স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম
কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম  © ফাইল ছবি

দীর্ঘসময় ধরে মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন-ইসরাইল সমস্যা ঝিঁইয়ে আছে। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা থাকলেও কার্যত তা হয়নি। আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ইসরাইল আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে এবং ফিলিস্তিনের বেশিরভাগ জায়গা নিজেদের দখলে নেয়। সেই থেকে নানা রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ ও সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীগুলো তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে ইসরাইল নামক অনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রটিকে টিকিয়ে রেখেছে। জাতিসংঘের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে ইসরাইল ফিলিস্তিনের নিরীহ মানুষের উপর স্টীম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে গত এক সপ্তাহ ধরে ইসরাইলী হামলায় গাজায় ৬০ শিশুসহ ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের ঘরবাড়ি। যদিও চাপের মুখে দীর্ঘ ১১ দিন পর হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে ইসরাইল। তবে, বিশ্বের পরাশক্তিগুলো ইসরাইলের পক্ষাবলম্বন করার কারণে সমস্যা না কমে বরং বেড়েই চলেছে। অবশ্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো ইসরাইলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরোধীতা করে আসছে। সবসময় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন, সংহতি ও তাদের দাবির স্বপক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং এখনো তা অব্যাহত আছে।

আরও দেখুন: আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্টে ইসরায়েলি জবরদখলের নিন্দা প্রস্তাব পাস

ফিলিস্তিন এমন একটি ভূখন্ড যেখানে প্রতিনিয়ত মৃত্যুভয় তারা করছে সেখানকার মানুষকে। যে কোন মুহূর্তে ইসরাইলী হামলায় তছনছ হতে পারে বাড়িঘর, প্রাণ কেড়ে নিতে পারে ইসরাইলী ট্যাংকের গোলা। এসব কিছুকে নিত্যসঙ্গী করে ফিলিস্তিনিরা জীবনযাপন করে। নিজেদের ভূখন্ডকে অত্যাচারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে সর্বক্ষণ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয় তাদের। হারানো গৌরব ফিরে পেতে যুগ যুগ ধরে তারা সংগ্রাম করে যাচ্ছে ইহুদি রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে। থেমে নেই ওদের কঠিন এই পথচলা।

বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থাগুলো ইসরাইলের আগ্রাসী অবস্থানের বিরোধীতা না করে বিভিন্ন সময় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের আত্মরক্ষামূলক কর্মকাণ্ডকে দোষারোপ করতে চেষ্টা করে। অথচ শতশত ফিলিস্তিনি হত্যার ব্যাপারে তারা নিশ্চুপ থাকে। জাতিসংঘে ইসরাইলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগ নিলে তাতে ভেটো দেয় প্রভাবশালী সেসব দেশের অনেকগুলোই। যা একেবারেই গ্রহনযোগ্য নয়।

দীর্ঘ সময়ের আন্দোলন, সংগ্রাম প্রমাণ করে ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। ফিলিস্তিনি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন এবং স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে এছাড়া কোন উপায়ও নেই। এমনিতেই ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘদিনের লড়াই ও প্রচেষ্টা দেখলে মনে হয় একদিন তারা তাদের জন্য পৃথক একটি ভূমি, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়বে।

ফিলিস্তিনি নয় শুধু সারা বিশ্বের মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস। এই মসজিদটিকে ইসরায়েল কব্জা করে রেখেছে। সেখানে রমজানের পবিত্র লায়লাতুল কদরে নামাজ পড়তে গেলে ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি সেনারা অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে হামলা করে। ফলে বহু মুসল্লি আহত হয়। সংঘাতের সূচনা করে ইসরায়েল। এরপর থেকে ইসরাইলী সেনাদের একের পর এক অভিযানে নিরীহ ফিলিস্তিনি মানুষজন নিহত হয়।

ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সঙ্গত অধিকারকে পাশ কাটিয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্র কর্তৃক ইসরাইলকে সমর্থন জানানো একধরণের নিয়মে পরিণত হয়েছে। সংকট সমাধানে জাতিসংঘের যে কোন উদ্যোগকে তারা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন সময় চুক্তির নাম করে ফিলিস্তিনিদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। দীর্ঘ হয়েছে লাশের সারি। জাতিসংঘের পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোর সংস্থা ওআইসির দায়সারা ভূমিকাও ক্ষুব্ধ করেছে বিশ্বের মুসলিম সমাজকে। এসব কারণে আর কত নিরীহ ফিলিস্তিনিকে প্রাণ দিতে হয় তা কেউ জানেনা। 

সবকিছু পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই হবে এ অঞ্চলের শান্তির জন্য একমাত্র দাওয়াই। নয়তো সংঘাত, সংঘর্ষের ইতি টানা কখনোই সম্ভব হবেনা। এ বিষয়টি পরাশক্তিগুলো এবং ইসরাইলীরা যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে ততই মঙ্গল। আমরা চাই, দ্রুত একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হোক। এ দাবি বিশ্বের মুসলিম ও মানবতাবাদি সব মানুষের।

★লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

 


সর্বশেষ সংবাদ