প্রথম আলো-ডেইলি স্টার থেকে টাকা লুট করে টিভি-ফ্রিজ কিনল একজন, ১৩ মামলার আসামি আরেকজন

ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোতে হামলার পরের চিত্র
ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোতে হামলার পরের চিত্র © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মব সৃষ্টি করে সম্প্রতি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দুইটি জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার এবং দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে অন্তত ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সোমবার সকাল পর্যন্ত এই ব্যক্তিদের গ্রেফতার করেছে। এছাড়া আরও ৩১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে।

এদিকে, ঘটনার তিনদিন পর ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪০০ থেকে ৫০০ অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে সোমবার মামলা করেছে প্রথম আলো।

গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হওয়া ওই হামলার ঘটনা ঘিরে দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন মহলের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

নিন্দা জানিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার হামলার ঘটনাটিকে ‘গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত’ এবং ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি ভয়াবহ মুহূর্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু হামলাকারীদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার ঠিক কী ব্যবস্থা নেয়, সেটি দেখার অপেক্ষায় ছিলেন অনেকে।

ঘটনার তিনদিন পর সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুইটি গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর হামলায় ঘটনার ভিডিও দেখে অন্তত ৩১ ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নয়জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত অন্য ব্যক্তিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

গ্রেফতার হওয়া নয় ব্যক্তির মধ্যে সাতজনের পরিচয় নিশ্চিত হতে পেরেছে পুলিশ। অন্য দুই জনের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে।

আরও পড়ুন: অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এনসিপি নেতাকে গুলি করা হতে পারে: পুলিশ

এর বাইরে, চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাই কমিশনারের বাসভবনের সামনে ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টাকারীদের’ মধ্যে তিনজনকে ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে বলে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানানো হয়েছে।

লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ

গত ১৯শে ডিসেম্বর গভীর রাতে যারা দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছিলেন, সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল বিভিন্ন ফুটেজে তাদের অনেককে ঘটনাস্থল থেকে অর্থ, ল্যাপটপ, কম্পিউটারসহ নানা মালামাল লুট করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

ভিডিও ফুটেজ দেখে লুটপাটকারী কয়েক জনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সোমবার বিবৃতিতে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

ঢাকার তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়া এলাকার বাসিন্দা ওই ব্যক্তিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় থেকে গ্রেফতার করা হয়। হামলার সময় নগদ এক লাখ ২৩ হাজার টাকা লুট করেছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন বলে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে।

এর মধ্যে নগদ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। বাকি টাকা দিয়ে লুটকারী ওই ব্যক্তি ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে একটি টিভি ও একটি ফ্রিজ কিনেছেন, যা ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত অন্য ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের নামে মাদকসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে ঢাকার কারওয়ান বাজার রেললাইন এলাকা থেকে।

আরও পড়ুন: ভারত থেকে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক ২৭

একই এলাকা থেকে গ্রেফতার হওয়া আরেক জনের নামে অতীতে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দু’টি মামলা রয়েছে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর ঘোষণা আসার পর একদল হামলাকারী দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের অফিসে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়, এতে দুটি অফিসেই ব্যাপক অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে।

শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার কারওয়ানবাজারে অবস্থিত প্রথম আলোর চারতলা ভবনটি পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু জায়গা থেকে তখনও ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।

আর হামলাকারীদের দেওয়া আগুনে ডেইলি স্টার অফিসের নিচ তলা ও দোতলা পুড়ে গেছে। অফিসের ভেতরে ভাঙচুর করে ফেলে রাখা জিনিসপত্র পড়ে থাকতে দেখা যায়।