আপেলের পুষ্টি উপাদান ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

ফল
আপেল খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা

দৈনন্দিন জীবনে বেঁচে থাকার তাকিদে মানুষ অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে থাকে। কেননা এসব খাবার একদিকে মুখরোচক অন্যদিকে পরিমাণে বেশি হওয়ায় পেট ভরে খেতে পারে। তবে গবেষণা বলছে, মাত্রাতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার দেহের উপকারের পরিবর্তে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ। ফলে শরীরে বাসা বাঁধে নানা ধরণের জটিল রোগ। কিন্তু বিভিন্ন ধরণের ফলমূল মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ কার্যকর বলে প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা। যা অনেক রোগের ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্য গঠনে বেশ সহায়ক। এসব ফলের মধ্যে আপেল অন্যতম।

জানা যায়, খোসাসহ প্রতি ১০০ আপেলে প্রায় ৮০% পানিসহ খাদ্যশক্তি রয়েছে ৫২ কিলোক্যালরি, শর্করা ১৩.৮১ গ্রাম, চিনি ১০.৩৯ গ্রাম, খাদ্যআঁশ ২.৪ গ্রাম, চর্বি ০.১৭ গ্রাম, আমিষ ০.২৬ গ্রাম, জলীয় অংশ ৮৫.৫৬ গ্রাম। এমনকি ভিটামিন সি ৪.৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই ০.১৮ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৬ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.১২ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৫ মিলিগ্রাম, ম্যাংগানিজ ০.০৩৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১১ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১০৭ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম ও জিংক ০.০৪ মিলিগ্রাম রয়েছে। 

আরও পড়ুন: হার্টের সুরক্ষায় মৌসুমি ফল

২০০৪ সালে আমেরিকায় খাদ্যের মধ্যে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ জানতে ১০০-এরও বেশি খাবারের ওপর গবেষণা করা হয়। যেখানে লাল এবং সবুজ আপেল যথাক্রমে ১২ এবং ১৩তম স্থানে ছিল। এছাড়াও বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ এ ফল দেহের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। নিম্নে আপেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা তুলে ধরা হলো-

১) আপেল হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। কেননা এতে থাকা ফাইবার দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে। এমনকি আপেলের খোসায় থাকা ফেনলিক উপাদান রক্তনালি পরিস্কার রাখার মাধ্যমে হার্টে রক্তচলাচলা স্বাভাবিক রাখে। ফলে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়।

২) টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে আপেল বেশ কার্যকর। ইনিস্টিটিউট অফ ন্যাশানাল হেলথ-এর গবেষণা সংকলনে দেখা গেছে, আপেল খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১৮% কমে যায়। কারণ আপেলের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়, যা ডায়াবেটিসের সূত্রপাতের একটি বড় ঝুঁকি। তাছাড়া এ ফল ফ্লোরিডজিন অন্ত্রে শর্করার গ্রহণ কমাতে পারে। ফলে রক্তে শর্করার লোড হ্রাস হওয়ার পাশাপাশি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে।

৩) আপেল অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। কেননা এতে থাকা এক ধরণের পেকটিন ফাইবার প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। যা অন্ত্রের ভাল ব্যাকটেরিয়া।এগুলো অন্ত্রকে দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে লড়াই উপযোগী করে দেহকে সুস্থ রাখে।

আরও পড়ুন: মৌসুমি ফলের 8 স্বাস্থ্য উপকারিতা

৪) ক্যান্সার প্রতিরোধে আপেল সহায়ক। কেননা এ ফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফুসফুস, স্তন ও পাচনতন্ত্রের ক্যান্সারসহ নির্দিষ্ট ধরণের কিছু ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ন্যাশনাল ইনিস্টিউট অফ হেলথ-এর টেস্ট-টিউবের উপর কথা এক গবেষণার তথ্যমতে, আপেল থাকা পেকটিন ফাইবার ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে হ্রাস করে। ফলে বিভিন্ন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।

৫) হাঁপানি সমস্যায় বেশ উপকারী ফল আপেল।কেননা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ আপেল ফুসফুসকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

আরও পড়ুন: জামের স্বাস্থ্য উপকারিতা জানলে অবাক হবেন!

টেস্টটিউবের উপর করা ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অফ হেলথ-এর গবেষণা বলছে, মূলত ফ্রি র‌্যাডিক্যাল নামক এক ধরণের ক্ষতিকারক অণুর আধিক্যের ফলে অক্সিডেটিভ ক্ষতিকর হতে পারে। ফলে শরীর প্রদাহজনিত অথবা অ্যালার্জেনিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কিন্তু আপেলের ত্বকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোয়ারসেটিন রয়েছে৷ যা ইমিউন সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি প্রদাহ কমাতে সাহায়তা করে। একই সাথে ব্রঙ্কিয়াল হাঁপানি ও সাইনোসাইটিসের মতো অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।