যোগ্য মানুষদের নিয়ে পাঠ্যবই লিখতে হবে
- অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
- প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১:০৩ AM , আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১:০৩ AM

এইবারের সদ্য প্রিন্টেড নবম ও দশম শ্রেণীর পদার্থবিজ্ঞানের বইটি হাতে পেলাম। এটি নতুন কোন বই না। নতুন শিক্ষাক্রমের আগের যেই বইটি লেখা ছিল সেটিই তবে কিছু বিশেষজ্ঞ পদার্থবিদদের দ্বারা যতটা পারা সম্ভব ততটা ভুল সংশোধন করা হয়েছে আর সাথে খুবই সামান্য ভাষাগত পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এইবারের বই আর নতুন শিক্ষাক্রমের বই বা এর আগের ছাপানো বই হাতে নিলেই প্রথম যেই পার্থক্যটি সবচেয়ে আগে চোখে পড়বে সেটি হলো কাগজ। এই কথাটি আমাদের প্রথম মিটিং-এই বলা হয়েছিল যে আমাদের ছেলেমেয়েদের হাতে যেই বই যাবে সেটি যেন নিউজ প্রিন্ট কাগজে ছাপানো না হয়। সেটি অবশ্যই হতে হবে অফসেট পেপারে। যদিও কাগজ আগের চেয়ে অনেক ভালো কিন্তু এখনো সেরাটি দেয়নি। বোঝা যায় এখনো কাগজ সর্বরাহকারীদের মাফিয়া তন্ত্র পুরোপুরি ভেঙ্গে যায়নি। দ্বিতীয় আরেকটি পার্থক্য যেটি চোখে পড়বে সেটি হলো টেক্সট বই নির্দিষ্ট কোন রাজনৈতিক দলের লিফলেটের বা প্রচারপত্র না। আমি ভেবে পাই না একটি রাষ্ট্র তার ছোট ছোট বাচ্চাদের বিনামূল্যে টেক্সট বই দিবে সেখানেও রাজনৈতিক মতবাদ চাপিয়ে দিতে হবে। বিশ্বের কোন দেশে এমন হয়? অথচ কোন বুদ্ধিজীবী এর প্রতিবাদ কখনো করেনি। এখন আমাদের ছেলেমেয়েরা মুক্ত হয়েছে।
আরও যেই পার্থক্য লক্ষণীয় সেটি হলো বিষয়ের ভলিউম। নতুন শিক্ষাক্রমে পদার্থ বিজ্ঞান বইটি হাতে নিলে মনে হতো হঠাৎ হঠাৎ কিছু বিষয় খাপছাড়াভাবে ঢুকে গেছে। এর কোন লজিক্যাল প্রবাহ ছিল না। থাকবে কিভাবে? পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান নিয়ে একটি বই হয়েছিল। ফলে কনটেন্ট অনেক কমাতে হয়েছিল। যারা লিখেছিলেন তারা হয়ত চেষ্টা করেছিলেন স্বল্প পরিসরে কিভাবে সর্বোচ্চ কনটেন্ট দেওয়া কভার করা যায়। এইবারের বইটি হাতে নিলে মনে হবে যেন একটা সম্পূর্ণ পদার্থবিজ্ঞানের বই।
এইবার যারা এই বইয়ে কাজ করেছে তাদের নাম কিন্তু বইয়ে নাই। এই বইয়ের মূল লেখকদের নামই রাখা হয়েছে এবং এইটাই যুক্তিসঙ্গত। কারণ নতুন এই বইতো নতুন করে লেখা হয়নি। তথাপি ভেস্টেড ইন্টারেস্টেড গ্রুপ এইটা নিয়ে কত হৈচৈই না করলো। একদম খামাখা। অন্যান্য বিষয়ের বইয়েও কিছু খামাখা কনটেন্ট বাদ দিয়ে অতি সামান্য কিছু পরিবর্তন ছাড়া তেমন কিছুই করা হয়নি এইবার। আর করার সময়ও ছিল না। টেক্সট বই লেখাতো আর সহজ কথা না।
কিন্তু এটাই শেষ না। আরও ভাল বই লেখার সুযোগ আছে। সময় নিয়ে যোগ্য মানুষদের নিয়ে লিখতে হবে।
লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)