বিদেশে উচ্চশিক্ষা
সিউল কেন বিশ্বসেরা শিক্ষার্থীবান্ধব নগরী
- টিডিসি ডেস্ক
- ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:০২
বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ এখন আর কেবল স্বপ্ন নয়, বরং অগণিত শিক্ষার্থীর জন্য একটি বাস্তব লক্ষ্য। মানসম্মত শিক্ষা, অত্যাধুনিক গবেষণার সুযোগ ও বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতার খোঁজে শিক্ষার্থীরা এখন পাড়ি জমাচ্ছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তবে সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের পাশাপাশি সঠিক শহর নির্বাচন করাও ক্যারিয়ার গঠনে সমান গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা QS (Quacquarelli Symonds)-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৬ সালের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল বিশ্বের সেরা শিক্ষার্থীবান্ধব নগরী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। লন্ডনকে পেছনে ফেলে সিউলের এই শীর্ষে উঠে আসা প্রমাণ করে যে—জীবনযাপনের মান, শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্য, চাকরির সুযোগ এবং সাংস্কৃতিক আকর্ষণে এই শহর এখন অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
সিউল কেন হবে আপনার সেরা গন্তব্য?
সিউল কেবল একটি শহর নয়, এটি স্বপ্ন পূরণের একটি বিশাল ক্যানভাস। শিক্ষার্থীদের জন্য এই শহরটি কেন সেরা, তার প্রধান কারণগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
১. চাকরির অফুরন্ত সম্ভাবনা
সিউল বর্তমান বিশ্বের প্রযুক্তি, ব্যবসা ও উদ্ভাবনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। গ্যাংনাম (Gangnam) এবং ডিজিটাল মিডিয়া সিটির মতো এলাকাগুলোতে গুগল, স্যামসাং, এলজি এবং হুন্দাইয়ের মতো বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি জায়ান্টদের সদর দপ্তর অবস্থিত। পড়াশোনা শেষে বা চলাকালীন ব্যবসা, রিটেইল এবং রপ্তানি খাতে ক্যারিয়ার গড়ার বিশাল সুযোগ রয়েছে এখানে।
আরও পড়ুন: জেনে রাখুন বিশ্বসেরা ২৯ স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট
২. সাশ্রয়ী পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার খরচ
পাশ্চাত্যের দেশগুলোর তুলনায় সিউলে পড়াশোনার খরচ বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ। QS Top Universities-এর তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বার্ষিক গড় টিউশন ফি প্রায় ৬,৩০০ মার্কিন ডলার। জীবনযাত্রার খরচ ব্যক্তিগত লাইফস্টাইলের ওপর নির্ভর করলেও, সুলভ ছাত্রাবাস এবং প্রচুর পার্ট-টাইম চাকরির সুযোগ থাকায় শিক্ষার্থীরা সহজেই নিজের খরচ সামলে নিতে পারেন।
৩. ‘সিটি দ্যাট নেভার স্লিপস’ (২৪ ঘণ্টার শহর)
সিউল একটি জীবন্ত এবং প্রাণবন্ত শহর। এটি এমন এক নগরী যা কখনো ঘুমানোর প্রয়োজন মনে করে না। রাত জেগে পড়াশোনা, স্ট্রিট ফুড উপভোগ করা বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা—নিরাপদ এই শহরে ২৪ ঘণ্টাই আপনার জন্য কিছু না কিছু খোলা থাকে।
৪. মানসিক প্রশান্তি ও আধ্যাত্মিকতা
ব্যস্ত নগরজীবনের মাঝেও মানসিক শান্তি খুঁজে পাওয়ার জন্য সিউল অনন্য। শহরের বুকেই রয়েছে প্রাচীন ও শান্তপূর্ণ সব বৌদ্ধমন্দির। পড়াশোনার চাপের মাঝে নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করতে বা ধ্যানের মাধ্যমে মানসিক শক্তি বাড়াতে এই স্থানগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
আরও পড়ুন: বিদেশে উচ্চশিক্ষা: জেনে নিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুল-ফ্রি ১৬ স্কলারশিপ সম্পর্কে
৫. সিউলের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ
QS র্যাঙ্কিং অনুযায়ী সিউলের সেরা কিছু বিশ্ববিদ্যালয়, যা আপনার উচ্চশিক্ষার সোপান হতে পারে:
*সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (SNU);
*ইয়নসেই ইউনিভার্সিটি;
*কোরিয়া ইউনিভার্সিটি;
এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়কে একত্রে 'SKY' বলা হয় এবং এগুলো কোরিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।
*সুংকিয়ঙ্কওয়ান ইউনিভার্সিটি (SKKU);
*হ্যানিয়াং ইউনিভার্সিটি;
*কিয়ং হি ইউনিভার্সিটি;
*সিজং ইউনিভার্সিটি;
*চুয়াং-অ্যাং ইউনিভার্সিটি;
*অ্যাওহা ওমেনস ইউনিভার্সিটি;
*সোজাং ইউনিভার্সিটি;
*হানকুক ইউনিভার্সিটি অব ফরেন স্টাডিজ;
আরও পড়ুন: জেনে নিন বিশ্বসেরা ১০ ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ সম্পর্কে
৬. আবেদন প্রক্রিয়া: ধাপে ধাপে নির্দেশিকা
স্বপ্ন যখন সিউল, তখন প্রস্তুতিও হওয়া চাই নিখুঁত। আবেদন প্রক্রিয়াটি সহজ করতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
*তথ্য সংগ্রহ: পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ভিজিট করে প্রোগ্রাম, ভর্তির যোগ্যতা এবং টিউশন ফি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন;
*নথি প্রস্তুতকরণ: একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, পাসপোর্ট এবং ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণপত্র (ইংরেজি মাধ্যমের জন্য IELTS বা কোরিয়ান মাধ্যমের জন্য TOPIK) প্রস্তুত রাখুন;
*অনলাইন আবেদন: বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট অনলাইন পোর্টালে নির্ভুলভাবে আবেদন ফর্ম পূরণ করুন;
*ফি পরিশোধ: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন ফি পরিশোধ করুন;
*সাক্ষাৎকার: কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন বা সরাসরি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে পারে, তার জন্য প্রস্তুত থাকুন;
*ভিসা আবেদন: অফার লেটার বা 'Certificate of Admission' পাওয়ার পর দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাসে D-2 স্টুডেন্ট ভিসা-র জন্য আবেদন করুন;
*আবাসন ও পরিকল্পনা: দেশ ছাড়ার আগেই ডরমিটরি বা শেয়ারড অ্যাপার্টমেন্ট নিশ্চিত করুন এবং আর্থিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করুন;
আরও পড়ুন: জেনে নিন মধ্যপ্রাচ্যের ১১ স্কলারশিপ সম্পর্কে
৭. শেষকথা
বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থা, নিরাপদ পরিবেশ, সমৃদ্ধ চাকরির বাজার এবং প্রাণবন্ত নগরজীবন—সব মিলিয়ে সিউল এখন শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনন্য গন্তব্য। যাঁরা পড়াশোনার পাশাপাশি একটি গ্লোবাল ক্যারিয়ার গড়তে চান এবং এশীয় সংস্কৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল হতে পারে জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত।