কীভাবে একজন বিশ্বমানের উপাচার্য নির্বাচিত করা যাবে?

ড. মাঈন উদ্দিন খন্দকার
ড. মাঈন উদ্দিন খন্দকার  © টিডিসি ফটো

আমার গত লেখার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। মূলত, প্রশ্নকর্তা জানতে চেয়েছেন কীভাবে একজন বিশ্বমানের  উপাচার্য নির্বাচিত করা হবে। আমার মতে, ভিসি নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিম্নে উল্লিখিত স্বচ্ছ প্রক্রিয়াসমূহ প্রয়োগ করা যেতে পারে। 

১. সার্চ কমিটি গঠন: দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশিষ্ট সদস্যদের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা। এই কমিটিতে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সের সিনিয়র ফেলোদের অন্তর্ভুক্ত করা  যেতে পারে। 

২. এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট আমন্ত্রণ: সার্চ কমিটি যোগ্য ব্যক্তিদের ভিসি পদের জন্য আগ্রহের অভিব্যক্তি জমা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাবে। 

৩. মূল্যায়নের মানদণ্ড: প্রার্থীদের মূল্যায়ন একটি বিস্তৃত মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত, যেমন একাডেমিক দক্ষতা, নেতৃত্বের গুণাবলি, গবেষণায় অবদান এবং সামাজিক কন্ট্রিবিউশন।

i. একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ব: প্রার্থীর ভালো  একাডেমিক রেকর্ড থাকতে হবে, যেমন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি থাকতে হবে । 

ii. নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা: একাডেমিক বা প্রশাসনিক ভূমিকায় নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লিডারশিপ কোয়ালিটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিম্নে উল্লিখিত অর্জনসমূহ বিবেচনা করা  যেতে পারে। যেমন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সোসাইটির ফেলো অথবা সদস্য পদে থাকা, প্রেস্টিজিয়াস জার্নালের এডিটর পদে থাকা, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট সুপারভিশন এর রেকর্ড থাকা, আন্তর্জাতিক মানের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এবং কনফারেন্স আয়োজনের এবং পার্টিসিপেশনের অভিজ্ঞতা থাকা, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কনসালটেন্সি এবং ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা, রিসার্চ কোলাবরেশন এবং রিসার্চ গ্রান্ট অর্জনের এর অভিজ্ঞতা থাকা, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কন্ট্রিবিউশনের আলোকে পুরস্কার বা সম্মাননা প্রাপ্ত হওয়া, ইত্যাদি। 

 iii. নিজ দেশের বিভিন্ন সামাজিক কাজে তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের রেকর্ড থাকতে হবে। 

iv. গবেষণায় অবদান:  Web of Science এবং  Scopus জার্নালে ভালো মানের এবং সাম্প্রতিক সময়ের গবেষণার রেকর্ড থাকা। এক্ষেত্রে  h-index এবং সাইটেশন সংখ্যা  প্রার্থীর গবেষণার একটি মোটামুটি ধারণা প্রদান করে। তবে, Field Weighted Citation Impact (FWCI) নামক এই ইনডেক্স টি প্রার্থীর রিসার্চ কন্ট্রিবিউশনের প্রকৃত ধারণা প্রদান করে থাকে। সেজন্যে, গবেষণা অবদানের একটি ন্যায্য এবং বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে, কমিটির উচিত হবে FWCI বিবেচনা করা। 

মূলত পাবলিকেশন সংখ্যা এবং সাইটেশন  বিভিন্ন রিসার্চ ডিসিপ্লিন এবং রিসার্চ টপিকের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। যেমন, সাইন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ফিল্ডে পাবলিকেশন এবং সাইটেশন বেশি  হয়ে থাকে, কমার্স এবং আর্টসের তুলনায়। এক্ষেত্রে,  FWCI এ ধরনের variation  কে নরমালাইজ করে ডেটা প্রদান করে। এজন্য, মেট্রিকটি বিভিন্ন গবেষণা ফিল্ডে গবেষণার মানের সঠিক মূল্যায়ন প্রদান করে থাকে। স্কোপাস ডেটাবেসে  'Analyze author output' ব্যবহার করে FWCI সহজেই গণনা করা যেতে পারে। বুঝার সুবিধার্থে স্ক্রিনশটে (আমার রিসার্চ প্রোফাইলের) বিভিন্ন ক্যাটাগরির FWCI দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে  FWCI এর মান ১ থেকে বেশি হলে এটা বেস্ট কোয়ালিটি নির্দেশ করে। 

সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া
কমিটির উচিত প্রতিটি প্রার্থীর আবেদন কেয়ারফুললি পর্যালোচনা করা, সাক্ষাৎকার নেওয়া এবং উপরে বর্ণিত মানদণ্ডের বিপরীতে তাদের যোগ্যতা মূল্যায়ন করা। প্রার্থীর সামগ্রিক উপযুক্ততা বিবেচনায় নিয়ে কমিটির সদস্যদের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

উপরে বর্ণিত প্রক্রিয়াসমূহ আমার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত। এতে অনেক কিছু সংযোজন, বিয়োজন করা যাবে। আমার মনে হয়, এই ব্যাপক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বমানের উপাচার্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে যিনি প্রতিষ্ঠানটিকে একাডেমিক উৎকর্ষ, উদ্ভাবন এবং সামাজিক প্রভাবের দিকে নিয়ে যাবেন।

লেখক: অধ্যাপক, অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স এবং রেডিয়েশন টেকনোলজিস 
সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence