হার্টের সুরক্ষায় মৌসুমি ফল

হার্টের সুরক্ষায় দরকারি মৌসুমি ফল
হার্টের সুরক্ষায় দরকারি মৌসুমি ফল  © প্রতীকী ছবি

দেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হার্ট। যা কোন ভাবে অকার্যকর হলে ইহজগতের ইতি ঘটে। কারণ রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ করে সার্বিক কার্যক্রম ঠিক রাখে হার্ট। তবে বর্তমান প্রজন্মের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের ফলে প্রতিনিয়ত হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে। কেননা অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় ও ভেজালযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে বেড়েই চলেছে হার্টের ঝুঁকি। তবে বেশকিছু মৌসুমি ফল রয়েছে যেগুলো হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডাব্লিউএইচওর তথ্যমতে, ২০১৯ সালে বিশ্বে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় প্রায় ১ কোটি ৯৯ লক্ষ মানুষ। অর্থাৎ বিশ্বে রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মোট ৩৪ শতাংশ রোগীই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

‘ইন্ট্রা হার্ট স্টাডি’ নামক একটি গবেষণা দাবি করেছে ৯টি ঝুকিপূর্ণ বিষয়ের কারণে হৃদরোগে এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। যার মধ্যে ধূমপান, অ্যালকোহল ও খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট অন্যতম। বিশ্বের মোট ৫২ টি দেশের উপর এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। তবে গবেষকরা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন। ডাব্লিউএইচওর হিসাবে, বাংলাদেশে ২০২০ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১ লক্ষ ৮ হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে। যা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা ‍যাওয়া মোট মৃত্যুর ১৫ শতাংশ।

আরও পড়ুন: বৃষ্টির দিনে সুস্থ থাকার উপায়

চলছে মধুমাস জৈষ্ঠ্য। গ্রীষ্মকালীন এ মৌসুমে দেশে ফলে নানা পুষ্টিকর ফল। ইনিস্টিটিউট অফ ন্যাশনাল হেলথের গবেষণা বলছে, হার্টের ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন মৌসুমি ফল কার্যকরী ভূমিকা রাখে। যার মধ্যে রয়েছে- আম, কাঁঠাল, তরমুজ, লিচু ও আঙ্গুর ইত্যাদি। তবে চলুন হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে যেসব মৌসুমি ফল ভূমিকা রাখে তাদের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই।

হার্টের সুরক্ষায় বিভিন্ন মৌসুমি ফল

আম

হার্টের সুরক্ষায় আম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কেননা আমে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এসব পুষ্টি উপাদান দেহে সুষ্ঠু রক্ত ​​প্রবাহ বজায় রাখে। এমনকি রক্তনালি শিথিল রাখার পাশাপাশি নিম্ন রক্তচাপের মাত্রা কমায়। ইনিস্টিটিউট অফ ন্যাশনাল হেলথ(এনআইএইচ)-এর গবেষণা মতে, আমে থাকা ম্যাঙ্গিফেরিন উপাদান হার্টের প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও কোষের অকাল মৃত্যু রোধ করে। এমনকি রক্তের কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড ও ফ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সাহায়তা করে আম।

তরমুজ

গ্রীষ্ম মৌসুমের অন্যতম ফল তরমুজ। ফলটি হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। কারণ তরমুজে থাকা লাইকোপিন এবং সিট্রুলাইন দেহে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। এমনকি হার্টের রক্ত সঞ্চালন ও কোলস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রেখে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

আরও পড়ুন: কাঁচা মরিচের স্বাস্থ্য উপকারিতা

ইনিস্টিটিউট অফ ন্যাশনাল হেলথ (এনআইএইচ)- এর গবেষণায় দেখা গেছে, তরমুজে থাকা লাইকোপেন উপাদান উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায়তা করে। এমনকি তরমুজে সিট্রুলাইন অ্যামিনো অ্যাসিড নামের একধরনের উপাদান থাকে। যা শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা বাড়িয়ে রক্তনালীকে প্রসারণ করে উচ্চ রক্তচাপ কমায়।

আঙ্গুর

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল আঙ্গুর। ফলটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক। এমনকি আঙ্গুরে থাকা পটাশিয়াম হার্টের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। এনআইএইচয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, আঙ্গুরে থাকা পটাশিয়াম দেহে শিরা ও ধমনী প্রসারণ করার মাধ্যমে রক্তের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে। এমনকি আঙ্গুরে পাওয়া যৌগগুলো দেহে উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।

আরও পড়ুন: যে কারণে আপনি লিচু খাবেন

কাঁঠাল

দেশে গ্রীষ্ম মৌসুমের অন্যতম ফল কাঁঠাল। সুস্বাদু এ ফল দেহের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। কারণ কাঁঠালে পটাসিয়াম, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। যা হার্টকে সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে। 

লিচু

দেশে মৌসুমি ফলের মধ্যে লিচুর কদর অনেক। দেখতে ছোট হলেও পুষ্টি গুণে ভরপুর এ ফল। হৃদরোগসহ দেহের অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমাতে লিচু বেশ কার্যকর। কারণ লিচুতে পলিফেনল নামক উপাদান রয়েছে। যা প্রদাহের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। ফলে লিচু খেলে হৃদরোগসহ ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের ঝুঁকিও হ্রাস পায়।


সর্বশেষ সংবাদ