বাংলা সিনেমা: পুলিশের ভাবমূর্তি ও সামাজিক বাস্তবতা

‘নবাব এলএলবি’ সিনেমার কলাকূশলী ও লেখক মুনজুরুল করিম
‘নবাব এলএলবি’ সিনেমার কলাকূশলী ও লেখক মুনজুরুল করিম  © সংগৃহীত

আপনাদের অনেকেই সহযোগিতায় ‘নবাব এলএলবি’ সিনেমার ডায়ালোগটা শোনা বা বিশেষ সিকোয়েন্স দেখার সুযোগ হলো। সবাইকে ধন্যবাদ। এসব ডায়ালোগ বা দৃশ্যের কারণে সিনেমার পরিচালক ও অভিনেতাকে আটক করার বিরোধিতা করবো কিনা বুঝতে পারছি না। তবে, দৃশ্যটা দেখার সময় আমার কাছে মনে হয়েছে- মানুষ যদি সপরিবারে এই সিনেমা দেখতে যায় তাহলে কি হবে? অপরাধের শিকার হওয়া মানুষ যদি এমন দৃশ্যকে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে নেয়, তাহলে তারা বিচার চাইতে থানা পর্যন্ত যাওয়ার সাহস করবে কিনা?

ধরা যাক, মুক্ত শিল্পচর্চার মাধ্যম হিসেবে সিনেমায় এমন দৃশ্যের অবতারণা করতে পারেন সিনেমার পরিচালক। কিন্তু আমাদের সামাজিক কাঠামো বিবেচনা করাও তো জরুরি। একটা সিনেমাকে সফল হতে হলে যদি এমন দৃশ্য রাখতেই হয়, তাহলে ইরানি সিনেমা বিশ্বব্যাপী সফল হতো না। ওইসব দৃশ্য দেখে মনে হলো, আমাদের সিনেমা আবার কাটপিসের যুগে চলে যাচ্ছে। সে সময় অশ্লীল ভিডিওচিত্র দেখানো হতো। আর কথা দিয়ে সে কাজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আরেকটা কাজ করা যেতে পারতো, এই বিশেষ সিকোয়েন্স থাকার কারণে, সিনেমাটাকে ১৮+ রেটেড সিনেমা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারতেন এর পরিচালক।

আরেক দিকে, পাবলিক রিএ্যাকশন হচ্ছে- থানাগুলোতে আসলেই পুলিশ এমন আচরণ করে। এ কারণেই এই সমাজে পুলিশ বিদ্বেষী সেন্টিমেন্ট তৈরি হয়েছে। সুতরাং পুলিশের কিছু পেলেই আমরা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ি। গত ১ বছর ধরে, পাবলিসিটি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করছি। পুলিশের সাথেও কাজ করেছি এবং করছি। পুলিশ কর্তৃপক্ষ তাদের সেবার মান বাড়ানোর জন্য এবং ইমেজ বা ভাবমূর্তি পরিবর্তন করার জন্য চেষ্টার কোন কমতি রাখছে না। কখনো ‘মানবিক পুলিশ’, কখনো ‘পেশাদার পুলিশ’, কখনো ‘আধুনিক বা স্মার্ট পুলিশ’ এর অনেক ঘটনাকেই প্রচারের আলোয় নিয়ে আসা হচ্ছে। এটা হয়তো একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

কিন্তু আমার কাছে এর মধ্যেও একটা বিরাট গ্যাপ আছে বলে মনে হয়েছে। কারণ, হেডকোয়ার্টারকেন্দ্রিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পুলিশকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, মাঠ পর্যায়ের পুলিশের সাথে সেই চাওয়ার হাজার হাজার মাইল দূরত্ব আছে। মানুষকে সেবার প্রদান করার, মানুষের আস্থা তৈরি করার সেই মূলক্ষেত্র থানা বা মাঠ পর্যায়ে। তাই প্রচারণা যাই হোক বা ভালো কাজ যাই হোক, থানায় গিয়ে মানুষ এখনো সম্পূর্ণভাবে তার প্রতিফলন পাচ্ছে না।

এছাড়া থানাকেন্দ্রিক দালাল সিন্ডিকেট একটা বড় বিষয়। এটাও পুলিশের কাছ থেকে সরাসরি সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে একটা বড় প্রতিবন্ধকতা। এই অভিজ্ঞতা থেকেই আমার কাছে মনে হয়েছে, পুলিশের ভাবমূর্তিতে গুণগত মানের পরিবর্তন তখনই আসবে যখন থানা বা থানার কর্মকাণ্ডকে বেশি করে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসা যাবে।

লেখক: সত্ত্বাধিকারী, এমকে কমিউনিকেশনস অ্যান্ড সল্যুশনস


সর্বশেষ সংবাদ