বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পদত্যাগের হিড়িক, সমাধানের সূত্রপাত
- মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন
- প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৪, ০২:৩৪ PM , আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২৪, ০৩:১৩ PM
নতুন বাংলাদেশে নতুন সূর্য আলো ছড়াতে শুরু করেছে। উপদেষ্টাগণ দায়িত্ব নিয়েছেন। রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে নেমে পরেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে এ সংস্কারের ছোঁয়া লাগবে কি দেশের উচ্চ শিক্ষায়?
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি মহোদয়গণ পদত্যাগ করেছেন। দু-একদিনের মধ্যে হয়ত আরো কয়েকজন পদত্যাগ করবেন। রাজনৈতিক বলয়ে নিয়োগ পাওয়া 'দলকানা' এসব অভিভাবকগণ নিজেদের প্রয়োজনীয়তা হারিয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের চোখের দিকে তাকানোর সাহস নেই তাদের। ফলে পদত্যাগ না করলে পদচ্যুতিই তাদের ভাগ্যের পরিণতি। এসব কারণে খুবই কম সময়ের মধ্যে দেশের উচ্চ শিক্ষা একটি বড় সংকটের মুখে পরবে।
সংকট থেকেই সমাধান আসে। আমরা উচ্চ শিক্ষার সংস্কারের কাজ এখান থেকেই শুরু করতে পারি। মনে রাখতে হবে, মাথা ঠিক করতে পারলে নিচের দিকেও ঠিক করা যাবে। আমরা যেভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে পারি:
এক) যে-সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয়গণ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন তাদের ওই পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য একজন শিক্ষককে (নীল-সাদা-গোলাপীর বাইরে) ভারপ্রাপ্ত ভিসির দায়িত্ব দিন।। অতঃপর..
দুই) খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সার্চ কমিটি গঠন করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অধ্যাপকদের জন্য ভিসি পদ উন্মুক্ত করে দিন। আগ্রহীদের অনলাইনে অবেদন করতে বলুন (৮কপি ফটোকপির প্যারা থেকে বাঁচান)।
তিন) গবেষণার অভিজ্ঞতা (পিয়ার-রিভিউ জার্নাল আর্টিকেল, সাইটেশন, এইচ-ইনডেক্স), জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফান্ডে গবেষণার দক্ষতা, রিসার্চ ও টিচিং ফিলোসফি, লিডারশিপ কোয়ালিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে প্রস্তাবিত অ্যাকশন প্ল্যান জমা দিতে বলুন।
চার) সার্চ কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই শেষে সেরা তিন ক্যান্ডিডেট কে ক্যাম্পাস ভিজিটে আমন্ত্রণ জানান। যেখানে তারা সার্চ কমিটি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সামনে তাদের গবেষণা, কাজের দক্ষতা, নেতৃত্বের কৌশল, এবং প্রস্তাবিত অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে প্রেজেন্টেশন দিবেন। উন্মুক্ত প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা যাচাই করতে পারবেন তাদের আগামীর অভিভাবক। আলাপ আলোচনা করে বুঝতে পারবেন কলিগ হিসেবে কেমন হবেন।
উন্নত দেশগুলো তাদের ভিসি/প্রেসিডেন্ট এভাবেই নিয়োগ দেয়। তারা ক্যান্ডিডেটের যোগ্যতা দিয়েই তাকে বিচার করে। প্রার্থীর জেন্ডার, ধর্মীয় পরিচয়, রাজনৈতিক মতাদর্শ, পোশাক, কিংবা জন্মস্থান এখানে প্রভাব ফেলতে পারেনা। তারা সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে। যাতে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্ডিডেট সমান সুযোগ পায়। উল্লেখ্য, তারা শুধু নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরই ভিসি বানায় না। বরং চায় অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন কেউ আসুন।
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা করার সময় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষক রাজনীতিও দেখেছি। ভিসি নিয়োগের দৌড়ে এক একজন প্রার্থীর প্রধান যোগ্যতা হয়ে উঠে রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য, ছাত্র নেতার চামচামি, আমলাদের পদলেহন, এবং অভ্যন্তরীণ গ্রুপিংএ নিজের লোক (মাই ম্যান) ঠিক করা (যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য অনেকগুলো সমস্যারও মূল কারণ) যেখানে তার অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা, গবেষণায় পারদর্শিতা, ফান্ড সংগ্রহে দক্ষতা, নেতৃত্বের গুণাবলি কিংবা টিম প্লেয়ার রোল কোন ভূমিকা রাখেনা। ফলে আমরা আমরা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যোগ্য নেতৃত্ব পাইনা।
শিক্ষা নিয়ে পড়াশোনা ও উচ্চ শিক্ষা নিয়ে গবেষণা (পিএইচডি) করার সুবাদে, এই বিষয়গুলো আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ায় অনেক বাংলাদেশি গুণী অধ্যাপক কর্মরত আছেন। তারা হয়ত আরো ভালো মতামত দিতে পারবেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পরিবর্তনের শুরুটা করা নিয়ে। আসলে কে পরিবর্তন শুরু করবেন?
রাষ্ট্র মেরামতের যে কাজ শুরু হয়েছে, সেখানে হয়ত উচ্চ শিক্ষার মেরামতও হবে। তো এখান থেকেই শুরু হোক এই সংস্কার। রাষ্ট্রের মত বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব অপরিহার্য।
লেখক: মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন, ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ডাকোটা, যুক্তরাষ্ট্র।