ্যছক পূরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যেখানে দিতে হবে বিস্তারিত তথ্য।

এই তথ্যছক পূরণ করতে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটির মুখোমুখি হচ্ছে; তা হলো জন্মনিবন্ধন সনদের অনলাইন কপি সংগ্রহ করতে গিয়ে। রক্তের গ্রুপ নির্ণয়েও বিড়ম্বনায় পড়ছে তারা। তাছাড়া, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথ্য জমাদানের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ বিপাকে পড়ছেন। অবশ্য এসব সমস্যার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা পর্যন্ত ইউনিক আইডির সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। পরে নতুন তারিখ দেওয়া হবে।

যখনই কার্যক্রম শুরু হোক না কেন এই কাজগুলো করতেই হবে। বিশেষ করে জন্মনিবন্ধন সনদের অনলাইন কপি সংগ্রহ করতে গিয়ে যে মহাঝামেলায় পড়তে হচ্ছে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। সেদিন ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখলাম মানুষের ভিড় সামাল দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমি নিজেও প্রত্যক্ষদর্শী।

পড়ুন: পলিটেকনিকের ১-৫ জুনের সব পর্বের ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত

অনুরূপভাবে দেশের সব ইউপি/সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভায়ও একই অবস্থা। তার উপর অতিরিক্ত টাকা আদায়, সময়মতো কপি না পাওয়ারও অভিযোগ বিভিন্ন এলাকায়। এছাড়া, অনলাইন কপি পেতে বিভিন্ন কাগজপত্র জোগাড় করতে গিয়ে গলদঘর্ম অভিভাবক, শিক্ষার্থী। সর্বাগ্রে এসব সমস্যার সমাধান জরুরি।

পাশাপাশি স্কুল, কলেজে ইউনিক আইডি পূরণের সময়সীমা নূন্যতম ৬ মাস করা অথবা চলমান রাখার জোর দাবি জানিয়েছেন অনেক অভিভাবক। কারণ, গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটি তাড়াহুড়ো করে করতে গিয়ে নানাধরণের তথ্যগত ত্রুটি থেকে রক্ষা পাওয়া মুশকিল হবে।

দীর্ঘ সময় দিয়ে ইউনিক আইডির কাজ সম্পন্ন হলে কমে আসবে ত্রুটির পরিমাণ। স্বস্তি পাবে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ দায়িত্বশীল সব লোকজন। চাপ না থাকলে ঠান্ডা মাথায় সম্পন্ন করা যাবে সব ধরণের কার্যক্রম। তথ্যছক পূরণে যে সব কাগজপত্র না হলেই নয় কেবল সেসব জোগাড় করার নির্দেশনা দেওয়াই যুক্তিযুক্ত হবে।

কারণ, অনেকের কাছে সব ধরণের তথ্য নাও থাকতে পারে। বিশেষ করে মফস্বল এলাকায় এ সমস্যাটি হতে পারে। অার্থিক বা অন্য কোন কারণে কেউ যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। মানুষকে টেনশনে রাখার কোন সুযোগ থাকা উচিত বলে মনে করিনা।

মূলত: সাধারণ মানুষ/অভিভাবক যেন কোন ধরণের হয়রানি ও অনর্থক বিড়ম্বনার শিকার না হন সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছি। মাঠ পর্যায়ে কীভাবে কার্যক্রম সম্পন্ন করলে সুফল মিলবে, হয়রানির সম্মূখীন হবেনা কোন শিক্ষার্থী/অভিভাবক সে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। বিষয়টাতো বললাম আর হয়ে গেলো এরকম নয়।

তাই আমি যেটা মনে করি তা হলো প্রয়োজনে বিস্তর আলাপ-আলোচনার করে, অভিভাবকদেরও মতামত নেওয়ার মাধ্যমে সুদীর্ঘ সময় দিয়ে ইউনিক আইডির কার্যক্রম সুসম্পন্ন করাটাই বেটার।

পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অফিস এবং স্থানীয় পরিষদের (ইউপি/কর্পোরেশন) কার্যালয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা যেন তাদের কাজকর্ম করতে গিয়ে কোন প্রকার বাধার সম্মূখীন না হন সে ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে কর্তৃপক্ষকে। আশা করি কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে স্কুল, কলেজ এ শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডির কার্যক্রম সফলভাবে শেষ হবে।

লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট


সর্বশেষ সংবাদ