ড. ইউনূস শেষ আশা, তিনি ব্যর্থ হলে দেশ সমৃদ্ধ সভ্য হবে না

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন  © ফাইল ছবি

যে শিক্ষার্থীরা এত বড় একটা আন্দলোন ঘটিয়ে ফেলল, তাদের প্রচলিত ধারার রাজনীতি করতে হয়েছিল? এ শিক্ষার্থীরা আমাকে মনে করিয়ে দেয়- আমেরিকার কলাম্বিয়া, এমআইটি, হার্ভার্ডসহ সেখানকার অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়কে যেখানকার ছাত্ররা মাত্র কদিন আগেই প্যালেস্টাইনে ফিলিস্তিনিদের ওপর ঘটে যাওয়া অবর্ণনীয় হত্যা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিল। তাদের কি কোন দলের অঙ্গসংগঠনের অংশ হয়ে রাজনীতি করতে হয়েছিল? 

এখন যে আমাদের পুলিশরা কর্মবিরতিতে আছে, সেই vulnerable সময়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা যে এলাকা পাহারা দিচ্ছে, ট্রাফিক পুলিশের কাজ করে সড়ককে সুশৃঙ্খল করার দায়িত্ব পালন করছে, সেটা দেখেছেন? কি সুন্দর যে লাগছে দেখে। এসব সুন্দর কাজের জন্য কি তাদেরকে ছাত্র রাজনীতি করতে হয়েছে? বরং প্রচলিত ছাত্র রাজনীতি করলে এদেরকে আজ এমন ভালো কাজে দেখতেন না। দেখতেন উল্টো কাজ করতে।

গতকাল আমার দুই কন্যা দল বেঁধে গিয়েছিল দেয়ালে ছবি আঁকতে। কন্যারা আবু সাঈদের ছবি এঁকেছে, রং করেছে। শত শত ছেলেমেয়ে এখন রাস্তায় ট্রাফিক মেইনটেইন করছে, দেয়ালে ছবি আঁকছে। এটাকে বলে কমিউনিটি এংগেজমেন্ট। রাষ্ট্র একটা কোঅপারেটিভ ফেনোমেনা যেখানে সকল মানুষকে একটি ঐকতানে কাজ করতে হয় ঠিক যেমন army ant! এরা অনেকের ভালোর তরে নিজের জীবন দিতে পারে, ঠিক যেমন আবু সাঈদ। এসব কাজ করার জন্য ছাত্র রাজনীতি, বই পুস্তকে দিয়ে কারিকুলামের অংশও বানানো লাগে না। 

এগুলো হলো এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজ, যেটা আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমের কারিগররা বুঝতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা কোনও একটি দল বা মতের হতে পারে না। তারা পুরো স্পেকট্রাম দেখবে। যখনই কেউ অন্যায়ের শিকার হবে, তারা নির্যাতিতের জাতি ধর্ম বর্ণ না দেখে নির্যাতকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, প্রতিবাদ করবে। প্রচলিত ধারার ছাত্র রাজনীতি করলে তারা ক্ষুদ্রতা শিখে খুবই ক্ষুদ্র মন নিয়ে বড় হয় এবং অনেকটা এক চোখা হয়ে বড় হয়। যে চোখটা অন্ধ হয়ে যায় সেই চোখ আর কখনো খোলে না। এরাই দেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। এইটা আমাদের ভালোভাবে অনুধাবন করতে হবে। 

আরো পড়ুন: মানবিক সরকার থাকলে কোটা সমস্যা বিনা রক্তপাতে সমাধান করা যেত

শুধু শিক্ষার্থী না। শিক্ষকদেরও সরাসরি রাজনীতির অংশ হওয়া উচিত না। যা ছাত্রদের জন্য বর্জনীয় তাহা শিক্ষকদের জন্য বর্জনীয়। আশা করি, এবারের সুযোগ আমরা হাতছাড়া করব না। সুযোগ বলছি এই জন্য, প্রফেসর ইউনূসকে নিয়ে দেশের এবং বিশ্ববাসীর একটা আস্থা আছে। ২০০৭ সালেই যদি তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করতেন, আজকে হয়তো আমরা অন্যরকম বাংলাদেশের চেহারা দেখতাম। আমাদেরকে একটা মিথ্যা উন্নয়নের বয়ান শুনতে হতো না। 

মিথ্যা উন্নয়নের আড়ালে দেশটাকে দুর্নীতির আখড়া বানিয়ে ফেলা হয়েছে। গত পরশু এক পত্রিকায় রিপোর্ট দেখলাম, যেখানে লিখেছে সব মেগা প্রকল্পের ব্যয় বিশ্বে সর্বোচ্চ। গত সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর বঙ্গবন্ধুর ইমেজের আড়ালে দেশটাকে কেবল চুষে খেয়ে পঙ্গু বানিয়ে রেখে গেছে। এখন চারিদিকে একটা আশার আলোর আভা দেখতে পাচ্ছি। প্রফেসর ইউনূস আমাদের শেষ আশা। তিনি যদি ব্যর্থ হন বুঝতে হবে, আমাদের জীবদ্দশায় এই দেশকে সত্যিকারের উন্নত সমৃদ্ধ শিক্ষিত সভ্য দেশ হিসাবে দেখা হবে না।

লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ