‘আমরা চেইন খুলে দাঁড়িয়ে যাব না’— নিবন্ধনধারীকে এনটিআরসিএ কর্মকর্তা

মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী ও এনটিআরসিএ লোগো
মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী ও এনটিআরসিএ লোগো  © ফাইল ছবি

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সদস্য (শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান) মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী ও একজন নিবন্ধনধারীর একটি কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এই কল রেকর্ডের কারণে নিবন্ধনধারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নিবন্ধনধারীরা নূরে আলম সিদ্দিকীর অপসারণ দাবি করেছেন।

সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া কল রেকর্ডে মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকীকে বলতে শোনা যায়, ‘কোর্ট থেকে ডিরেকশন আসলে আমরা আপিল করব। ডিরেকশন আসলেই যে চেইন খুলে দাঁড়িয়ে যাব তা তো না। হাইকোর্টের রায় আসলে, হাইকোর্টের উপরে আপিল বিভাগ আছে। আপিল বিভাগে রিভিউ আছে। রিভিউয়ের পর ফুলকোর্ট আছে। ফুলকোর্টের পর প্রেসিডেন্টের কাছে যাওয়ার সুযোগ আছে। আদালতের রায় যদি আমাদের (সরকারের) বিরুদ্ধে যায় তাহলে আমরা প্রেসিডেন্টের কাছে যাব। আমরা প্রেসিডেন্টকে লিখিত দেব যে, এই রায় মানতে গেলে দেশে চাকরিশৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যাবে।’

অডিও বক্তব্যে ওই কর্মকর্তাকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘শিক্ষকতা করতে হলে আপনাকে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানেই কেন চাকরি করতে হবে? আপনি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করেন। আমাদের এলাকায় কিন্ডারগার্টেনে চাকরি করে মাসে এক লাখ টাকা ইনকাম করে এমন লোকও রয়েছে। আপনি নিজেও একটি কিন্ডারগার্টেন দিতে পারেন।’

এ বিষয়ে জানতে এনটিআরসিএ’র সদস্য (শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান) মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকীর ব্যবহৃতে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

জানতে চাইলে ভুক্তভোগী নিবন্ধনধারী ও ‘আমার সনদ আমি লড়বো’ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. ওবাইদুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সরকারি অফিসের কর্মকর্তার আচরণ এমন হবে তা কখনোই আশা করিনি। আমি বিনয়ের সঙ্গে তাকে অনুরোধ করেছি। অথচ তিনি চেন খোলার কথা বলেছেন। তার কথায় হাইকোর্টের নির্দেশনাকেও তিনি তোয়াক্কা করেন না বলে মনে হয়েছে। এটি আদালত অবমাননার শামিল। আমরা নূরে আলম সিদ্দিকীর পদত্যাগ চাই।

এ বিষয়ে ‘আমার সনদ আমি লড়বো’ সংগঠনের প্রচার সম্পাদক ১১তম নিবন্ধন সনদধারী এস এম রুহুল আমিন  বলেন, এনটিআরসিএ সদস্য নুরে আলম সিদ্দিকী তার সাথে অসদাচরণ করেছেন, তার কথায় মনে হলো সে প্রধানবিচারপতির চেয়েও  বড়। আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, আমাকে সে বলেছে কিন্ডারগার্টেনের স্কুলে চাকরি বেছে নিতে। তার মতে আমি অকার্যকর। একজন সরকারি কর্মকর্তার কথাবার্তা আরও সুন্দর হওয়া উচিত।আবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করলে আমিও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেব।

মো. মাহমুদুল হাসান নামে  ১৪তম নিবন্ধন সনদধারী বলেন, এই নূরে আলম সিদ্দিকী শিক্ষক বিদ্বেষী। তিনি  সব জায়গায় ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে পুরো পরিবেশকে নিবন্ধনসনদধারীদের বিপক্ষে নিয়ে যাচ্ছেন। মেধাতালিকায় এগিয়ে থাকার পরও আমাকে ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ সুপারিশ করেনি। অথচ তারা অনৈতিক ভাবে লাভবান হয়ে আমার চেয়েও বেশি মেরিটধারীকে নিয়োগ প্রদান করেছে। এরা একটি অদৃশ্য মহলের ছত্রছায়ায় এনটিআরসিএকে ধ্বংস করছে। আমাকে যদি এবারও আবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে আমি প্রতিকারার্থে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। 

এদিকে আসন্ন ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে ১-১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের আবেদনের সুযোগ দিতে আদালতে রিট করেছেন মো. ওবাইদুল ইসলাম। রিটের প্রেক্ষিতে রুল জারি করেছেন আদালত। আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব, এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

সম্প্রতি নিবন্ধনধারীদের পক্ষে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) মোঃ ওবাইদুল ইসলাম রিটটি দাখিল করেন। রিটের পক্ষে আদালতে শুনানী করেন অ্যাডভোকেট ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া।

গত ৪ মার্চ রিটের শুনানি হয়। বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি কাজি জিনাত হক দীর্ঘ শুনানি শেষে রিট আবেদনকারীদেরসহ ১-১৫তমদের কেন আবেদনের সুযোগ দেওয়া হবে  না তা জানতে চেয়ে রুল জারী করেন এবং একই সঙ্গে রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ১-১৫তম নিবন্ধনধারীদের আবেদন গ্রহণের নির্দেশ দেন।

রীটে অংশগ্রহণকারী তাফহিমা জোয়ারদার বলেন আমি বগুড়া থাকি, ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার জন্য এনটিআরসিএ’র সচিবের কথায় আমার ইনডেক্স ডিলেট করেছি। এখন তারা সনদের মেয়াদ তিন বছর। আমাদের আমাদের সুযোগ দেবে না। নিঃসন্দেহে এটা আমাদের সাথে প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গ করার শামিল। এর দায়ভার এনটিআরসিএ’র সচিবকে বহন করতে হবে।

আমার সনদ, আমি লড়বো আবেদনের সুযোগ চাইয়ের সভাপতি রাসেল আহমেদ বলেন, ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আমার নিয়োগ হয়েছিল আমার বাসা থেকে ৮০০ কিলোমিটার দূরে, আমার অসুস্থ মা বাবাকে রেখে আমি যোগদান করতে পারিনি। এখন তারা আমাদের আবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে ষড়যন্ত্র করছে। যেখানে আমার কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী বয়স অনুর্ধ্ব ৩৫, সেখানে আমাকে তারা অযৌক্তিক ভাবে বঞ্চিত করার অপকৌশল করছে। আসলে তাদের হাতে এমন কোনো রায়ই নেই। যদি থাকতো তাহলে সলিসিটর এর মতামতের ওপরে নির্ভরশীল হতো না। যদি এনটিআরসিএ ১-১৫তম যাদের এমপিওনীতিমালা অনুযায়ী কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়স ৩৫ অনুর্ধ্ব তাদের আবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে এনটিআরসিএ’র বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হবে। শুধু হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট নয়, দেশের সকল জেলার আদালত গুলোতেও বিচারিক কার্যক্রম চলবে। 


সর্বশেষ সংবাদ