২৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৪:৪৪

‘আগে বিশেষ, পরে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি’

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ  © ফাইল ছবি

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট দূর করতে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতিও পেয়েছে সংস্থাটি।

তবে দীর্ঘদিন ধরে চাকরির অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীদের দাবি বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি একটি প্রহসন মাত্র। কেননা ১৫ হাজারে অধিক পদ থাকলেও এর বেশিরভাগই নারী কোটার প্রার্থীদের জন্য। যেটি আগে পূরণ হয়নি। এছাড়া বাকি পদগুলো নন এমিপও। ফলে এই বিজ্ঞপ্তি শিক্ষক সংকট দূর করতে পারবে না এনটিআরসিএ।

অন্যদিকে এনটিআরসিএ বলছে, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল ৫৪ হাজার পদের বিপরীতে। তবে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র পেয়েছেন ৩৪ হাজার প্রার্থী। এছাড়া চার হাজার প্রার্থী পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম পাঠায়নি। তাই এই বিজ্ঞপ্তির শূন্য পদগুলো পূরণ করতে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহ করে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

আরও পড়ুন: বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনুমতি পেয়েছে এনটিআরসিএ

এনটিআরসিএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৫ জুলাই বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের ফল প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন নিবন্ধনের রিটকারীদের জন্য কিছু পদ সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়া মহিলা কোটায় প্রার্থী না পাওয়ায় এবং যোগ্য প্রার্থী না থাকায় ৩৮ হাজার ২৮৬ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।

সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে ৩৪ হাজার ৬১০ জনকে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে এবং ৩ হাজার ৬৭৬ জনকে ননএমপিও প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। ৮ হাজার ৪৪৮টি পদে কোনো আবেদন না পাওয়ায় এবং ৬ হাজার ৭৭৭টি মহিলা কোটা পদে প্রার্থী না পাওয়ায় ১৫ হাজার ৩২৫টি পদ ফাঁকা থেকে যায়। এই পদগুলো পূরণ করতেই বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে এনটিআরসিএ।

জানতে চাইলে এনটিআরসিএ সচিব মো. ওবায়দুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে আমাদের অনেকগুলো পদ ফাঁকা রয়ে গেছে। এই পদগুলো পূরণ করতে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে এটি প্রকাশ করা হবে।

আরও পড়ুন: চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ ছাড়াই শেষ হলো ১৬তম প্রার্থীদের মানববন্ধন

চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ সচিব আরও বলেন, আমরা প্রথমে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবো। এটি না করা হলে স্কুল-কলেজের প্রকৃত শূন্য পদের তথ্য পাওয়া যাবে না। বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম শেষ হলে শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে চতুর্থ গণবিজ্ঞিপ্তি প্রকাশ করা হবে।

এদিকে বিভিন্ন নিবন্ধনের প্রার্থীরা বলছেন, বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এনটিআরসিএ বেকারদের সাথে প্রতারণা করছে। এই গণবিজ্ঞপ্তি চাকরিপ্রার্থীদের কোনো উপকারেই আসবে না। কেননা এখানে ননএমপিও এবং নারী কোটাই বেশি। এছাড়া অধিকাংশ পোস্ট চরাঞ্চলে। যেখানে কেউ আবেদন করতে চায় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৬তম নিবন্ধনের এক প্রার্থী জানান, অনেক পরিশ্রম করে ১৬তম নিবন্ধনে পরীক্ষা দিয়ে ভালো নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। তবে এনটিআরসিএ চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি না দিয়ে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে যাচ্ছে। এতে করে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির কাজ অনেক পিছিয়ে যাবে। কেননা এনটিআরসিএর কাজের গতি সম্পর্কে সবারই জানা। আমার বয়স শেষের দিকে। এই অবস্থায় গণবিজ্ঞপ্তি না হলে আমার এমপিওভুক্ত হতে ঝামেলায় পরতে হবে।

আরও পড়ুন: যোগদান নিয়ে বিড়ম্বনায় ইনডেক্সধারীরা, যা বলছে এনটিআরসিএ

আরেক প্রার্থী জানান, বিশেষ গনবিজ্ঞপ্তির নামে এনটিআরসিএ প্রার্থীদের সাথে প্রতারণা করতে যাচ্ছে। এটি মূলত বেকারদের পকেট কাটার একটা ফন্দি। যে পদগুলো ফাঁকা রয়েছে। সেগুলো ফাঁকাই থাকবে। কেননা এগুলো চরাঞ্চলের। তাই বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি বাদ দিয়ে ই-রিকুইজিশনের মাধ্যমে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে বিশেষ গনবিজ্ঞপ্তি প্রতিহত করতে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবিতে আমরণ অনশনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ১৬তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা। শিগগিরই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন তারা।

১৬তম নিবন্ধনের একটি সূত্র জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশনের আয়োজন করা হবে। এজন্য বিভিন্ন জেলার সমন্বয়কদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলা থেকে অন্তত পক্ষে ১০০ করে প্রার্থী প্রেসক্লাবে জড়ো করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ভি-রোল ফরম না পাঠানো প্রার্থীদের সুপারিশপত্র দেবে না এনটিআরসিএ

জানতে চাইলে ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন ফোরামের সভাপতি মো. শাকিল আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দ্রুত চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবিতে ফেব্রুয়ারি মাসের ৬ তারিখ আমরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই কর্মসূচি চলবে।