৭১ বছরে

ভালোবাসার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর রাজশাহীতে স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের পর ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাস হয়। ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই অধ্যাপক ইতরাত হোসেন জুবেরীকে উপাচার্য নিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে। ১৬১ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৮ হাজারের অধিক। মতিহারের সবুজ চত্বর বেষ্টিত ও উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আজ ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবাবেগ তুলে ধরেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মারুফ হোসেন মিশন।

‘নীল-সাদা বাসের স্বপ্ন ছোঁয়ার প্রতিযোগিতায় আমি সার্থক’
হাজারো শিক্ষার্থীর প্রাণের স্পন্দন, শামসুজ্জোহার রক্তের প্রতীক, ৭৫৩ একরের বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, আবেগ জড়ানো ভালোবাসার চিরযৌবনা ক্যাম্পাস আমার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম তোমায় দেখেছিলাম ২০১৮ এর কুয়াশাচ্ছন্ন পত্রঝরা এক প্রভাতে। মুগ্ধতা বিরাজ করেছিল আমার হৃদয় জুড়ে। তোমার অপরূপ সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে সেদিনই মনস্থির করেছিলাম তোমার ৭৫৩ একরে একদিন আমারও বিচরণক্ষেত্র হবে। আলহামদুলিল্লাহ, সেই প্রিয় রাবিতে আজ আমার নিত্য পদচারণা। নীল-সাদা বাসের স্বপ্ন ছোঁয়ার প্রতিযোগিতায় আমি সার্থক। 

নানা চড়াই-উৎরাই আর প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মেলবন্ধনে গড়া ভালোবাসার সেতুর আরেক নাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপীঠ ৭০ বছর অতিক্রম করে আজ ৭১ বছরে পা দিল। বর্তমানে গুণগত শিক্ষা প্রদান, গবেষক তৈরি, শিক্ষা-সংস্কৃতি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন সংকটের মধ্যেও উচ্চশিক্ষা প্রদানে বিশ্ববিদ্যালয়টি রেখে চলেছে অসামান্য অবদান। জোহা চত্বর, প্যারিস রোড, সাবাশ বাংলাদেশ, বুদ্ধিজীবী চত্বর, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম লাইব্রেরি, টুকিটাকি চত্বর, বদ্ধভূমি, কেন্দ্রীয় মসজিদ, সুবিশাল স্টেডিয়াম সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। 

আশা করি, বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করে তোমার যশ-গৌরব ও আভিজাত্য নিয়ে পৌঁছাতে পারো উন্নতির চরম স্বর্ণশিখরে। স্বগৌরবে টিকে থাকো বছরের পর বছর। এই শুভ কামনা রইলো বিদ্যাজননী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। শুভ জন্মদিন।

[তারিন ইসলাম, শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ]


‘রাবি কেবলমাত্র একটি ক্যাম্পাসই নয়, হাজারো শিক্ষার্থীর আবেগের জায়গা’
শুভ জন্মদিন ভালোবাসার ৭৫৩ একর। তোমাকে পেয়ে আমি ধন্য। কতো স্বপ্ন দেখেছিলাম তোমাকে নিয়ে। যখন আমি সপ্তম শ্রেণিতে পড়তাম, তখন আমার প্রথম পদার্পণ ছিল এই ভালোবাসার ক্যাম্পাসে। একটা সময় বসেছিলাম ভার্সিটির মেইন গেটের সামনে। গেট দিয়ে যখন বাস বের হচ্ছিল আমি গুনছিলাম আর বাবাকে বলছিলাম এই বাসে কারা ওঠে? এতো বাস বের হচ্ছে কেন? আরও অনেক কথা। কেন জানি তখন থেকেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম এই প্রিয় ক্যাম্পাসকে।

কিন্তু জানতাম না কী করলে এখানে পড়া যাবে। যখন বুঝতে শিখেছি, স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি। এখন সেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। রাবি কেবলমাত্র একটি ক্যাম্পাসই নয়, এটা হাজারো শিক্ষার্থীর আবেগের জায়গা। শুভ জন্মদিন প্রিয়। 
গর্বিত মায়ের গর্বিত সন্তান; আমি একজন রাবিয়ান।

[শুয়ায়েব হোসেন, শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ]

‘রাবি একটি আবেগের নাম’
মতিহারের সবুজ চত্বরে ৭৫৩ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একটি আবেগের নাম। প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী স্বপ্ন বুনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইট পেরিয়ে জোহা চত্বর, যেখানে শায়িত ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের শহিদ ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা, প্যারিস রোড, কেন্দ্রিয় গ্রন্থাগারসহ সবুজের সমারোহে ঘেরা পুরো ক্যাম্পাস সত্যিই মনোরোম।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দেশের প্রাচীন ও শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি। দেশ ও জাতির স্বপ্ন পূরণে নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এই বিদ্যাপীঠ। ৭০ বছর পেরিয়ে ৭১ বছরে পা দিয়েছে স্বপ্নের এই শিক্ষালয়। সকল বাঁধা বিপত্তি মাড়িয়ে এভাবেই এগিয়ে যাক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইল। শুভ জন্মতিথি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

[তৃপ্তি খাতুন, শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ]

‘ক্যাম্পাসের অনিন্দ্য সুন্দর স্পর্শ আমার অনুভূতির জগৎ পাল্টে দিয়েছে’
আমি কখনোই খুব একটা ভালো মানের ছাত্র ছিলাম না। চলনসই লেভেলের ছিলাম। কলেজের এক বছর পার করার আগেই পুরো বিশ্বের সাথে থমকে গেল আমাদের পড়ালেখা। তখন আমার পরিচয় হয় মিরাজ ভাইয়ের সাথে। তখন থেকে আমার কাছে অ্যাডমিন বিষয়টা পরিষ্কার হতে শুরু করে। মিরাজ ভাইয়ের মাধ্যমে আমি রাব্বি ভাইয়ের সাথে পরিচিত হই। তিনিই সেই ব্যক্তি যে আমার বাবা মায়ের পরে আমার সাহস ও আস্থার জায়গা। যেহেতু রাব্বি ভাই ঢাবির (আইন) ছাত্র; তাই আমিও বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাবিকেই জানতাম। কিন্তু আমি রাবিতে আইন অনুষদে ভর্তির সুযোগ পাব ভেবে রাবিতে ভর্তি হয়।

প্রকৃতি হয়তো বা চাইতো না আমি আইনে পড়ি। তাই অর্থনীতিতে ভর্তি হয়ে থাকা আমি মাইগ্রেশনের পরেও অর্থনীতি বিষয়েই পড়তে থাকি। প্রথমে অনেক মন খারাপ ছিল। গুচ্ছতে নতুন করে আইনে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদনও করেছিলাম। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই আমি মত বদলে ফেললাম। ক্যাম্পাসের অনিন্দ্য সুন্দর স্পর্শ পাল্টে দিলো আমার অনুভূতির জগৎ। আমার ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ও ব্যাচমেটদের ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করল। আমিও এই ৭৫৩ একরের মায়ায় পড়ে গেলাম। ভালোবেসে ফেললাম শামসুজ্জোহা স্যারের রক্তমাখা ক্যাম্পাসকে। সেই নিজের প্রথম পছন্দের ঢাবি ক্যাম্পাস কিংবা প্রথম পছন্দের আইন কোনোটিই আমার মনে আফসোস তৈরি করে না। দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে, গৌরবের ৭০ বছরের সাক্ষী হতে পেরে আমারে মানব-জীবন ধন্য। আজ ৭০তম জন্মদিনে তোমার গৌরবের সাক্ষী হতে পেরে আমি ধন্য হে বিদ্যাপীঠ। শুভ জন্মদিন আমার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

[সৈকত শাহরিয়ার অন্তু, শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ]

‘আমার আবেগ মাখা প্রেরণার বাতিঘর এ ক্যাম্পাস’
ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির লীলাভূমির শহর রাজশাহীর বুকে ৭৫৩ একর দখল করে আছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। হাজারো শিক্ষার্থীর শত সপ্ন জড়ানো এই বিদ্যাপীঠ আজ ৭১ বছরে পদার্পন করল। শুভ জন্মদিন আমার আবেগ মাখা প্রেরণার বাতিঘর প্রিয় ক্যাম্পাস। প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই হৃদয়ে জাগে অন্যরকম এক অনুভূতি। মনে হয় এইতো হাজার ও জ্ঞানীগুণীদের রাজ্যে ক্ষুদ্র আমি উপস্থিত হলাম। নীলসাদা স্বপ্নের বাসগুলো যেন আবেগ এ ভরপুর করে ভাসিয়ে নেওয়া স্বপ্নলোকে। 

সৌন্দর্যের প্রতীক প্যারিস রোড যেন প্রেম, বিরহ, আড্ডা, গল্প আর অবিরাম স্নিগ্ধতা ছড়ানো রূপসী কায়া। শহিদ মিনার সে তো আড্ডার কেন্দ্রবিন্দু আর মাথা তুলে মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকারের গুণগানের মধ্যেই ব্যাকুল। সৌন্দর্যে মোড়ানো কেন্দ্রীয় মসজিদ যেন মহান রবের মাহাত্ম্য ও তাঁর সৃষ্টির কারুকার্যের বর্ণনা দানের জন্যই আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত হয়।

স্টেডিয়াম, টিএসসিসি চত্বর, পরিবহণ চত্বর কিংবা বুদ্ধিজীবী চত্বর অথবা ইবলিশ চত্বর ক্যাম্পাসের প্রতিটি ধূলিকণায় যেন মুগ্ধতার আবেগে ছুঁয়ে দেয় প্রতিটি রাবি প্রেমীদের অন্তর গহিনে। আজকের এই শুভদিনের অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল প্রিয় প্রাঙ্গণ। শুভ জন্মদিন।

[তাবাস্সুম কবির, শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগ]


‘মতিহারের এ সবুজ চত্বর হয়ে উঠুক আরো সবুজ’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নামটার মধ্যেই কেমন যেন এক অনিঃশেষ ভাবাবেগ রয়েছে। অনুভূতির শিহরণে হৃদয় নাড়া দিয়ে উঠে মনের অজান্তেই। হবেই বা না কেন! তাকে পেতে জীবনের স্বপ্নকে ছন্দের রূপ দিতে হয়েছে বারবার। সফলতা এবং ব্যর্থতার দোলাচলে জীবনের চলার পথ যখন অনেকটাই ফিকে হওয়ার পথে তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ আমার জীবনে তপ্ত মরুভূমিতে প্রাণ উষ্ঠাগত পথিকের তৃষ্ণা মেটানোর ন্যায় অনুভূত হয়েছে।

পদ্মাবিধৌত উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠবিদ্যাপীঠ, বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়, শহিদ শামসুজ্জোহা স্যারের রক্তে নিংড়ানো ক্যাম্পাস। মুক্তিযুদ্ধের অগণিত শহিদের জীবন উৎসর্গ করা মাটির ঘ্রাণ। উত্তরবঙ্গের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির শিক্ষা বিনির্মানে যার অবদান অনস্বীকার্য সেই মতিহারের সবুজ চত্বরে আজ কৃষ্ণচূড়া ৭০ বার তার রঙ পরিবর্তন করেছে। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় এবং নিজেকে ধন্য মনে করছি। মতিহারের এ সবুজ চত্বর হয়ে উঠুক আরও সবুজ। বয়ে আনুক বাংলার জন্য হাজারো গৌরবগাথা বাণী। শুভ কামনা নিরন্তর প্রিয় বিদ্যামাতা। শুভ জন্মদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

[আব্দুল্লাহ সাজিদ সিদ্দিকী, শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ]


সর্বশেষ সংবাদ