ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশের ঈদ: নতুন যুগের উৎসবের রঙ
- মির্জা নাদিম
- প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৩ PM , আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৩ PM

বাংলাদেশের ঈদ উদযাপন এবার যেন অন্যরকম এক মাত্রা ছুঁয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় ধরে চাপা আনন্দ, সীমাবদ্ধ উদযাপন এবং নিষ্প্রাণ আনুষ্ঠানিকতার পরিবর্তে এবার ঈদে দেখা গেল বর্ণিল উৎসব, প্রাণবন্ত মিছিল আর ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ। নতুন প্রজন্মের জন্য এটি ছিল এক নতুন অভিজ্ঞতা, যেখানে ঈদ কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং সামগ্রিক সামাজিক ঐক্যের প্রতিচিত্র হয়ে উঠেছে।
ঈদ মানেই খুশির বার্তা, আর সেই খুশিকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে ঢাকার রাজপথজুড়ে আয়োজিত ঈদ মিছিল। ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাণিজ্যমেলার পুরোনো মাঠে ঈদের জামাত শেষে সকাল ৯টার দিকে শুরু হয় এক অভূতপূর্ব ঈদ আনন্দ মিছিল। এই মিছিলে অংশ নেয় ব্যান্ড পার্টির বাদ্যযন্ত্র, সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত মানুষ। মিছিলটি চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে দিয়ে খামারবাড়ি মোড় পার হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় গিয়ে শেষ হয়।
এই মিছিল কেবল আনন্দের নয়, এটি ছিল এক ঐতিহাসিক পুনরুজ্জীবন। সুলতানি ও মোঘল আমলে যে ঈদ আনন্দ রাজপথে ছড়িয়ে পড়ত, এবার তা ফিরে এলো নতুন রূপে
ঈদ মিছিলে অংশ নেওয়া মানুষদের হাতে ছিল বিভিন্ন সামাজিক ও ঐক্যের বার্তা তুলে ধরা প্ল্যাকার্ড। ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে সবাই একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করেছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হারিয়ে যেতে বসেছিল। শুধু রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রামেও ছোট-বড় ঈদ মিছিলের আয়োজন করা হয়, যা নতুন বাংলাদেশের উদযাপনের অনন্য প্রতিচিত্র হয়ে উঠেছে।
নতুন প্রজন্মের অনেকেই এর আগে কখনো ঈদকে এমনভাবে উদযাপন করতে দেখেনি। আগে ঈদের আনন্দ সীমাবদ্ধ ছিল ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পরিসরে, কিন্তু এবার পুরো দেশ যেন একত্রে ঈদ উদযাপনের আনন্দ ভাগ করে নিয়েছে।
ঈদের দিন ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় সুলতানি ও মোঘল আমলের আদলে সজ্জিত ঈদ মিছিল। নতুন পোশাক, ঐতিহ্যবাহী সাজসজ্জা এবং ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নতুন প্রজন্মের কাছে ঈদের নতুন ব্যাখ্যা হাজির করেছে।
এবারের ঈদে ঈদ সালামির ব্যাপারটিও ছিল ব্যতিক্রমী। যেখানে সাধারণত ছোটদের সালামি দেওয়ার সংস্কৃতি প্রচলিত, এবার তা ছড়িয়ে গেছে বড়দের মধ্যেও। ঈদ সালামি নিয়ে মানুষের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো, এমনকি রাজনৈতিক নেতারাও এ বিষয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। কেউ কেউ ঈদ সালামি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, আবার কেউ কেউ ঈদ সালামি চেয়ে মজার পোস্ট করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঈদ সালামি নিয়ে এমন রসিকতা ও বিনিময় ঈদের আনন্দে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ঈদ মিছিল ছাড়াও ঢাকার চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ঈদ মেলাও এবারের ঈদকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। সেখানে প্রায় ২০০টি স্টল বসে, যেখানে ঐতিহ্যবাহী খাবার, পোশাক ও বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল। শিশুদের জন্য নাগরদোলা ও অন্যান্য খেলার আয়োজন করা হয়, যা পরিবারগুলোর ঈদ আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
এই ঈদ কেবল একটি উৎসব নয়, এটি ছিল বাংলাদেশের নতুন যুগের সূচনা। যেখানে মানুষ নিঃশঙ্কচিত্তে, উৎসবমুখর পরিবেশে, সম্প্রীতির আবহে ঈদ উদযাপন করেছে। ফ্যাসিবাদমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশে ঈদ ফিরে পেয়েছে তার প্রকৃত রূপ—সবার জন্য খুশি, আনন্দ ও ঐক্যের প্রতীক।
লেখক: শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী